সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প, "অপ্রেম পত্র"-------- মধু'র ভূবণ ।

SHARE:

bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,



সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প 

                               "অপ্রেম পত্র"


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প, "অপ্রেম পত্র"-------- মধু'র ভূবণ ।




পার্টি জমে উঠেছে দুপুরবেলাতেই। ছোট অ্যাপার্টমেন্টে প্রায় বারো চোদ্দোজন মানুষ, রান্নাঘরের ভার নিয়েছে পুরুষরাই। বিদেশে এসে সব পুরুষই বেশ রান্না শিখে যায়। মন্টু দারুণ বিরিয়ানি রান্না করে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যে-কোনও বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার হলেই মন্টুর ডাক পড়ে। 

এমনই রান্নার নেশা মন্টুর যে সে সময় সে তার স্ত্রী নীলাকে রান্নাঘরে ঢুকতেই দেয় না। আজিজ, নিপুরা মাছ কুটছে, তরকারি কাটছে, প্রত্যেকেরই হাতে বিয়ারের টিন কিংবা সিগারেট। মেয়েরা সেজেগুঁজে বসবার ঘরে বসে প্রাণখুলে শাড়ি, গয়না, কে নতুন গাড়ি কিনল, কে ছুটিতে দেশে যাবে, এই আলোচনা চালাচ্ছে। আজ রান্নায় হাত লাগাতে হবে না বলে তারা খুশি।

এই পার্টির মধ্যমণি একটি ছমাসের শিশু, সে শুয়ে আছে একটা লাল মখমল বিছানো দোলনায়। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তাকে, মাথায় একটা পালকের মুকুট, কেউ আদর করতে এলেই সে ফোকলা দাঁতে খটখট করে হাসছে। ভালো নাম এখনও রাখা হয়নি, ওর ডাকনাম বাবু।

মালা আর ফিরোজ কারুকে উপহার আনতে বারণ করেছিল, আজ তাদের ছেলের জন্মদিন নয়, কোনও উপলক্ষই নেই, এমনি ছুটির দিনে হইচই। মালা সদ্য তার বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকা থেকে। এসেছে, বন্ধুবান্ধবরা এই প্রথম ফিরোজের সন্তানের মুখে দেখবে, উপহার আনবে না? 

অনেক রকম বেলুন আর খেলনায় ঘরের একটা কোণ ভরে আছে। ফিরোজ একটা বার কাউন্টার খুলে। ফেলেছে, কারুকে বিয়ার, কারুকে ভদকা দিচ্ছে গেলাসে-গেলাসে। মেয়েরা এসব খেতে চায় না, ফিরোজ খুব চেষ্টা করছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফারুখের স্ত্রী পাখিকে ওয়াইন খাওয়াতে। মুখের সামনে গেলাস নিয়ে বললে, অন্তত একটা চুমুক দাও, আমি তোমাকে আগে ওয়াইন খেতে দেখেছি। প্রফেসার লোহারের বাসায়।

এইসময় টেলিফোন বেজে উঠল।

ফারুখ দাঁড়িয়ে আছে টেলিফোনের কাছে। সে তুলে বলল, হ্যালো, গুটেন মরগান—

কথা বলতে বলতে ফারুখের ভুরু কুঁচকে গেল। ও পাশের কথা শোনা যাচ্ছে না, সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ফারুখ মাউথ পিস চাপা দিয়ে ফিসফিস করে বলল, রোজা–

কয়েক মুহূর্তের জন্য অস্বস্তিকর নীরবতা।

বাচ্চার দোলনার কাছ থেকে মালা তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল, কী চায় সে?

ফারুখ বলল, ফিরোজের সঙ্গে কথা বলতে চায়।

স্ত্রীর অনুমতির অপেক্ষা না করেই ফিরোজ এগিয়ে গিয়ে ফোনটা ধরল। প্রথমে একটুক্ষণ জার্মান ভাষায় কথা বলে তারপর শুরু করল বাংলায়। হ্যাঁ, আসতে পারো, অবশ্যই, এখনই চলে এসো, তোমার স্বামী সঙ্গে আছে, তাকেও নিয়ে এসো, কোনও অসুবিধা নেই, হি ইজ মোস্ট ওয়েলকাম—আমার এই নতুন বাসার ডিরেকশান বলে দিচ্ছি, হপবানহপে নামবা, সেখান থিকা কাইজার স্ট্রসের কর্নারে এগারো নম্বর ট্রাম—ও গাড়িতে আসবে? তা হলে—

ফোন রেখে দিয়ে ফিরোজ বলল, রোজা আর তার হাজব্যান্ড আমাদের ছেলেকে দেখতে আসছে। আমাদের অফিসে কাজ করে লুডউইগ, তার কাছ থেকে শুনেছে।

মালা বলল, তুমি তাকে আসতে বললে? কেন আসবে?

