bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,
বেখেয়ালি মন _---ষষ্ঠ পর্ব।
লেখাঃ---আফরিন ইভা
-"আমার চোখের সামনে এ দৃশ্য ভাসার পর থেকে আমি হাসতে থাকলাম। আমাকে বোকার মতো এভাবে হাসতে দেখে সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। লজ্জা পেয়ে আমি মাথা নিচু করে রাখলাম সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে।"
-শিশির ভাই বলে উঠলো, কী ব্যাপার প্রিয়ন্তী গান গাওয়ার আগেই কী পেত্নীর নানি তোমার সাথে মোলাকাত করতে চলে এসেছে, আর গাইলে তো মনে হয় তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে , উনার নাতির সাথে বিয়েও দিয়ে দিবে।
-"সবাই তো হু হু হু করে হেঁসে উঠলো,কেউ কেউ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো।"
-আমি তো রাগে সেই রকম লাল হয়ে গিয়েছি। ইচ্ছে করছে শিশির ভাইকে মুরগি বানিয়ে ফেলতে, যাতে রোজ দু'টি করে গরম গরম সেদ্ধ ডিম খেতে পারি, ফাজিল কোথাকার।
-"আমি নির্বিকার ভাবেই বসলাম টুঁশব্দও করলাম না। বসে গান ধরলাম, মনে মনে পণ করলাম এমন গান করবো যাতে .. উনাদের ঘুমের নেশা পর্যন্ত লেগে যায়।"
" বেদনা মধুর হয়ে যায়,তুমি যদি দাও______________।
-গান শেষে সবাই হাত তালি দিলো। সবাই বললো অনেক সুন্দর হয়েছে। শিশির ভাই বললো যাক আমিতো ভেবেছিলাম, তোমার গান শুনে বুঝি কুকুর বিড়াল রাও হাগুপাদুর দিয়ে এই পৃথিবী ডুবিয়ে দেবে, যাক বাঁচালে আমাদের।আমিতো বাপু আমার শাশুড়ির হাতের মুরগির, হাতির, খাসির দুরুস খাওয়া ছাড়া মরতেই চাইনি।"
ওহ্ আল্লাহ কী দোষ করেছি, যার কারণে এমন একটা বাঁচাল লোকের সাথে দেখা করালে ইচ্ছে করছে দু'টি ডানা লাগিয়ে এই লোক কে পেত্নীর দেশে পাঠিয়ে দিতে। যাতে পেত্নী রা উনাকে গলা চেপে চেপে বাঁচাল গিরিটা অন্তত বন্ধ করিয়ে দেয়।
সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
____________
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম, মাথাটাও আর সময় পেলো না, ভীষণ ধরেছে তাই ভাবলাম নিচে গিয়ে আপু কে বলবো, একটু কড়া লিকার দিয়ে চা বানিয়ে দিতে যাতে মাথা ব্যাথাটা ছেড়ে দেয়। মাথাটা এ-তো এ-তো ব্যাথা করছে যেনো শিশির ভাইয়ের মতো এক ডজন ইঁদুর আমার মাথার উপর ধেইধেই করে নেচে বেড়াচ্ছে।
-আমি নিচে গিয়ে দেখি জিজু সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে, আর শিশির ভাই ল্যাপটপে বসে কিছু একটা করছে। শিশির ভাই আমাকে দেখেও না দেখার ভানে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
আমি আপুকে বললাম, আপু আমাকে এক কাপ কড়া লিকার দিয়ে চা বানিয়ে দেবে মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
-জিজু আমার সাথে তাল মিলিয়ে বললো, মিষ্টি আমাকেও এক কাপ দিও, কিন্তু শুনো মিষ্টি কম দেবে,আমার মিষ্টি বউ থাকতে এতো মিষ্টি খেলে নির্ঘাত ডায়াবেটিস হবে।
-জিজুর কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। জিজু টা বিয়ে করেছে তো কী হয়েছে, লজ্জা শরম কী শ্বশুরবাড়ি বাঘা দিয়ে এসেছে। আমি শোনেও না শোনার ভানে সোফায় এসে বসলাম। সোফাটিও কেমন ক্যাৎ করে শব্দ করলো যেনো এই সোফাটিও শিশির ভাইয়ের মতো বজ্জাতের হালি, আমি যে চুপিচুপি বসেছি এটাও সবাইকে জানিয়ে দিতে না পারলে শান্তি নেই।
সোফার শব্দে শিশির ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপটা রেখে আমার সামনে এসে বললো, কী ব্যাপার ম্যাম মাথাটা এতো ধরার কারণ কী, রাতে কী মোবাইলে লাল,নীল, সবুজ, হলুদ দেখেন নাকি ( এক ঠোঁট দিয়ে আরেক ঠোঁট চেপে) । আপনাদের মেয়েদের তো বিশ্বাস নেই, চুপিচুপি সব দেখেন ঠিকই কিন্তু মুখে মুখে বয়ফ্রেন্ড কে বলবেন লক্ষ্মীটি এটা করোনা ওটা করোনা, আর নিজেরা সবার সামনে সাধু হয়ে ঘুরে বেড়াবেন।
