romantic dialouge, best songlap, novel, awesome story, love story, romantic story, sad story, sad solution, love solution, poem,
"বেখেয়ালি মন"----দশম এবং শেষ পর্ব
লেখাঃ----আফরিন ইভা
________________
-"খালা মনি আমাকে রুমে নিয়ে এসে বললো, প্রিয়ন্তী মা আমি তোকে একটি কথা বলতে চাই,
তুই একটু মন দিয়ে শুন।"
খালা মনি কে আজ অনেক সিরিয়াসলি মুডে দেখে আমার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো,
খালা মনি কে আজ অনেক সিরিয়াসলি মুডে দেখে আমার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো,
গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকে সংযত রেখে বললাম, খালা মনি এতো বিচলিত হচ্ছো কেনও।
এমন ভাব নিচ্ছো যেনো তুমি খালুকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো।
তোর খালু নয় তোর বিয়ে।
আমি খালা মনির দিকে পাথরের মূর্তির ন্যায় তাকিয়ে রয়েছি।
তোর খালু নয় তোর বিয়ে।
আমি খালা মনির দিকে পাথরের মূর্তির ন্যায় তাকিয়ে রয়েছি।
খালা মনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো কিরে তোর আবার কী হলো, পাথর হয়ে গেলি নাকি আবার?
আমি মনে মনে বলছি খালা মনি এই কথাটা শুনার আগে পাথর হওয়াটাই ভালো ছিলো।
আমি নিজেকে শান্ত রেখে বললাম, কখন করলে তুমি এসব, আমাকে কী একটুও ভাববার সময় দেওয়া যেতোনা, এতো তাড়াহুড়ো কী খুব দরকার ছিলো?
"খালা মনি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,কী যে বলিস না প্রিয়ন্তী, ছেলেটা যে কী ঝাক্কাস জানিস, দেখলেই প্রেম প্রেম পায়। তোর খালু তো পারেনা এখুনি তোকে ঐ ছেলের হাতে তুলে দেয়।
ছেলে নাকি তোকে কোথায় দেখেছে।ছেলের নাম আফসার,।আফসার যখন বললো, তোকে ওর অনেক পচন্দ , তখন তো আমি পারিনাই খুশিতে জামাইকে জড়িয়ে ধরতে। জড়িয়ে ধরে রিস্ক নেইনি, কারণ কখন আমার চাপায় পড়ে আলু ভর্তা হয়ে যায় হতোভাগা ।"
খালা মনির কথায় হাসবো নাকি মন খারাপ করবো বুঝতে পারছি না।
খালা মনি আমাকে আনমনা দেখে বললো, কিরে জামাইকে নিয়ে বুঝি এখুনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিস্ এতো স্বপ্ন দেখলে বেচারা এমনি বিষম খাবে।
তোর খালু চলে এসেছে নিচে যাই, সবাই একসাথে নাস্তা করবো। আর শোন বিয়ে এই বাড়ি থেকেই হবে।
আমি তো মনেমনে ভীষণ রেগে আছি একে তো বলা নেই চেনা নেই, কোন বানরের গলায় ঝুলিয়ে দিচ্ছে তাঁর ঠিক নেই, আরো নাকি এ বাড়ি থেকে বিয়ে।
নাহ আর কিছুক্ষণ ভাবলে হয়তো মাথা ঘুরে চিপা চাপায় পড়ে যেতে পারি।
খালা মনি খালুকে শাসাচ্ছেন, কারো সামনে যেনো গরম বাতাসটাতাস না ছাড়ে।
খালা মনির সাথে নিচে চলে গেলাম। সবার সাথে নাস্তা করতে বসলাম।
শিশির ভাইও রীতিমতো উপস্থিত। খালা মনি নাস্তা খেতে খেতে বললো, সবাইকে না জানিয়ে আমি প্রিয়ন্তীর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। আপা দুলাভাইও জানে আমি অলরেডি জানিয়ে দিয়েছি উনারাও আসছে।