ফিরোজ মালার কাঁধ ছুঁয়ে বলল, ওটা এ দেশের ভদ্রতা। উতলা হয়ো না। আমরাও ভদ্রতা করব। দেখো, ওরা বেশিক্ষণ থাকবে না।

মালা তবু ভুরু কুঁচকে রইল। বাচ্চার দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে বলল, নজর দিতে আসছে।

ফিরোজ হো-হো করে হেসে উঠল।

বারান্দার কাছে দাঁড়িয়ে আছে আহবাব আর ডালিম। ডালিম সদ্য এসেছে দেশ থেকে, সে। ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরটাই এখনও ভালো চেনে না। সে ফিসফিস করে জিগ্যেস করল, ওই রোজা কে?

আহবাব বলল, রোজা আগে ফিরোজের স্ত্রী আছিল। আট বছর পর ডিভোর্স হইয়া গেছে। মালার সঙ্গে ফিরোজের বিয়ে হয়েছে মাত্তর দুই বচ্ছর আগে।

ডালিমও অবাক হয়ে বলল, আগের বউ? সে আসতে চায় কেন? তার এখনকার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে আসবে?

আহবাব বলল, এ দেশে এটা কিছু অস্বাভাবিক নয়। রোজার সঙ্গে তো ফিরোজের ঝগড়া মারামারি হয় নাই। মিউচুয়াল ডিভোর্স। তারপরেও সামাজিক সম্পর্ক রাখতে তো অসুবিধা নাই কিছু।

আবার আড্ডা শুরু হলেও ঠিক জমল না। এদের মধ্যে অনেকেই রোজাকে চেনে। চার-পাঁচ বছর আগে এই ফিরোজের বাড়িতেই কোনও পার্টি হলে রোজা হইচই করে জমিয়ে রাখত। দারুণ প্রাণবন্ত মেয়ে রোজা। তার সঙ্গে ফিরোজের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় বন্ধুরা অনেকেই দুঃখিত হয়েছিল। জার্মান মেয়েরা এমনিতেই বউ হিসেবে খুব ভালো হয়, তাদের মধ্যে রোজা আরও বেশি ভালো। তবু ঠিক কী কারণে দুজন নারী-পুরুষের বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তা অন্যদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

পাখি একবার অন্য কথার মধ্যে বলে উঠল, রোজা আসতে চায় আসুক, সে আবার স্বামীটাকে নিয়ে আসছে কেন? ওর স্বামী তো জার্মান, তার সামনে বাংলায় কথা বলা যাবে না।

আট বছরের বিবাহিত জীবনে রোজা বেশ ভালো বাংলা শিখে নিয়েছিল। উচ্চারণে গণ্ডগোল। থাকলেও সাবলীলভাবে কথা বলে যেত বাংলায়। রোজার সেই বাংলা জ্ঞান আর কোনও কাজে লাগবে না।

একটু বাদে বেল বাজতেই সবাই সচকিত হয়ে উঠল। এরমধ্যেই চলে এল? দরজা খোলার পর দেখা গেল অন্য অতিথি, অনিল আর বাদল। ওরা কলকাতা থেকে বুক ফেয়ারে যোগ দিতে। এসেছে। এখানে ফারুখের আমন্ত্রিত।

দু-জনের হাতে তুলে দেওয়া হল ভদকার গেলাস। বাদল বলল, চমৎকার বিরিয়ানি রান্নার গন্ধ বেরিয়েছে।

পাশের ঘর থেকে মন্টু চেঁচিয়ে বলল, আর বিশ মিনিটের মধ্যে সব রেডি হয়ে যাবে। তারপর লাঞ্চ সার্ভ করা হবে।

অনিলকে দেখে মালা কিছুক্ষণের জন্য রোজার কথা ভুলে গেল। ঢাকায় থাকতে এই লেখকের অনেক বই সে পড়েছে, এর কবিতা আবৃত্তি করেছে, সেই লেখক জলজ্যান্তভাবে তার ঘরে। উপস্থিত! দেখলে মনে হয় সাধারণ একটা মানুষ, লেখক বলে বোঝাই যায় না।