"কথাগুলো শুনে গায়ে যেনো আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছে করছে এই ব্যাটাকে ইঁদুরের রোস্ট বানিয়ে খেতে দিই,আরে বজ্জাত আমরা মেয়েরা কী তোদের মতো নীলক্ষেত যে, সারাক্ষণ নীল নীল চিন্তা করবো, বেয়াদবের হাড্ডি। এখনতো মনে হচ্ছে এই বজ্জাত এখানে বসেও সবার সামনে ল্যাপটপে লাল,নীল দেখছে, এতো এতো মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলো যে, যেনো উনি কী ইম্পরট্যান্ট কাজেই না মনোযোগী।
ছিছিছি কী লুচু রে, এই সন্ধ্যাবেলায়ও লুচু গিরি।
_________
কিছুক্ষণের মধ্যে আপু চা নিয়ে আসলো। আমার আপুটা সত্যি অনেক মিষ্টি, সবকিছু অনেক সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে। সবাইকে চা দিলো। শিশির ভাই বললো, আচ্ছা বউরানী তুমি যে তোমার বোনকে চা বানিয়ে দিলে ওর শ্বশুরবাড়িতেও কী করে দিয়ে আসবে। ওকে যে কাজ শেখাচ্ছ না পরে দেখা যাবে, ব্ল্যাক কফি বানিয়ে সবাইকে খাইয়ে ব্ল্যাক বানিয়ে "ফেলছে, দুধ,চিনি দিয়ে চা খাইয়ে সবার মুতু রোগ বানিয়ে ফেলছে, পরে দেখা যাবে কারো কারো ডিরেক্টও হয়ে গেছে, কেউ কেউ বিচানায়ও ছেড়ে দিচ্ছে, তরকারিতে ঝাল খাইয়ে সবাই জামাকাপড় তুলে লাফাবে।
________
শিশির ভাইয়ের কথা শুনে ইচ্ছে করছে চুইংগাম লাগিয়ে এতো সুন্দর চুলগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে।
জিজু আমার হয়ে উত্তর দিয়ে দিলো,কেনও আজ যে আমার শ্যালিকা রান্না করেছে তোর বা তোর কোনো বন্ধুর কী কোনো কিছু ডিরেক্ট হয়ে লাগামহীন হয়েছে? হলে বল আমার কাছে ভালো ডাক্তারের খোঁজ আছে।
আপুর শ্বাশুড়ি মানে আন্টি বললো, মায়ান তুই জানিস প্রিয়ন্তীর রান্না খেয়ে আমার তো ইচ্ছে করছিলো ধেইধেই করে নাচতে, কিন্তু নাচতে গিয়ে যদি এই বুড়ো হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে যায়? তাহলে তো সারাক্ষণ শুয়ে বসে তোদের কে জ্বালাতে হবে।
________
-আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না, এ ফ্যামিলির সবার কী একটু একটু তার ছেঁড়া নাকি, পারলে একটু একটু তার কিনে জোড়া লাগিয়ে দিতাম, কেমন একটু পাগলু পাগলু কথা বলে। নাকি আমিই দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারছি না।
আমি চা খাচ্ছি আর ভাবছি, ভাবতে ভাবতে চা যে কখন শেষ হয়েছে বুঝতে পারিনি। শিশির ভাই আমার চায়ের কাপ খালি দেখে বলপ উঠলো কী ব্যাপার ম্যাম আপনি কী খালি কাপেও আজকাল চা দেখেন নাকি, চা তো সেই কখন শেষ কিন্তু আপনি খেয়েই যাচ্ছেন, পাগল হয়ে যান নিতো আবার? পরে দেখা যাবে ঘুমের মধ্যে কাউকে চেপে -টেপে দিয়েছেন। তাহলে তো দেখা যায়, আজ থেকে জেগে থাকতে হবে, ঘুমানো যাবেনা।
-আমি অনেক খুশি হতাম শিশির ভাই, যদি আপনাকে ঘুমের মধ্যেও চেপে ধরতে পারতাম, কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমি পাগলও হয়নি গলা টাও চেপে ধরতে পারবো না।
পাগল হলে সেই কখন যে আপনাদের সাথে পাগলামি শুরু করতাম, পাগল হলে সবার আগে আপনার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতাম, খামছিয়ে আপনার মাংস সব উঠিয়ে ফেলতাম।
দেখা যেতো আপনার গালের মাংস কামড়ে বত্রিশ দাঁতের দাগ বসিয়ে দিতাম। যাতে করে আপনার বন্ধুদের সামনে গেলেই এক গাল ঢাকনা দিয়ে রাখতে হতো।
পাগলের তো আর বেদ বিচার নেই তাই-না? যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারি, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি এখনো পাগল হইনি।
পাগলের তো আর বেদ বিচার নেই তাই-না? যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারি, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি এখনো পাগল হইনি।
-"এ বাবা প্রিয়ন্তী তাহলে পাগল হওয়ার এতো ইচ্ছে তোমার, এতো ইচ্ছে কেনও বলোতো, পাগল রূপ নিয়ে ধোলাই দেওয়ার জন্য নাকি, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?"