খালা মনির কথা শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সবাই অবাক চোখে খালা মনির দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি কী নাস্তা করবো সব খাবার যেনো আমার গলায় আটকে যাচ্ছে।
শিশির ভাই এমনভাবে খাচ্ছে যেনো উনি দূর্ভিক্ষময় এলাকা থেকে ছুটে এসেছে,যেনো উনি কতোদিন খাবার-দাবার খায়নি। আমার তো ইচ্ছে করছে উনার মুখ দিয়ে নয়, নাক দিয়ে, চোখ দিয়ে, কান দিয়ে পর্যন্ত খাবার ঢুকিয়ে দেই।
শিশির ভাই দুই গাল ভরে খাচ্ছে আর বলছে, খালা মনি খুবি ভালো করেছেন, কতোদিন হলো একটা বিয়ে খাইনা,আমার তো কতো ইচ্ছে পেট ভরে রোস্ট খাবো,পোলাও খাবো আরো কতো কী।
শিশির ভাই আমি পারলে আপনাকে ইঁদুরের চর্চরী, হাতির লেজ, সাপের ডিম রোস্ট করে খাওয়াতাম।
বিয়ে খাওয়ার এতো শখ আপনার তাও আমার। শেষ পর্যন্ত আমার বিয়েটাও খাওয়ার এতো শখ হবে জানতাম না। আমি এক হাতে চোখের পানি মুছে শিশির ভাইয়ের দিকে তাকালে শিশির ভাই বলতে শুরু করলো আরে আরে প্রিয়ন্তী কাঁদো কেনও বিয়ে যে কতো মজা যদি তুমি জানতে তাহলে তো নেচে নেচে আরো আগে বসে যেতে।
জিজু বললো, শিশির তুই যে এতো মজা মজা করিস তুই কী আরো আগে কয়েকটা বিয়ে করেছিস্ নাকি?
আমাকে করতে হবে কেনও, আমার ফ্রেন্ডরা করেছে, আর বিশেষ করে তোমাকে দেখেই তো আমারও বিয়ে করার শখ জেগেছে যদি তুমি বুঝতে।
শিশির ভাইয়ের কথায় জিজু কাশতে শুরু করলো, আপু তারাতাড়ি জিজুর পিঠে হাত বুলিয়ে পানি খাওয়ালো।
শিশির ভাই আবার বলে উঠলো ভাই আমার বিয়ের জন্য চিন্তা করে করে তোমকে কেশে কেশে যক্ষ্মা রোগী হতে হবে না। আগে প্রিয়ন্তীর বিয়ে হোক তারপর আমার টা আমি করবো।
শিশির ভাইয়ের কথা শুনে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। পারলে আমি উনাকে আমার বিয়েতে দাওয়াত ই, দিতাম না, কিন্তু উনি এমন এক মানুষ যে কিনা বিনা দাওয়াতেও আমার বিয়েতে গিয়ে হাজির হয়ে যাবে।
আমি না খেয়ে উঠে যাচ্ছিলাম এমন সময় শিশির ভাইয়ের আম্মা বললো, কিরে মা খাচ্ছিস না কেনও, বিয়ে হবে বলে মন খারাপ করিস না। আমরাও তো বিয়ে করে এ পর্যন্ত আসলাম। তাই বলে কী আমাদের জীবনের কোনো কিছু থেমে গেছে, থেমে যায়নি তো ।
এদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি বলে আন্টি আমাকে খাইয়ে দিলো, আমার চোখ গুলোও আজ শিশির ভাইয়ের মতো পাঁজি হয়ে গেছে, শিশির ভাইয়ের কাজ যেমন যখন, তখন আমাকে অপমান করা তেমনি আমার চোখ গুলোও বৃষ্টির পানির মতো জল পেলে লজ্জা দেয়।
কোনো রকম চোখগুলোকে থামিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম। ভাবলাম কান্না করে চোখ গুলোকে একটু শান্ত করে আসি। আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, ভীষণ মন খারাপ লাগছে।
তাত দিন তাধিন আমি এসে হাজির,আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি শিশির ভাই, কী ব্যাপার প্রিয়ন্তী বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী করছো। ওহ্ বুঝতে পেরেছি, তুমি বুঝি কান্না করতে এসেছ, তাহলে ঠিক আছে করো, কারণ বিয়ের কনে যদি একটু কান্নাকাটি না করে তাহলে সবাই বলবে এই মেয়ে তো দেখছি বিয়ের জন্য পেকে আছে।
কাঁদো মনের সুখে কাঁদো আমিও আছি সাথে, কাঁদবার জন্য যদি কোনো স্প্রেও লাগে দরকার হলে এনে দেবো। দরকার হলে জামাইয়ের গলা ধরেও কাঁদবে তাহলেই না জামাই তোমাকে কোলে নিয়ে চোখের জল মুছে দিবে বলে চোখ টিপ মারলো।
শিশির ভাই আপনি কী সবসময় বেখেয়ালি মনে আমাকে অপদস্থ করেই যাবেন, কখনো কী আমার ভালোবাসা টা বুঝবেন না। আমার বিয়ে হবে বলে সবার মন খারাপ হচ্ছে আপনার কেনও হচ্ছে না।
শিশির ভাই বলতে শুরু করলো আগামীকাল তো তোমার হলুদ সন্ধ্যা কী পরবো একটু সিলেক্ট করে দাও না প্রিয়ন্তী। কতো কতো মেহমান আসবে, আর কতো কতো ময়দা সুন্দুরীরা আসবে।
আমি চাই তোমার বিয়েটার সাথে সাথে আমারটাও সিলেক্ট করে নিতে। বুঝতো আর কতো কাল একা একা কোলবালিশ নিয়ে দুঃখের গান গাইবো কোলবালিশ নিয়ে ।আমাদের মতো ব্যাচেলরদের জ্বালায় কোলবালিশগুলো পারছেনা সুইসাইট করতে। কোলবালিশদের জন্য যদি কোনো আইন থাকতো, কতো কতো ব্যাচেলর যে পুলিশ স্টেশন থাকতো একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ভালো জানে।
আমার এই দুর্দিনেও শিশির ভাইয়ের এমন এমন কথাও বলতে হবে, উনি কি আমাকে একটুও বুঝবে না, কখনো বলবেনা প্রিয়ন্তী তুমি আমার অনেক প্রিয়,প্রিয় তুমি থেকে যাওনা আমার কাছে, ভালোবাসার প্রিয় নারী হয়ে। আমার হৃদয়ের কান্না টুকুও কী বুঝতে পারছে না উনি। উনি যে এতো এতো অপমান করে, আমি কখনো প্রতিবাদ করিনি উনি কী আমার এই চুপ থাকাকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরে নিতে পারেনা।
শিশির কেনও আপনি এমন, দুইদিন পর আমার বিয়ে আর আপনি আসছেন আমার কাছে অন্য মেয়েরা আপনাকে পচন্দ করবে বলে ড্রেস সিলেক্ট করতে।হায়রে কপাল আপনার মতো আজব মানুষ এই পৃথিবীতে যে আছে কখনোই জানতাম না আপনাকে না দেখলে।
কী ব্যাপার প্রিয়ন্তী তোমার কী হিংসা হচ্ছে, আমাকে অন্যরা পচন্দ করবে বলে।
ইরা তো অলরেডি চার ডিম ফুটিয়ে আমাকে কাঁচকলা দেখিয়ে পাগল বানিয়ে ছাগলের মতো চলে গেলো। আমার মতো সহজ-সরল ছেলে কী ওর জন্য জীবন খানা কলাপাতা করে ছাড়বে। পরে দেখা যাবে ছাগলরা পর্যন্ত আমাকে দৌড়াচ্ছে কলাপাতা খাবে বলে।
এখন বলো কোন পাঞ্জাবিটা আমাকে বানাবে।
কথা না বাড়িয়ে আমি চারটা পাঞ্জাবীর মধ্যে নীল পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে উনার হাতে দিলাম, উনার হাতের সাথে সামান্য স্পর্শ লেগে আমার পুরো শরীরে মৃদু শীতলতা খেলে গেলো।
শিশির ভাই আমার অনূভুতি দেখে বললো কী ব্যাপার তোমার কী মৃগী রোগটা আবার দেখা দিলো নাকি, জুতো আনতে হবে?
উনার কথা শুনে, কাঁচের টুকরোর মতো আমার মনটা ভেঙে গেলো। শিশির আপনি কী কখনো আমার নিরবতার আড়ালের ভালোবাসা টা বুঝবেন না, আপনার স্পর্শে আমার মাদকতার নেশা সেটাও ধোয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকবে চিরকাল। আপনার অদম্য চুলেও আমার উড়ন্ত মনটা নিভু নিভু করছে একটু ছোঁয়ে দেওয়ার জন্য, আপনার নাকটা টেনে আমার নাকের সাথে ঘষে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়াতে, আপনার ভেজা ঠোঁট গুলো নিজের দখলে নিয়ে ভিজিয়ে দিতে।
জানি কখনো পাবো না আপনার ভালোবাসা, কখনো পারবো না আপনার হৃদয়ের গহীন অনুভূতি স্পর্শ করতে, আপনার দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে। কখনো পারবোনা আপনাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বলতে, শিশির আপনার ভেজা শিশিরে আমাকে মোহিত করে দিন, আমাকে পাগল করে দিন এই অদম্য বাতাসে আমি উড়ে যেতে দিন।
আমি স্থির হয়ে বললাম, আমি ঠিক আছি আপনি এতো চিন্তা করে নিজের প্রেশার উঠাবেন না। পরে দেখা যাবে বেঁহুশ হয়ে পড়ে আছেন, আমার বিয়ের রোস্টও মিস করে ফেলেছেন।
ঠিক বলেছো, এতটা প্রেশার নেওয়া ঠিক নয়, তবে আমি এটা ঠিক করে ফেলেছি তোমার বিয়ে তে কী গিফট দেবো।
আমি খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী?
উনি বললেন, তোমার জামাইয়ের জন্য দু’জোড়া, তোমার জন্য দু'জোড়া জুতা।
শেষমেশ জুতা দিবেন?
উনি খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, তোমার যে মৃগী রোগ এর চেয়ে ভালো আর কী গিফট দেবো। বলাতো যায়না তোমার হাজবেন্ডেরও আছে কিনা। তবে আমি এ-ই সেই ব্রান্ডের দেবো না, ভালো ব্রান্ডেরই দেবো।
হা হা হা শিশির ভাই ব্রান্ডের জুতা, তাও গিফট হিসেবে।
এমন সময় দরজায় নক পরলো, আপু এসে বললো, প্রিয়ন্তী তোর নামে চিঠি এসেছে। আমি অবাক হয়ে এক নজর শিশির ভাইয়ের দিকে আরেক নজর আপুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম কে দিয়েছে।
আপু বললো খুলে দেখ, তার পরেই বুঝতে পারবি।
আমি কাঁপা হাতে চিঠি টা নিলাম।
চিঠিটা হাতে নিয়ে ভাবছি খুলবো কী খুলবো না। আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না চিঠি টা দিলো কে? চিঠিটার উপরে লেখা , তোমারি অপেক্ষায় নামবিহীন ঠিকানায় অপেক্ষা করছি অধীর আগ্রহে।
"ভালোবাসা ভালোবেসে রাঙায়েছি বধূ
তোমারি পদচরণের আলাতা রাঙা পায়ে।
তোমারি মায়াভরা চোখের জলে
দেখিয়াছি আমার মরণোত্তর সর্বনাশ "।
চিঠির উপরের আবেগঘন ছন্দমাখা লেখা দেখে প্রিয়ন্তীর বুকের ভিতরটা কেমন চ্যাত করে উঠলো। শিশির ভাই আমাকে ভ্রু নেড়ে জিজ্ঞেস করলো চিঠি টা কার?
আমি মাথা নেড়ে জবাব দিলাম জানিনা।
উনি আমাকে পড়বার জন্য বললে, আমি জবাব দিলাম পরে খুলবো। চিঠিটা ইতস্তত মনে রেখে দিলাম। শিশির ভাই কিছু না বলে চলে গেলেন।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি টা বালিশের নিচে রেখে দিলাম।
সকাল গড়িয়ে বিকেল হলো পড়ন্ত দুপুর বিদায় নিয়ে লুকিয়ে পড়েছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রায় হেলে পড়েছে। চারদিকে মৃদু বাতাস বইছে, কিন্তু আমার ভেতরে জ্বলে পুড়ে সব ছাই হয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড ধরনের মানসিক অস্থিরতা ঘায়েল করেছে। পারলে উড়ে উড়ে নির্জলা বাতাসে লুকিয়ে যেতাম এই এখুনি।
কিছুক্ষণের মধ্যে খালা মনি রুমে এসে তাড়া দিয়ে বললেন, কিরে রেডি হচ্ছিস না যে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কী ভ্যা ভ্যা করে কান্নার প্রেকটিস করছিস?
শুন এখন হচ্ছে আপডেট যুগ এতটা কান্না মানায় না বুঝলি। এতো টাকা দিয়ে পার্লারে সাজাবো দেখিস কিন্তু চোখের পানিতে টাকাগুলো ডুবিয়ে দিস না।
"আমি তো চিন্তা করছি তোর খালু কে নিয়ে আজ রাতে ঘুমালে না জানি কতো কতো লোক ভয়ে খাটের তলায়, বালিশের তলায়,লুঙ্গি পুঙ্গির তলে লুকালুকি শুরু করে, আল্লাহ জানে আমার মানইজ্জত না জানি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।
খালা মনি তুমি যা ভাবছো তা কিছুই হবে না।
তুই তো মহাজান্তা বুঝলি, কতো রাত জেগে জেগে যে আমি মোটা হয়ে গেছি যদি তুই আমার কষ্টটা বুঝতি আজ আর বলতিস না।
আগামীকাল যে তোর খালুর গরম বাতাসে কতো লোকের পেট খারাপ হবে একমাত্র আল্লাহই জানে আর পেট খারাপ লোকেরাই জানবে।
আমি বাপু ভেবে রেখেছি, আগামীকাল তোর খালু কে খাইয়ে রুমে পাঠিয়ে দেবো।
এবার উনি, এটম বোমা, লিটল বয়,হাইড্রোজেন বোমা ফাটাক তখন আমার কোনো সমস্যা নেই। নিজের বোমায় নিজেই বিদগ্ধ হোক তাতে আমাদের কিছু যায় আসলো না।
এখন বল রেডি হয়ে নিচে যাবি কিনা, নাকি জামাই বাবাজিকে পাঠাবো কোলে করে স্টেজে দিয়ে আসতে। আর শুন তোর জামাই কে আমার না হেব্বি লেগেছে। চিন্তা করিস না তোর খালুর মতো নয়।
এখন বল রেডি হয়ে নিচে যাবি কিনা, নাকি জামাই বাবাজিকে পাঠাবো কোলে করে স্টেজে দিয়ে আসতে। আর শুন তোর জামাই কে আমার না হেব্বি লেগেছে। চিন্তা করিস না তোর খালুর মতো নয়।
খালা মনি এমনভাবে খালুর কথা বলছে, যেনো উনার এসব অজুহাতের মাঝেও খালা মনির ভালোবাসা লুকায়িত আছে।
আমি খালা মনি কে বললাম, আমি আসছি তুমি যাও।
খালামনি বললো তারাতাড়ি আয়, আর দেখিস আবার এতো ময়দা সুন্দরী সাজিস না,এমনি তুই বাসর ঘরে জামাইকে বেঁহুশ করার মতোই ন্যাচরালি সুন্দরী। এখানকার মেয়েরা এতো এতো সেজে শাঁকচুন্নি হয়ে মানুষকে বেঁহুশ করে ফেলে।
দেখ দেখি কী কান্ড।
আমি মনে মনে খালা মনি কে বাহবা দিলাম, আগামীকাল না জানি খালা মনির এসব কথায় কতোজন বেঁহুশ হয়ে হসপিটালে থাকে।
খালা মনি চলে যাওয়ার পর আমি রেডি হয়ে নিচে নামলাম। মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম অনেকক্ষণ। অনেকদিন পর ওদের সাথে দেখা। মা - বাবার দোয়া নিয়ে স্টেজে বসলাম।
সবার আগে শিশির ভাই এসে কপালে হলুদ ছুঁইয়ে বললো, প্রিয়ন্তী আর একটু কম সাজতে পারলে না।
তোমরা মেয়েরা কেনও যে এতো এতো সাজো বুঝি না। এখানকার মেয়েরা আটা ময়দা দিয়ে পেত্নী সেজে যায়। যার কারনে আসল পেত্নীরাও কনফিউজড হয়ে যায়, ওদের দলের লোক কারা।
"হায় আল্লাহ শিশির আপনাকে আজও আমার সাজের পেছনে পড়তে হলো।"
"হায় আল্লাহ শিশির আপনাকে আজও আমার সাজের পেছনে পড়তে হলো।"
আচ্ছা প্রিয়ন্তী দেখোতো আমার দাঁড়ির স্টাইলটা কেমন হলো, আগামীকাল মেয়েরা পাগল হয়ে ছাগল হয়ে ঘুরবে তো?
আমার ব্যাথিত হৃদয়ে যেনো কাঁটার মতো বিঁধল। আমি মনে মনে বললাম মেয়েরা পাগল নয় মাছির মতোই ভনভনিয়ে ঘুরবে। আমি নিরুপায় হয়ে বললাম, ঘুরবে না শুধু কোলে-ওঠা'রও বায়না করবে।
যাহ কী যে বলো।
জি শিশির আপনি যে আমার মনেও শিশির জমিয়েছেন যার বিষে আমি জ্বলে দগ্ধ। আপনার শিশিরে আমি একটু ভিজতে চাই।
_______________
জিজু এসে বললো বাহ্ আমার শ্যালিকা তো মাশাআল্লাহ। আগামীকাল তোমার জামাইতো ফিদা হয়ে বেহুঁশ হয়ে যাবে।
জিজু আস্তে করে বললো, চিন্তা করো না শ্যালিকা, বেহুঁশ হলেও আমরা আছি, হুঁশ হওয়ার উপায় আগেই জানিয়ে দেবো।
শিশির ভাই এসে বললো, ভাই এটা কিন্তু ভারি অন্যায়, শুধু কী ওকে শুনালে হবে তোমার এই সহজ-সরল ভাইকেও একটু শিখিয়ে দাও।আমরাও তো কয়দিন পর বিয়ে হবে।
জিজু শিশির ভাইকে বললো, এই ব্যাটা খবিশ তুই হচ্ছিস আমার ভাই, আর ও হচ্ছে আমার প্রানপ্রিয় শ্যালিকা।
আরো কিছুক্ষণ দুষ্টুমি শেষে জিজু চলে গেলো। একে একে খালু,খালা,আপু, আন্টি, মা-বাবা সবাই এসে হলুদ ছুঁইয়ে গেলো।
____________________
পার্লার থেকে সেজেগুজে বসে আছি,মূর্তির ন্যায়। শরীরটা কেমন ক্লান্ত লাগছে। পার্লারে যেতে চাই নি তবুও চাইনিজ সেজে বসে আছি, কি আর করবো খালা মনির এক কথা, পার্লার থেকে এমন সাজিয়ে আনবে, আমার সৌন্দর্য দেখে যেনো সবার মাথা ঘুরে যায়। এতো মাথা ঘোরানোর কী দরকার,
সবার মাথা ঘুরলে আমার বিয়ের সাক্ষী হবে কে।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। কেমন ভয় ভয় লাগছে, নতুন মানুষ কেমন হবে সেটাও জানি না। তবুও স্থির হয়ে বসে রইলাম। কবুল বলছি না বলে সবাই এতো চিমটা চিমটি শুরু করলো যেনো আমার বিয়েতে পিঁপড়েদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। অবশেষে কবুল বলে দিলাম।
বাসর ঘরে বসে আছি। এখন পর্যন্ত আমার জামাই কে দেখলাম না। বত্রিশখানি দাঁত আছে কিনা তাও জানি না। খালা এসে আমার কাছে বসলো কানে কানে অনেক কিছু বলে গেলো, আমি হ্যাঁ, না কিছুই বলিনি। খালা মনি আরো বললো বাহ প্রিয়ন্তী তোর বাসর ঘরটা আমার বাসরের থেকেও চমৎকার সাজিয়েছে। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম আসলে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।
আমি মনে মনে ভাবছি এমন খালা মনি এ পৃথিবীতে আর আছে কিনা সন্দেহ, যে বোনের মেয়ের বাসরে এসে নিজের বাসরের বর্ননা দেয়। না জানি কখন খালুর পুরো কাহিনি বলতে শুরু করে। আমি খালা মনি কে থামিয়ে বললাম, তুমি যেভাবে বলছো সেভাবেই সালাম করবো।
খালা মনি আরো কিছু বলে চলে গেলো।
প্রিয়ন্তী বালিসের নিচ থেকে কাঁপা হাতে চিঠি টা বের করলো। চিঠিটা খুলে দেখলো।
প্রিয় বউ,
বাসর ঘর টা আমার মন মতো সাজিয়েছি।নিশ্চয় তোমারও ভালো লাগবে। আশা করি বাকি সবও ভালো লাগবে।
ইতি
তোমার
প্রাণ প্রিয়
কেউ আসার শব্দ শুনে লম্বা ঘোমটা টেনে বসলাম। কেউ এসে দরজা বন্ধ করলো। এই গরমেও ভয় পেয়ে আমার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
ইচ্ছে তো করছে দূর আকাশে উড়ে যাই কিন্তু তা কী আদৌও সম্ভব।
"কেউ আমাকে প্রিয়ন্তী বলে ডেকে উঠলো। কণ্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগছে, ঘোমটা খুলে উপরে তাকিয়ে যা দেখলাম আমার মাথা মৌমাছির মতো ঘুরতে শুরু করলো।
আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, শিশির ভাই আপনি এখানে কেনও?
এ বাবা আমি তোমার কোন জন্মের ভাই, আর আমি তোমার কোলে থাকবো নাতো মায়ের কোলে থাকবো?
কী বলছেন এসব, আমার হাজবেন্ড কোথায়?
এই কী বলছো তোমার কয়টা জামাই লাগে।আমি একাই একশো।
তাঁর মানে?
মানে আমিই তোমার হাজবেন্ড।
সত্যি বলছেন?
বিশ্বাস না হলে আরো কিছু করে বিশ্বাস করাবো নাকি?
আমি লজ্জা পেয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম।
_________________
শিশির ভাই আমার মুখ থেকে হাতদুটো সড়িয়ে বললো, আর ভাই ডেকো না বুঝলে,নয়তো আমার এক ডজন ছেলেমেয়েরা বলবে মাম্মি, পাপা তোমরা ভাইবোন হলে আমরা কী চায়না থেকে উড়ে উড়ে এসেছি।
আমি মৃদু হেঁসে শিশিরের বুকে মুখ লুকলাম। উনি বললেন এই প্রিয়ন্তী তুমি জানো তোমাকে সেই কবেই আমি আমার বেখেয়ালি মনে ভালবেসেছি।কিন্তু তুমি এতোটাই বোকা ইরার কথা বলাতেও কোনো রিয়েক্ট করনি।
ইরা ছিলো আমার কল্পিত চরিত্র, বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। এজন্যই তো আমি খালা মনি কে হাত করে তোমাকে এখন আমার বুকে পেয়েছি। আর তোমাকে কে বলেছে চায়নিজ সাজতে বলতো, এখনতো মনে হচ্ছে আমি শাঁকচুন্নি কে আমার বুকে আগলে রেখেছি, কখন না জানি আমার সব রক্ত চুষে নেয়।
আমি এবার অভিমান করে বললাম, তাহলে থাক আপনি অন্য রুমে চলে যান।
এ বাবা শাঁকচুন্নির দেখি অনেক মান হয়েছে, এতো মান ব্যান করবো কিভাবে।
মনে হচ্ছে আমার ঘাড় মটকে দেবে আজই। তুমি শাঁকচুন্নি হলেও আমার, বউ হলেও আমার বুঝছো তো পাগলী।
কাছে আসবেন না, এখন কিন্তু সত্যি সত্যি কামড়ে দেবো ঘাড়ে।
ওমা ভয় পেলাম তো সোনা বউ,কাছে আসো না, আর কোথায় কোথায় কামড় দিতে পারো শুনি।
আমি লজ্জা পেয়ে উনার বুকে লুকালাম।
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সোহাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন, লজ্জা পেলে হবে বলো, এক ডজন বাচ্চা নিতে হবে না?
কী?
ছিঃ ছিঃ কী লুচু রে আপনি!
এগুলো বললে হবে, খালার কড়া নির্দেশ আজ থেকে এক ডজন বাচ্চার প্রসেসিং শুরু করতেই হবে, উনাকে তারাতাড়ি নানি বানানোর জন্য।
বিয়ে টা এতো তারাতাড়ি করতে পেরেছি খালা মনির জন্যই বুঝলেতো সোনা বউ।
আজ আমাদের ভালোবাসা দেখে চাঁদের বুড়িও লজ্জা পাবে।
"মধুচন্দ্রিমা রাতে আমারি ললাটে,
তোমারি ভেজা ঠোঁটের স্পর্শে,
আমারি বক্ষ আজ উত্তপ্ত বালি।
তোমারি চরণধুলায় মোর জীবনখানা
আজ পরিপূর্ণ সাজে স্বর্গপ্রাপ্তি "।
সমাপ্ত-----------------------
COMMENTS