রোজা আর স্বামী এসে উপস্থিত হল আরও পনেরো মিনিট পরে। সাধারণ মেয়েদের তুলনায় রোজা বেশ লম্বা, তার শরীরের গড়ন, মুখশ্রী ভারি আকর্ষণীয়। একটা হলুদ স্কার্ট পরে আছে। তার তুলনায় তার স্বামীটি একটু বেঁটেই হবে, তবে মুখে বেশ বুদ্ধির ছাপ আছে, ওষ্ঠে হাসি মাখানো। ফিরোজ বেশ লম্বা-চওড়া, তার পাশে রোজাকে ভালো মানাত। মালা ছোট্টখাট্ট সুন্দরী বাঙালি মেয়ে।

রোজা পরিচয় করিয়ে দিল, তার স্বামীর নাম ক্লাউস। কদিন ধরে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে খুব গরম পড়েছে, তবু ক্লাউস পুরোদস্তুর স্যুট পরে এসেছে। এতগুলি অচেনা বিদেশির মধ্যে তার কোনও ভূমিকা নেই সে জানে, তাই মুখখানা হাসি-হাসি করে রেখেছে।

ঘরের মধ্যে উপস্থিত যারা আগে থেকে রোজাকে চিনত, তারা এখনকার রোজার মধ্যে উচ্ছলতার কোনও চিহ্ন খুঁজে পেল না। শান্ত, সংযত ভঙ্গি। মাথা ঝুঁকিয়ে অভিনন্দন জানাল মালাকে, তারপর একটি ছোট্ট রূপোর বাক্স তুলে দিল তার হাতে। তারমধ্যে রয়েছে ক্ষুদে-ক্ষুদে দুটি রূপোর চামচ।

বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে বলল, কী সুন্দর! টানা টানা চোখ, টিকালো নাক, মায়ের সঙ্গে খুব মিল। দেখো দেখো ক্লাউস।

ক্লাউস কাছে এসে নিখুঁত ভদ্রতার সঙ্গে বলল, ভেরি হ্যান্ডসাম!

ফিরোজের সঙ্গে কথা বলছে না রোজা, মালাকেই জিগ্যেস করল, ওর কী নাম রাখা হয়েছে?

মালা আড়ষ্টভাবে বলল, এখনও ভালো নাম দেওয়া হয়নি, বাবু বাবু বলে ডাকি।

রোজা বলল, বাবু, বাবুও খুব সুন্দর নাম। আমি কি একবার ওকে কোলে নিতে পারি?

স্পষ্ট আপত্তি আছে মালার, তবু ঘাড় নাড়ল।

দোলনা থেকে বাবুকে কোলে তুলে নিল রোজা, তারপর ঘুরে তাকালো ফিরোজের দিকে।

ফিরোজের সন্তান তার গর্ভেও আসতে পারত, এ বাড়িতে রোজা নিজের সন্তানকে বুকে নিয়ে এরকম একটা পার্টির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারত। কিন্তু আট বছরের বিবাহিত জীবনে তার কোনও বাচ্চা হয়নি।

ফিরোজ এবং রোজা যেন কয়েক পলক বেশি সোজাসুজি তাকিয়ে রইল পরস্পরের দিকে। সেই

দৃষ্টির ভাষা অন্য কেউ বুঝবে না।

সবাই নিঃশব্দ হয়ে রোজাকে দেখছে। এখন রোজাই কেন্দ্রবিন্দু।

বাচ্চাটাকে নামিয়ে রাখতে-রাখতে মালাকে রোজা বলল, তুমি খুব ভাগ্যবতী।

রান্নাঘর থেকে অ্যাপ্রন পরা মন্টু এসে বলল, এই রোজা, আমি বিরিয়ানি রান্না করছি, খেয়ে যেতে হবে কিন্তু!

রোজা স্বামীর দিকে ফিরে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, আবিদ হোসেন মন্টু, ফিরোজের চাচাতো ভাই, খুব ভালো রান্না করে।

তারপর মন্টুকে বলল, আমরা লাঞ্চ খেয়ে এসেছি। এখন তো আর কিছু খেতে পারব না! ফিরোজ এবার ভদ্রতা করে ক্লাউসকে বলল, না না আপনাদের খেয়ে যেতেই হবে। প্লিজ বসুন! একটা ড্রিংক দেব। বিয়ার?

ক্লাউস জানাল, সে কোনওরকম মদ্যপান করে না!

বাঙালিরা হঠাৎ কারুর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলে গৃহস্বামিনীর অনুরোধে খেতে বসে যায়। জার্মানরা সেরকম খাবে না। তা ছাড়া, এদের সঙ্গে তাদের সেরকম সম্পর্ক নয়।

ক্লাউস আর রোজা কিছুতেই খেতে রাজি নয়। মালা বলল, অন্তত একটা মিষ্টি খেয়ে যান!