আমি কোনো কথার জবাব না দিয়ে মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে এলাম।
____________
অনেকদিন হয়ে গেলো মা-বাবার সাথে কথা হয়না, তাই তাদের সাথে কথা বললাম, কল কাটার পরপরই শায়লা খালার ফোন আসলো। আমিও উৎসুক হয়ে কল রিসিভ করলাম। খালা প্রথমে বললো, প্রিয়ন্তী তোর কী হয়েছে রে, কতোদিন হয়ে গেলো, তুই একটু খবরও নিলি না। আমিতো ভেবেছি, তুই হয়তো কারোর সাথে ভেগে টেগে গেছিস? কিন্তু তুই তো বলেছিলি ভেগে গেলেও আমাকে জানাবি। তুই তো তোর বোনের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ভুলে গেলি , বোনের শ্বশুরবাড়িতে এ-তো ব্যাস্ত, আর নিজের শ্বশুড়বাড়িতে গেলে হয়তো একেবারেই ভুলে যাবি।
খালার এ-তো এ-তো কথা শুনে আমার হার্ট যেনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবুও জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে উত্তর দিলাম, না খালা মনি, আসলে আপুর শ্বশুরবাড়ি এসে এতো এতো মজায় আছি, কোনো কিছু মনেই আসে নি আর মনে মনে বললাম অনেক বেশি মজায় আছি তাই তোমাদের কথাই মনে পড়ছে না, পোড়া কপাল আমার।
ওহ্ তাহলে এক ডজন ছেলেমেয়ে হতে না হতে আমাদের ভুলে গেলি, আর হলেতো বলবি এই বেটি আপনি কে আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
আমি যখন তোকে বলতে যাবো প্রিয়ন্তী আমি তোর খালা মনি, তখন তোর এক ডজন ছেলেমেয়ের কেউ দা,কেউ খুন্তি, কেউ ঝাঁটা নিয়ে আমাকে দৌড়াতে থাকবে।
তাই আমি ভেবেছি কী জানিস, রিস্ক নেবো না, তোর বিয়ের দিন থেকে শুরু করে এক ডজন ছেলেমেয়ে হওয়া পর্যন্ত তোর সাথেই থাকবো।তোর সাথে থাকলে আমার আর তোর খালুর লাইফে রিস্ক জিনিসটা আসবে না, কারণ আমি জানি তুই যতোটা দুষ্ট তোর এক ডজন ছেলেমেয়ে হবে সুপার ডুপার দুষ্টুর হাড্ডি। ওদের ভয়ে ভুলেও কেউ আমাদের ক্ষতি করতে আসবে না । কেউ ভুল করে আসলেও তোর ছেলেমেয়ে গুলো কামড়ে দিবে ধরে ধরে।
আমি খালা মনির কথা শুনে হাসবো নাকি বেহুঁশ হবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
-খালা মনি বললো কি রে প্রিয়ন্তী তুই কী বোবাকালা হয়ে গেলি, নাকি বোবা জ্বিনে ধরেছে কোনো কথায় বলছিস না যে?
-"না খালা মনি কী বলবো বলো, তুমিতো বলছো, আমি শুনছি ভালোই লাগছে।"
খালা মনি আবার বলতে শুরু করলো, ভালো লাগলে কী হবে, করতে হবে না?
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম কী করতে হবে?
-খালা মনি হেঁসে জবাবে বললেন," বুঝিস না কিছু, কাউকে বিয়ে না করলে কী তোর বাতাস লেগে লেগে এক ডজন বাচ্চা হয়ে যাবে?
তারাতাড়ি দামড়া দেখে একটাকে পছন্দ করে প্রসেসিং করা শুরু কর।
-খালা মনির কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। কী বলছো তুমি খালা মনি। আমাকে কী এতোটা অযোগ্য মনে হয় যে, আমি দামড়ার উপযুক্ত!
-ওহ্ আমার সেয়ানা মেয়ে রে , কোনো চালাকচতুর ছেলে কে বিয়ে করলে কী তোর কথায় রাজি হবে?
-আমি খালা মনি কে বললাম, কীসের রাজি?
-এই তুই কী দিন দিন বলদার খাতায় নাম লেখাচ্ছিস যে, কিছুই বুঝতে পারছিস না।
আমি কী তোকে সব বলে দিবো আমার বুঝি লজ্জা লাগে না এই বুড়ো বয়সে।
শুন তাহলে, এক ডজন বাচ্চা নেওয়ার মিশন সম্পর্কে।
-খালার কথা শুনে মনে হচ্ছে, এসব কথা শুনার আগে কেনও পাঁচতলার ছাঁদ থেকে লাফিয়ে হাত,পা ভেঙে হসপিটালে থাকলাম না।
-চলবে _______
COMMENTS