romantic dialouge, best songlap, novel, awesome story, love story, romantic story, sad story, sad solution, love solution, poem,
"কালো যাদুকর"
রোমহর্ষক ভৌতিক গল্প,
প্রতিরাতের মত আজকেও রুমের মাঝে কিছু অস্বাভাবিক শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল আয়নার। ঘুম জরানো চোখে, লাফিয়ে উঠে বসে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখল! পুরো রুমটাই ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু সেই শব্দটা এখনো ওর কানে বারি খেয়ে যাচ্ছে বারবার।
আয়না কাঁপা কাঁপা হাতে পাশের টেবিল ল্যাম্পটা অন করল! তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
--"কে আছে, কে আছে আমার রুমে! কেনো প্রতিরাতে এমন বিদঘুটে শব্দ করে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেন? দয়া করে যে ই থেকে থাকুন না কেনো, আমার সামনে আসুন। কেন প্রতি রাতে এভাবে শব্দ করে ভয় দেখাচ্ছেন আমায়?"
কথাগুলো বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করল আয়না। কারণ এতক্ষণে রুমের মাঝে হওয়া শব্দ টা বন্ধ হয়ে গেছে। চারদিকে নিরব নিস্তব্ধ সবকিছু। কিন্তু কে বা কেন প্রতিরাতে এভাবে ওকে ভয় দেখিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়! সেটা আয়না জানে না। গত একমাস হলো আয়নার সাথে প্রতিরাতে এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই ঘটনার কোন অর্থই আয়নার জানা নেই।
প্রথম প্রথম বেশ কিছুদিন আয়না নিজের হ্যালুসিয়েশন মনে করে বেপারটাকে এড়িয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছে যে সত্যিই প্রতি রাতে ওর রুমে কিছু একটা আসে! আর এমন অদ্ভুত শব্দ করে ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে আবার উধাও হয়ে যায়। আর অদ্ভুতভাবে সারারাত আর একটুও ঘুম আসেনা আয়নার চোখে। বারবার মনে হয় ওর রুমে বা ওর পাশে কিছু আছে। কিন্তু তাকে আয়না চোখ খুলে আর দেখতে পায় না।
ব্যাপারটা নিজের বান্ধবীদের সাথে বেশ কয়েকবার শেয়ার করেছে আয়না। কিন্তু ওর বান্ধবীরা প্রতি বারই ওর কথাগুলো মজা ভেবে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। সবাই মনে করে, আয়না ওদের কাছে মিথ্যে গল্প বানিয়ে বানিয়ে বলছে। কারণ এই ঘটনার কোন প্রমাণই দিতে পারেনি আয়না।
বান্ধবীরা বিশ্বাস না করায়, আয়না নিজের আম্মুকেও এই ব্যাপারে সবকিছু বলেছিল। আয়নার আম্মু আয়শা বেগম আয়নার কথা বিশ্বাস করে দুই রাত ওর সাথে ওর রুমে ছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে শব্দটা আয়না শুনতে পেলেও ওর আম্মু একটুও শুনতে পায় না। যার কারণে সবাই ধরে নেয় যে আয়না মিথ্যে গল্প বানিয়ে বলছে।
সেই থেকে, সবার কাছে হাসির পাত্র হওয়া থেকে বাঁচার জন্য, আর কাউকে কোন কিছু বলেনি আয়না। প্রথম প্রথম নিজেকে নিজে বুঝাতো, যে এ সবকিছুই ওর মনের ভুল! তা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু ইদানিং শব্দটা আরো বেড়ে চলেছে, অসহ্য হয়ে পড়েছে আয়না। রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই শব্দ টা ওর।
শব্দটা বড়ই অদ্ভুত রকমের একটি শব্দ। কখনো কখনো মনে হয় আয়নাকে কেউ একজন নাম ধরে ডাকছে! কিন্তু কন্ঠটা কেমন যেন, একদম অন্যরকম শুনতে। যেন কোন মানুষের কন্ঠ নয় এটা। আবার কখনো কখনো আয়নার মনে হয়, কেউ আয়নার খুব কাছ থেকে ওকে দেখছে।
ওকে স্পর্শ করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যখনই আয়না নিজের চোখ দুটো খোলে, জিনিসটাকে দেখার জন্যে, তখনই সেটা হাওয়া হয়ে যায়। কিছুই দেখতে পায় না আয়না। তারপর সারারাত কান্না করেই কেটে যায় ওর। কাউকে বলার মতোও কোনো পথ নেই ওর। কারণ সবাই ভাবে আয়না মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলে, সবাইকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। এমনকি আয়নার আম্মুও এখন ওকে বিশ্বাস করে না। মাঝে মাঝে নিজেকে বড় বেশি অসহায় লাগে আয়নার।
সারারাত কান্না করতে করতেই কেটে গেল আয়নার। শেষ রাতে ফজরের আজান হলে, উঠে ওয়াশরুম থেকে ওজু করে এসে, নামাজ পড়ে নিল সে। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে ওর আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আয়নার আম্মু আয়শা বেগম ওর দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,
"কি হয়েছে তোমার আয়না! তোমার চোখ মুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন? তুমি কি রাতে ঘুমাও নি নাকি?"