রোজা বলল, ঠিক আছে, একটা মিষ্টি আর এক গেলাস পানি!

এবার ওরা বিদায় নেবে, সব মিলিয়ে দশ বারো মিনিট। ফিরোজ এদের পৌঁছে দিল সিঁড়ি পর্যন্ত। নামবার আগে রোজা বলল, ঘরে বাচ্চাটা রয়েছে, সবাই সিগারেট খাচ্ছে। বন্ধুদের পাশের ঘরে গিয়েই সিগারেট খেতে বলো!

আবার শুরু হয়ে গেল গুঞ্জন।

বারান্দার ধারে দাঁড়ানো ডালিম আর আহবাবের পাশে এসেছে অনিল আর বাদল।

বাদল বলল, জার্মান ছেলে অথচ বিয়ার খায় না। এ যে দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ।

অনিল বলল, হয়তো খায়, এখানে খেতে চাইল না।

ডালিম ফিসফিস করে জিগ্যেস করল, মেয়েটিকে তো বেশ ভালোই মনে হল। ডিভোর্স হল কেন?

আহবাব বলল, মেয়েটা বোধহয় বাঁজা। ফিরোজের খুব ছেলেমেয়ের শখ। বারান্দা দিয়ে দেখা গেল রাস্তায় নেমে গেছে রোজা আর ক্লাউস। ক্লাউস চাবি দিয়ে গাড়ি খুলছে, এপাশেদাঁড়িয়ে। হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল রোজা। ব্যাগ থেকে রুমাল বার করে চোখ মুছল, তারপর দুটি কাগজ বার করল।

দুখানা মেডিক্যাল রিপোর্ট। রোজা আর ফিরোজ দু-জায়গায় পরীক্ষা করিয়েছিল। দু-জায়গা থেকেই রিপোর্ট দিয়েছে, ফিরোজের সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তবু ফিরোজ দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সন্তানের গবির্ত পিতা হয়েছে। অলৌকিক ব্যাপার আজও ঘটে।

কাগজ দুটো টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল রোজা।

ক্লাউস জিগ্যেস করল, ও কী করছ? কী ছিড়ছ?

রোজা বলল, ফিরোজকে ফিরিয়ে দেব ভেবেছিলাম। তারপর মনে হল, ওর আর দরকার নেই।

ক্লাউস মুচকি হেসে বলল, প্রেমপত্র নাকি?

রোজা হাহাকারের সুরে বলল, হ্যাঁ!

COMMENTS

My Blog List

Name

featured,64,Sad Story,1,slider,65,অন্যান্য,8,ইতিহাস,4,উপন্যাস,12,কবিতা,8,কলাম,4,গল্প,38,ছোট গল্প,15,জীবনী,7,পারিবারিক,6,প্রবন্ধ,9,প্রেম,14,বাস্তবতা,5,বিদ্রোহ,7,বিরহ,8,ভালবাসা,12,ভৌতিক,2,ভ্রমণ কাহিনী,5,ভ্রমন,1,রহস্য,8,রূপকথা,1,রোমান্টিক,5,শিশু সাহিত্য,3,সংকলন,4,সংগ্রহ,2,সংলাপ,2,সামাজিক,7,সাহিত্য,13,স্মৃতিকথা,1,হাস্যরস,1,হুমায়ূন আহমেদ,11,
ltr
item
Golpo Blog: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প, "অপ্রেম পত্র"-------- মধু'র ভূবণ ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প, "অপ্রেম পত্র"-------- মধু'র ভূবণ ।
bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh4mOOYwNvn72_AozlpI8U5kocTgG-nz8M_VBlDWx4rLoOvUYtshcLv7R_eQHjw4xT6JPPmZCYoZl9XNo6JgVqqjA90NtZYy45z0OUuASmMLeg77_tcsEjDUaWIFAyPow68ICpq8J583NrQ/w640-h360/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25AE+%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0+.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh4mOOYwNvn72_AozlpI8U5kocTgG-nz8M_VBlDWx4rLoOvUYtshcLv7R_eQHjw4xT6JPPmZCYoZl9XNo6JgVqqjA90NtZYy45z0OUuASmMLeg77_tcsEjDUaWIFAyPow68ICpq8J583NrQ/s72-w640-c-h360/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25AE+%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0+.jpg
Golpo Blog
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_30.html
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_30.html
true
3394482685536881275
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy