bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,
গডফাদার
লেখাঃ-- সিয়াম আহামেদ জয়
রুনা বাইরে আসলো। লাল শাড়িতে রুনাকে অপরূপ লাগছে। তারিক বললো, “ গায়ে হলুদের দিন কেউ লাল শাড়ি পরে? হলুদ শাড়িও তো দিয়েছিলাম না? "
রুনা এই কথার জবাব না দিয়ে বললো, “ দেখা হয়ে গেছে? তাহলে যান। "
তারিক আবার বললো, “ গাছপালার জন্য এখানে চাঁদের আলো বেশি আসছে না। একটু ফাঁকা জায়গায় চলো। "
রুনা ভয়ে ভয়ে এগোতে লাগলো। ফাঁকা জায়গাটায় যাওয়ার পরেই তারিক বললো, “ তুমি কী নিজেকে খুব রূপবতী মনে করো? কী ভাবো সিনেমার নাইকা? ”
রুনা অবাক হয়ে বললো, “ মানে? আমি তো আপনাকে বলিনি আমাকে বিয়ে করতে। আপনি নিজেই সব করেছেন। এখন কেনো এসব কথা? তাছাড়া এখনো বিয়ে হয়নি। আমারও কোনো ইচ্ছা নেই! "
তারিক এই কথাটা শুনে রেগে গেলো।
“ আচ্ছা, তোমার মতো মেয়েকে যখন আমি টাকা দিয়েই পাচ্ছি। তাহলে বিয়ে করে নিজের ঘাড়ে ঝুলিয়ে রাখার কোনো দরকার আছে? "
রুনাও কথাটা সহ্য করতে পারলো না। কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করে বললো, “ আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম। "
রুনার হাত ধরে আটকালো তারিক। বললো, “ কোথায় যাও? তোমার আর এই কুঁড়েঘরে ফিরে যাওয়া হবে না। আমাকে সুখ দিতে হবে। আমার বন্ধুদেরও সুখ দিতে হবে! ”
রুনার মুখে চেপে ধরলো তারিক। তারিকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুবান্ধবও এসেছে। ওরা অন্ধকারে লুকিয়ে ছিলো। রুনা চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলেও পারলো না। গ্রামের মাটির রাস্তা। দুপাশে ধান ক্ষেত।
রাস্তাতেই রুনাকে শুইয়ে দেয়া হয়েছে। মুখে বেঁধে ফেলা হয়েছে। দুজন হাত ধাবিয়ে রেখেছে আর তারিক সিংহের মতো রুনার উপরে চড়তে লাগলো! পনেরো বছরের মেয়েটার মুখ দিয়েও রক্ত এসে গেলো!
একে একে তারিকের প্রত্যেকটি বন্ধু রুনাকে ধর্ষণ করলো! এক ঘণ্টার মতো তো হবেই। এর মাঝে কখন যে মেয়েটার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে! জানোয়ারদের আর সে খেয়াল নেই। সবার বাসনা মিটে যাওয়ার পরে একজন খেয়াল করলো রুনা আর নড়াচড়া করছে না!
রাস্তার মধ্যেই পড়ে রইলো রুনার লাশ। ভোর রাতে নাসিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রত্যেকদিন ভোর রাতে ঘুম ভাঙ্গলেই রুনাকে বলতো, “ আপা, হিসু করমু! "
আজকে নাসিরের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরে দেখলো তাঁর বোন তো পাশে নেই! বুকে কেমন যেন একটু ব্যথা অনুভব করলো।
কখনো সে নিজে দরজা খুলে না। কিন্তু আজকে সে নিজেই দরজা খুললো! ভাবছে তাঁর আপা গেছে কই?
“ আপা, আপা। "
করে কয়েকবার ডাকলো। কোনো সাড়াশব্দ নেই! এখনো ফজরের আযান হয়নি। এমন সময় কখনোই নাসির একা একা বের হয় না! আজকে তাঁর কেনো ভয় লাগছে না নিজেই বুঝতে পারছে না। বাড়ির পিছনের রাস্তায় গেলো সে।
কুকুরের ঘেউঘেউ শুনতে পেলো একটু সামনেই।
দৌড়ে গেলো সেখানে। গিয়ে দেখলো একটা লাশ মাঝ রাস্তায় পড়ে আছে!
গায়ে লাল শাড়ি! ছোট্ট ছেলে নাসির দিলো এক চিৎকার! বোনের মুখটাকে হাত রেখে বললো, “ আপা, কী হইছে তোমার? আপা কথা কও! "
রুনা তো কথা বলে না! রুনার কথা বলার শক্তি তো কিছু ঘন্টা আগেই হারিয়ে ফেলেছে। রুহটাও যে দেহে নেই!
রুনার গলা জড়িয়ে নাসির আপা আপা করে কাঁদতে শুরু করলো। নাসিরের চিৎকারে যেন আকাশটা ফেটে দুই ভাগ হয়ে যাবে! নাসিরের বাবা চিৎকার শুনে ঘুম থেকে জাগলেন। বের হয়ে এসে যখন নিজের একমাত্র মেয়েকে এরকম ভয়ংকর অবস্থায় দেখলো, তিনি সঙ্গেই সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন!
আমিন মিঞার জ্ঞান আর ফেরেনি!
তখন সূর্য উঠে গেছে। লোকজন জড়ো হয়েছে! নাসির যেন বোবা হয়ে গেলো! কিছুদিন ধরেই দেখতো বোনের মুখটা কালো! কথা বেশি বলে না! কাছে গেলেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো না!
চোখের সামনে যেন নাসিরের কেয়ামত হয়ে গেলো! গ্রামবাসীরা বুঝতে পেরেছে এটা কার কাজ! কিন্তু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তো আর কেউ কথা বলবে না!
দুপুর হয়ে গেছে। একটা পুলিশও আসলো না! কজন আমিন মিঞাকে গোসল করালো। তারপর কিছু মহিলা রুনাকে গোসল করালো।
সবকিছু খুব দ্রুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুটো কবর খুঁড়া হলো। আগে আমিন মিঞার তারপর রুনার জানাযার নামাজ হলো।
বাড়ির উঠোনের পাশে যে নারিকেল গাছ আছে। তার পাশেই দুজনকে কবর দেয়া হলো! সবাই তো সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলে গেলো! নাসির যাবে কোথায়?
ক্ষুধা লাগলে তো এখন আর কেউ রান্না করবে না! মাথার ছায়াও তো কবরে শায়িত হয়ে গেছে! পুরো একদিন নাসির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। এর মধ্যে হাজারবার আপা আপা করে ডেকে ফেলেছে, আপা তো আর উত্তর দেয় না।
ক্ষুধা লেগেছে সে করবে কী?
নাসির জানে না।
বোনের কবরের কাছে মাথা নিয়ে সে বললো, “ আপা, তোমার কষ্ট হইতাছে না? তোমার কষ্ট আমি দূর কইরা দিমু। তুমি চিন্তা কইরো না। খুব তাড়াতাড়িই দূর কইরা দিমু! "
একা একা বসে থাকে নাসির। রুনার কাপড়চোপড় সব টেবিলের পাশে পড়ে রয়েছে। বোনের বই খাতা উল্টেপাল্টে দেখছে নাসির। চারদিন ধরে ঘুম নেই। মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে।
চারদিকে চেয়ে দেখে নাসির। সবাই কতো খুশি। তাঁর সহপাঠীরা স্কুলে যাচ্ছে। খেলাধুলা করছে। মানুষজন আগের মতোই কৃষি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাজার করছে।
সবকিছুই আগের মতো চলছে।
এদিকে তারিক বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। একজন বললো, “ পক্ষিটারে একবারে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি রে। জিনিস ভালো ছিলো। "
“ ভালো মানে কী? একদম রসগোল্লা ছিলো! "
তারিক বললো, “ ভালো হইছে। মেয়েটার দেমাগ বেশি ছিলো। একটা রিকশাওয়ালার মেয়ে হয়ে বলে কী বিয়ে না করতে পারলে যেন সামনে না যাই! চিন্তা করছিস কতবড় স্পর্ধা! "
চেয়ারম্যানির নির্বাচন কদিন পরেই শুরু হবে। ক্ষমতায় অটুট থাকতে তারিকের বাবা চিন্তা করতে লাগলেন কী করা যায়?
খুঁজ পেলেন এক শিল্পপতির। শিল্পপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম। তিনি গ্রামে আসেন না। লন্ডনেই বসবাস। তাঁর একটি মেয়ে আছে নাম শেলি। শেলি লেখাপড়ায় খুবই খারাপ কিন্তু দেখতে সুন্দরী। সুন্দরী না হলেও চেয়ারম্যান সাহেবের কিছুই যায় আসে না।
কোনোভাবে সৈয়দ সাহেবের সঙ্গে একটা সম্পর্ক করতে পারলেই তাঁর আসনে আর কেউ বসার সাহস পাবে না। কারণ তখন সৈয়দ সাহেব তো নিজের বেয়াইকে পরাজিত দেখতে পারেন না! অটেল টাকা পয়সা তাঁর।
আর টাকা হলে জগতে সবই সম্ভব!
টাকা দিয়ে গরু কেনা যায়, ছাগল কেনা যায়। জমি কেনা যায় এবং মানুষও কেনা যায়। সৈয়দ সাহেবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলো। কোনো বিশেষ কারণে তিনি গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। সেই সুযোগটা কোনোভাবে হাতছাড়া করতে চাইছে না তারিকের বাবা লতিফ জামান।
প্রস্তাব পেয়ে সৈয়দ সাহেব ছেলের ব্যাপারে খোঁজ করলেন। সবাই এমনিতে তো খুব ভালো জানে তারিককে। তিনি রাজি হলেন। চেয়ারম্যান বিয়েটা যেন জলদি হয় সেই প্রচেষ্টা চালান। এবং তিনি সফল হোন।
নির্বাচনের কিছুদিন আগে বিয়ের আয়োজন করা হলো। শিল্পপতির মেয়ের সঙ্গে চেয়ারম্যানের ছেলের বিয়ে। বুঝাই যায় যে কতো জাঁকজমকপূর্ণ হবে বিয়েটা। চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে সৈয়দ সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত লাল, নীল, হলুদ বাতি জ্বলছে।
স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গণে পেন্ডেল করা হলো। হাজার হাজার অতিথিকে দাওয়াত করা হলো। ঢাক ঢোল বাজলো। নাচগান হলো। আনন্দ উল্লাসে সবাই মেতে উঠলো।
বিয়ে ততক্ষণে পড়ানো হয়ে গেছে। কবুল বলে ফেলেছে বর কন্যা দুজনেই। এখন মালা অদলবদলের পালা। মঞ্চে তারিকের পাশে একটা ছোট্ট ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সে কে? কেউ খেয়াল করেনি। ভদ্র পোশাকে সবাই ভাবছিলো হয়তো বর বা কন্যা পক্ষের কেউ। ছেলেটার হাতে একটা কাচের বোতল।
মদের বোতল, কেউ কেউ বিয়ের দিন বিয়ার বলে চালিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ আগেই সে পুরো বোতল খেয়ে শেষ করেছে। তারিকের হাতে একটি মালা দেওয়া হলো। সবাই হাততালি দিচ্ছে। যেই না তারিক মালাটা শেলির গলায় পরাতে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই পাশে থাকা ছেলেটা হাতের বোতল আরেকটা বোতলের সঙ্গে সংঘর্ষ করলো।
বোতলটা দুভাগ হয়ে গেলো। সবার সামনে কাচের বোতলটা তারিকের পেটে ঢুকিয়ে দিলো!
নাহ, সে ঢুকিয়ে দিয়ে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করেনি। বরং পরপর তিনবার ঢুকিয়েছে এবং বের করেছে কাচের বোতলটা। তারিকের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হলো। ছেলেটা ঠাঁই দাড়িয়ে থাকলো!
কেউ ভাবেনি এমন কিছু একটা হতে চলেছে। ছেলেটাকে চেয়ারম্যান সাহেব তখনই খুন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনগণের সামনে খুন করে খুনি সাজার কোনো প্রয়োজন মনে করলেন না। পুলিশের কাছে তুলে দিলেন।
তিনি এই ছেলেটাকে থানাতেই খুন করবেন বলে ঠিক করলেন।
ছেলেটার ভয় পাবার কথা। কিন্তু না, সে ভয় পাচ্ছে না। জেলের ভেতরে সে হাস্যজ্বল। অফিসার জিজ্ঞেস করলো, “ তোর সাহস তো কম না! কদিন আগে যে মারা গেলো রিকশাওয়ালা আমিনের ছেলে না তুই? "
“ স্যার, আমি আমার ফরজ কাম করছি। আর ফরজ কাজ করতে সাহস লাগে না। "
অফিসার চোখ বড় বড় করে বললো, “ তোর কী জানের মায়া নেই? কালকের সূর্য দেখতে পারবি বলে তো মনে হয় না। ”
ছেলেটা আবার বললো, “ মৃত মানুষ ভয় পায় না। ভয় পায় তো তাঁরা, যারা বেঁচে আছে! "
অফিসার আর ছেলেটার সাথে কথা বাড়ালো না। রাত তিনটে বাজে চেয়ারম্যান সাহেব থানার উদ্দেশে রওনা দিলেন। অফিসারের রুমে গিয়ে বললেন, “ ছেলেটাকে নিয়ে আসো। ওকে আমি এক্ষণি খুন করবো। "
অফিসার পাশের অপরাধীদের রুমে গিয়ে দেখলো ছেলেটা নেই! নেই মানে নেই! তাঁকে থানার কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না!
______________________________
কিছু মানুষ আছে। ঝড় বৃষ্টিতেও সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে না। রাশেদ তাঁদেরই একজন। ঝিনুকের মন খারাপ। মা বাবা কেউই নেই দুনিয়ায় তাঁর। একটা ভাই ছিলো। সেও গুম হয়ে গেলো! আদৌ বেঁচে আছে কিনা ঝিনুক জানে না।
রাশেদ বললো, “ চিন্তা করো না ঝিনুক। আমার মনে হচ্ছে হাসান ভাই বেঁচে আছে। "
ঝিনুক ভারী গলায় বললো, “ এক মাস হয়ে গেলো। এখনো কোনো খোঁজ পেলো না পুলিশ! ”
“ আজ নাহয় কাল পাবে। তুমি চিন্তা করো না। ”
ঝিনুক চুপ থাকলো। শেষবার হাসানের সঙ্গে ঝিনুকের দেখা হয়েছিলো বানিজ্য মেলায়। দুজনে অনেক কিছু কিনেছিলো। এইযে আলমারি, সোফা সহ নানান আসবাবপত্র বাসার। সেদিনই কেনা। এরপরে আর ব্যস্ততার কারণে দেখা হয়নি।
হাসান গুম হয়ে যাওয়ার পরে ঝিনুক আর অফিসে যায়নি। রাশেদও যায়নি। হঠাৎ খেয়াল হলো ঝিনুকের।
“ আচ্ছা, তুমি যে অফিসে যাচ্ছো না অনেকদিন হলো। চাকরী আছে না চলে গেছে? "
“ আমি তোমাকে ইংলিশে একটা কথা বলছি ঝিনুক। আই ডোন্ট কেয়ার! তোমার এই অবস্থাতে আমি অফিস করবো? "
ঝিনুক দুঃখের মাঝে হাসলো।
“ কফি খাবে? "
“ খাওয়া যায়। তার আগে আলমারি থেকে আরেক প্যাক সিগারেট বের করে দাও। এখন আর নিচে গিয়ে সিগারেট আনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। "
ঝিনুক কফি বানাতে রান্নাঘরে ঢুকলো। এর মাঝে কে যেন দরজায় ঠকঠক করছে। রাশেদ দরজা খুললো।
একটা বৃদ্ধ লোক, গায়ে লুঙ্গি আর পুরনো শার্ট পরা। গলায় গামছা ঝুলানো।
“ কাকে চাই? "
বললো রাশেদ।
“ ঝিনুক নামের মহিলা এই বাসায় থাকে না? "
“ ঝিনুক নামের কোনো মহিলা থাকে না। একটা মেয়ে থাকে। ভেতরে আসুন? "
রাশেদ জিজ্ঞেস করলো না কী কাজে এসেছে। লোকটা দাঁড়িয়েই থাকলো।
“ ভেতরে এসে বসুন না। "
বৃদ্ধ লোকটা ভেতরে এসে আবার সোফায় বসছেন না! রাশেদ এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো, “ চাচা, আপনি সোফায় বসলে। কোনো অপরাধ হবে না। কোনো জরিমানাও হবে না। আপনি বসুন। "
হাতে কফির কাপ নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হলো ঝিনুক। লোকটাকে দেখেই বললো, “ আরেহ আপনি? কী মনে করে? "
কফির কাপটা রাশেদের হাতে দিলো ঝিনুক। লোকটা উত্তর দিলো।
“ ম্যাডাম, আপনি তো আর অফিসে যান না। আপনার সাথে দেখাও হয় না। "
“ হ্যাঁ, অনেকদিন যাবৎ যাওয়া হচ্ছে না। তা আপনার খবর কী? "
প্রতিদিন এই লোকটাই ঝিনুককে অফিসে পৌঁছে দেয় এবং নিয়ে আসে।
“ খবর ভালো না ম্যাডাম। আমার মেয়ে রুনা হাসপাতালে। পেটে খুব ব্যথা। ডাক্তার বলছে অপারেশন না করলে বাঁচবে না! পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। আমি তো আর পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করতে পারবো না। মেয়েটা মারা যাবে! আপনি আমার মেয়েকে কলেজে ভর্তি আর খরচের জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলেন। টাকাগুলো ফেরৎ দিতে এসেছি। ”
একটানা কথাগুলো বললো লোকটা। রাশেদ বললো, “ আরেহ, আপনি তো লোক ভালো না। মাত্র পাঁচ লাখ টাকার জন্য আপনার মেয়ে মারা যাবে নাকি? "
“ সাহেব, কোনো বাপই তাঁর মেয়েকে হারাতে চায় না। আমিও চাই না। কিন্তু আমি এখন অসহায়! "
পরপর ঝিনুক বললো, “ এই মুহূর্তে আপনার টাকা খুব দরকার! আর আপনি কিনা টাকা ফেরৎ দিতে এসেছেন? "
“ হ্যাঁ, কারণ আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর আমি আত্মহত্যা করবো। অহেতুক এই টাকাগুলো নষ্ট হবে। "
রাশেদ আবার বললো, “ আপনার মেয়ে কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে? বলে সোজা বের হয়ে যান। "
“ পপুলার হাসপাতালে। বেড নাম্বার এগারো। "
বলে লোকটা আসলেই বের হয়ে গেলো! ঝিনুক রাশেদের দিকে তাকিয়ে বললো, “ লোকটার মনের অবস্থা তুমি বুঝতে পারছো? এভাবে কেউ কথা বলে? "
রাশেদ বললো, “ তোমার কাছে কতো টাকা আছে? আমার ব্যাংকে দশ লাখ টাকা আছে। চাকরী ছেড়ে ব্যবসা করবো সেই চিন্তা করে জমাচ্ছিলাম। আর তোমার জন্য সোনার নেকলেস কিনবো বলে। যদিও আমার ইচ্ছে ছিলো তুমি যখন মা হবে তখন দিবো। এর আগে না। "
ঝিনুকের জবাব।
“ আমার কাছে তো অতো টাকা নেই। ঘরের সব জিনিসপত্র কিনলাম না? "
“ আচ্ছা, এখন আমি পাঁচ লাখ টাকা লোকটাকে দিবো। তুমি মা হওয়ার পরে আর সোনার নেকলেস পাচ্ছো না! তাছাড়া এজন্য আমাদের এই বাসাটাও ছাড়তে হতে পারে! "
রাশেদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ঝিনুক। সে যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে! অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলো সে।
“ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো রাশেদ। আমি আসলে তোমাকে বুঝতেই পারিনি এতোদিনে। তোমার মনটা খুব বড়! "
রাশেদের বুকে মাথা গুঁজলো ঝিনুক। আবার বললো, “ আমার কিচ্ছু লাগবে না রাশেদ। তুমি শুধু পাশে থেকো সারাজীবন। "
রাশেদ হেসে ফেললো!
“ এসব কথা বলে আর আমার মন খারাপ করে দিয়ো না। এরকম শক্ত শক্ত কথা আমার ভালো লাগে না। আর কফিটা একদম ভালো হয়নি। সিগারেটের কথা বলেছিলাম তুমি ভুলে গেছো! "
ঝিনুক বললো, “ আবার বানিয়ে নিয়ে আসি? ”
“ নাহ, পরে কফি খাবো। এখন আলমারি থেকে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট বের করো। সিগারেটের প্যাক আলমারিতে কেউ রাখে? "
ঝিনুক মুখের উপর মানা করে দিলো।
“ নাহ, এখন কোনো সিগারেট হবে না। এখন আমি তোমাকে চুমু খাবো। সিগারেট খাওয়ার পরে তোমার মুখ থেকে কী বাজে গন্ধ আসে জানো? "
রাশেদ কথাটা একদম মেনে নিলো না।
“ দুনিয়ার মানুষ সিগারেট খায় না? তাঁদের বৌ কী চুমু খায় না? আচ্ছা, শুনো আমি সিগারেট খাওয়ার পরে ভালো করে দাঁত ব্রাশ করে আসবো। দরকার পড়লে সুগন্ধি ঢেলে নিবো গলায়। তাও এখন এক প্যাকেট বেনসন আমার চাই। "
“ ধুর! "
বলে ঝিনুক আলমারির চাবি খুলে এক প্যাকেট বেনসন রাশেদের হাতে দিলো! রাশেদ খুশি হয়ে গেলো। আলমারিতে সিগারেটের প্যাক এমনি এমনি তালা দিয়ে রাখে না ঝিনুক!
রাশেদের মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন সিগারেট না খেলে আবার ঘুমাতে পারে না। কিন্তু বাসায় সিগারেট না থাকলে সে বেরও হয় না! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাত কাটায়। রাত জেগে থাকলে সকালে অফিসে যেতে হয় সমস্যা।
জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে আলমারিতে সিগারেট রাখা। কিন্তু ইদানীং রাশেদ সবসময়ই আলমারির দিকে নজর দেয়! এবার শেষ হয়ে গেলে আর সিগারেট এনে রাখবে না।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ঝিনুক।
রাশেদ একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়েই যাচ্ছে। ঝিনুক খুব আন্তরিক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ আচ্ছা, আমি তোমাকে কেনো বিয়ে করলাম বলো তো? "
রাশেদ জবাব দিলো, “ মেয়েরা বিয়ে করে না বসে? এটাও আরেক কথা। আর তুমি আমাকে বিয়ে করেছো কারণ আমি অগোছালো, অলস। মেয়েরা গোছালো ছেলেদের পছন্দ করে না। "
“ তারমানে কী গোছানো ছেলেরা বিয়ে করে না? তাঁদের কোনো মেয়ে পছন্দ করে না? "
“ কেউ পছন্দ করে না বলেই যে অপছন্দ করে তাও না। আচ্ছা, এসব হিসাব বাদ দেই। তোমার কপালে আমি ছিলাম, তাই আমাকে বিয়ে করেছো। "
“ তুমি সিগারেট কেনো খাও বলো তো? তুমি দশ বছর আগে মারা যাবে। আর আমাকে সেই দশটা বছর একা একা কাটাতে হবে! "
রাশেদ সিগারেট রেখে বললো।
“ আবার শক্ত শক্ত কথা? চলো আজকে আমরা রুটি বানাবো। আমরা মানে আমি রুটি বানাবো। তুমি সাহায্য করবে। "
“ রাতের বেলা কেউ রুটি খায়? আমার ভালো লাগছে না। ”
“ তোমার কী ভালো লাগে আমি জানি। ”
বলেই ঝিনুককে কোলে নিলো রাশেদ। ঝিনুক মুচকি হাসলো। রাশেদ রান্নাঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ঝিনুককে কোলে করে।
“ বাসায় খাবার থাকে না নাকি? "
ঝিনুক অবাক হয়ে বললো, “ কেনো? "
“ তুমি যে দিন দিন শুকনা হয়ে যাচ্ছো! বাচ্চাদের থেকেও ওজন কম তোমার। "
“ আমি তো কম খাই না! ওজন কেনো বাড়ে না? "
“ এবার নামিয়ে দেই? "
“ আমার তো বাচ্চাদের থেকেও ওজন কম। আরেকটু রাখলে তোমার সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না! "
রাশেদ মুচকি হেসে ঝিনুকের কপালে চুমু খেলো। এর মাঝে কে যেন দরজার ওপাশ থেকে ডাকছে, “ ঝিনুকা, ঝিনুকা রে। "
ঝিনুকের ভাই তাঁকে ঝিনুকা ঝিনুকা করে ডাকতো! সে এই ডাক শুনে তাড়াহুড়ো করে নেমে গিয়ে দরজা খুললো।
COMMENTS