আয়েশা বেগমের এমন প্রশ্নে, যেন কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আয়না। কারণ ও ওর আম্মুকে অনেক বারই বলেছে, প্রতি রাতে ওর রুমে এক অদ্ভুত শব্দ হওয়ার কথা! কিন্তু আয়শা বেগম ওর কথাটা বিশ্বাস করেন নাই। যে কারণে আয়নার আর ইচ্ছা নেই তার আম্মুকে আবার সেই একই কথা বলে নিজেকে মিথ্যেবাদি প্রমাণ করার। তাই আয়না ওর আম্মু আয়শা বেগমের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সেখান থেকে চলে যায়। আয়নার এমন আচরণে ওর আম্মু আয়শা বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ওর চলে যাওয়ার দিকে।
আয়েশা বেগম এবং হাবিবুর রহমানের একমাত্র মেয়ে আয়না। ও খুব আদরের মেয়ে তাদের। আয়নার পর আর কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি তাদের ঘরে। তাই ওকে একটু বেশিই ভালোবাসেন হাবিবুর রহমান আর আয়শা বেগম। আয়নার নামের মতই সুন্দরী ও। হলুদ ফর্সা গায়ের রঙ, চোখগুলো ভাসা ভাসা ও হরিণী হরিণী। কোমর পর্যন্ত ঘন লম্বা চুল। উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। নাকটা বাশির মতো খাড়া ও সুন্দর। সব মিলিয়ে আয়নার চেহারাটা অসম্ভব সুন্দর ও নজরকাড়া।
ড্রইং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন আর খবরের কাগজ পড়ছিলেন হাবিবুর রহমান। আয়না চুপটি করে গিয়ে তার পাশে বসে, তার কাঁধের উপর মাথা রেখে তাকিয়ে থাকে খবরের কাগজটির দিকে। মেয়ের এমন আচরণে হাবিবুর রহমান কিছুটা অবাক হয়ে যান।তাই হাতের খবরের কাগজটা পাশে রেখে, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন
--" কি হয়েছে মামনি, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? মন খারাপ হয়েছে নাকি কোনো কারণে? না কি তোমার আম্মু বকেছে তোমায়?"
হাবিবুর রহমান এর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আয়না। তারপর আলতো হেসে বলে,
--"তেমন কিছু নয় আব্বু, এমনি ইচ্ছা হল একটু তোমার পাশে বসার, তাই এসে বসলাম। আচ্ছা তুমি খবরের কাগজ পড়, আমি তাহলে যাই।"
কথাগুলো বলেই হতাশ হয়ে সেখান থেকে উঠে যেতে নিল আয়না। কিন্তু তার আগেই ওর আব্বু হাবিবুর রহমান ওর হাত ধরে ফেলল। তারপর ওকে নিজের পাশে বসিয়ে ওর মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
--" কি হয়েছে মামনি বল আমায়! তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ইদানীং দেখছি তুমি সব সময় কেমন মন মরা হয়ে থাকো! ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো না! কি হয়েছে বল আমায়, এভাবে মনমরা হয়ে কেন থাকো তুমি? তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে, তোমাকে এভাবে মন মরা দেখলে যে ভালো লাগেনা আমাদের, তুমি কেন বোঝনা। কিছু হয়ে থাকলে বল আমার কাছে!"
হাবিবুর রহমানের এমন কথা শুনে এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা আয়না। হু হু করে কান্না করে দেয় আব্বুর হাত জড়িয়ে ধরে। আয়নাকে এভাবে কান্না করতে দেখে বেশ কিছুটা ঘাবড়ে যান হাবিবুর রহমান। আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে ওঠেন,
--"কি হয়েছে আয়না, এভাবে কাঁদছো কেনো তুমি? কি হয়েছে বল আমায়! কলেজে কিছু হয়েছে? তোমার কি হয়েছে আমাকে বলো! এভাবে কেঁদোনা মামনি।"
আয়নার কান্নার আওয়াজ শুনে, রান্না ঘর থেকে দৌড়ে চলে আসেন আয়েশা বেগম। আয়েশা বেগম কে আসতে দেখে হাবিবুর রহমান উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন,
--"কি হয়েছে আয়নার, ও এভাবে কাঁদছে কেন? তুমি কি কিছু বলেছ আমার মেয়েটাকে? ও এভাবে কাঁদছে কেন, কি হয়েছে ওর?"
হাবিবুর রহমানের কথা শুনে আয়শা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলেন
--"আমি তো কিছুই বলিনি! বরং ওর কান্নার আওয়াজ শুনেই তো ছুটে এলাম কি হয়েছে তা জানতে! আয়না এভাবে কাঁদছো কেনো তুমি? কি হয়েছে তোমার বলতো?"
আব্বু আম্মুর প্রশ্ন শুনে নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নেয় আয়না। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
--"আমার কিছু হয়নি আব্বু আম্মু, তোমরা উত্তেজিত হইও না। আসলে শরীরটা ভালো লাগছিলো না। রাতে ঘুম হয়না ঠিক করে তাই হয়তো!"
--"সে কি মামনি, তুমি আগে কেনো বলনি আমায়, তোমার রাতে ঘুম হয়না? শরীর ভালো নেই তোমার! আয়শা তুমি আমাদের তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা দাও।আমি আয়নাকে নিয়ে সেলিমের কাছে যাবো।"
আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে মমতাময় কন্ঠে কথাগুলো বললেন হাবিবুর রহমান।
ওনার কথা শুনে আয়শা বেগম আর কথা না বারিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন খাবার রেডি করতে। হাবিবুর রহমান আয়নার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
--"আয়না মামনি তুমি নাস্তা করে দ্রুতো রেডি হয়ে এসো, আমি তোমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।"
আব্বুর কথা শুনে ছোট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আয়না বললো,
--" জ্বি আব্বু "
সকালের নাস্তা শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্যে বোরকা করে রেডি হচ্ছিল আয়না। এমন সময় হঠাৎ বেলকুনির দিকে নজর পরে ওর। একটি কুচকুচে কালো রঙের বিড়াল, চোখ দুটো যেনো আগ্নেয়গিরির লাভা, এক নজরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
বিড়ালটাকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় আয়না। কারণ ওর রুমে তো কোনো বিড়াল আসা সম্ভব নয়। আয়নার রুমটা দোতলায়, আর দোতলার বেলকুনি দিয়ে কোনো বিড়ালের প্রবেশ করা একদমই ভাবনাতিত ছাড়া কিছু নয়। তাও আবার আয়নার রুমের বেলকুনিতে কোনো দরজা নেই। পুরোটাই গ্রিল দিয়ে আটকানো।
আয়না বিড়ালটার চোখের দিকে তাকাতেই যেনো অন্তর আত্বা কেঁপে ওঠে ওর। বিড়ালটা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই কালো আর বড় সাইজের। বিড়ালটা একপা একপা করে এগুতে থাকে আয়নার দিকে। বিড়ালটাকে নিজের কাছে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে পিছুতে থাকে আয়না। এক সময় দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় ওর। বিড়ালটা ওর একদম কাছে চলে আসতেই ভয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে জোরে একটা চিৎকার দেয় আয়না।
আয়নার চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে হাবিবুর রহমান আর আয়শা বেগম ছুটে আসে ওর রুমে। তারপর আয়নার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে হালকা ঝাঁকিয়ে আয়শা বেগম উত্তেজিত হয়ে জিগ্যেস করেন,
--" আয়না, কি হয়েছে তোমার! তুমি এভাবে এখানে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আর চিৎকার করলে কেনো এভাবে?"
আয়শা বেগমের কথা শেষ হতেই হাবিবুর রহমান আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ ভড়া কন্ঠে উত্তেজিত হয়ে জিগ্যেস করেন,
--" মামনি আমার, তুমি কি কিছু দেখে ভয় পেয়েছো? এভাবে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তাকাও আমাদের দিকে, আয়না!"
আব্বু আম্মুর কন্ঠ পেয়ে ধিরে ধিরে চোখ খোলে আয়না। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
--" বি বি বিড়াল, খুব ভয়ানক দেখতে একটা কালো রঙের বিড়াল ছিলো এখানটায়। কোথায় গেলো বিড়ালটা?"
আয়নার কথা শুনে হাবিবুর রহমান আর আয়শা বেগম এক সাথে ওর ইশারা করা স্থানের দিকে তাকায়। কিন্তু সেখানে তেমন কিছুই দেখতে পায় না তারা। এমন কি পুরো রুমের কোথাও বিড়ালের চিন্হ টুকুও নেই।
বিড়াল টাকে না পেয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন,
--" কি সব আবোল তাবোল বলছ মামনি, এখানে তো বিড়ালের কোনো চিন্হটুকুও নেই। আর তাছাড়া এখানে বিড়াল আসবে কোথা থেকে? তুমি ভেবে দেখো তো! হয়তো রাতে ঘুম হয়নি তাই, শারীরিক দুর্বলতার কারণে, এরকম উল্টাপাল্টা দেখছো।আচ্ছা বাদ দাও আর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমাদের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে!"
কথাগুলো বলে আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাবিবুর রহমান চলে গেলেন আরেক রুমে। ওনার সাথে আয়েশা বেগমও চলে গেলেন। ওনারা চলে গেলে আয়না কিছুক্ষণ চুপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর নিচু হয়ে খাটের নিচে এবং পুরা রুমটা খুঁজে দেখে। ওই বিড়াল টা কোথাও আছে কিনা! কিন্তু না, বিড়ালটার চিহ্নও কোথাও নেই। আয়না তখন একটু ভয় পেলেও মনে মনে ভাবে, হয়তো চোখের ভুল ছিল ওর। তাই বিড়ালের চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বোরখা পড়ে রেডি হয়ে নেয় আয়না।
_________________
বেলা ১০.৩০ মিনিট
আয়না কে নিয়ে ওর আব্বু হাবিবুর রহমান বসে আছেন তার বন্ধু, ডাক্তার সেলিম শিকদার এর চেম্বারে। সেলিম শিকদার আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে জিগ্যেস করেন,
--" তা আয়না মামনি কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো!"
--" জ্বি আঙ্কেল আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?"
মুচকি হেসে কথাটা বললো আয়না। আয়নার কথার উত্তরে সামনে থাকা কলমটার ক্যাফ লাগাতে লাগাতে ডাক্তার সেলিম শিকদার বললেন,
--" এই তো ভালো আছি। তা হাবিব হঠাৎ কি কারনে আজকে এখানে আগমন! অসুস্থ নাকি তুই?"
হাবিবুর রহমান গম্ভীর স্বরে বললেন,
--" নারে সেলিম আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু দেখ, আয়না বেশ কিছুদিন হল রাতে নাকি ঘুমায় না। তুই একটু দেখ তো ওর কি হয়েছে!"
ডাক্তার সেলিম শিকদার আয়নার দিকে স্নেহের নজরে তাকিয়ে বললেন,
--"তাই না কি মামনি, বলো তোমার কি সমস্যা। মানে রাতে কেন ঘুমাও না তুমি? আর কি কি সমস্যা আছে সেগুলো আমায় বল।"
ডাক্তার সেলিম শিকদারের কথা শুনে, আয়না ওর আব্বু হাবিবুর রহমানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। হাবিবুর রহমান আয়নার চাহনি দেখেই বুঝতে পারেন যে, ওনার সামনে আয়না কিছু বলতে চাচ্ছে না। তাই সে হালকা কাশি দিয়ে সেলিম শিকদারকে উদ্দেশ্য করে বলেন
--" আচ্ছা সেলিম তোরা কথা বল, আমি একটা ফোন করে আসছি। আমি বাইরেই আছি, দরকার পড়লে আমাকে ডেকে নিস।"
কথাটা বলে সেখান থেকে উঠে বাইরে চলে যায় হাবিবুর রহমান। উনি বাইরে যেতেই সেলিম শিকদার আয়নার দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলেন,
--"হ্যা মামনি এখন বলো তোমার কি সমস্যা? কি হয়েছে তোমার, রাতে ঘুমাও না কেনো?"
ওনার কথা শুনে জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আয়না। তারপর বলতে শুরু করে
--"আঙ্কেল আমি কথাগুলো আপনাকে কিভাবে বলব, ঠিক ভেবে পাচ্ছিনা। তবে আপনি যেহেতু ডাক্তার,আপনাকে কথাগুলো বলতেই হবে। আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা আমি ঠিক জানি না। আমি জানি না, আমি আপনাকে যে ঘটনাগুলো বলতে চাইছি, সেগুলো আমার মনের ভুল, নাকি সত্যি আমার সাথে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।"
এতোটুকু বলে থামল আয়না। তারপর ছোট করে একটা নিঃশ্বাস নিল। ওর কথা শুনে ডাক্তার সেলিম শিকদার ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
--" আসলে কি হয়েছে আয়না বলতো আমায়! তোমায় এত আফসেট দেখাচ্ছে কেন?"
ডাক্তার আংকেল এর কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো আয়না। তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,
--"আসলে আঙ্কেল প্রায় একমাস আগে থেকে প্রতি রাতে হঠাৎ করে আমার রুমে কিছু একটা শব্দ হয়। যখনই আমি ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পড়ি, আর হালকা ঘুমের মত হই, তখনই একটা অদ্ভুত শব্দ আমার পুরো রুমটা গ্রাস করে নেয়। আর যার কারণে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আবার, কখনো কখনো মনে হয় আমার আশেপাশে কেউ আছে। তার গরম নিশ্বাস আমার গায়ে লাগে। কিন্তু আমি তাকে ছুঁতে পারিনা বা তাকে দেখতেও পারিনা। আমি জানিনা এটা আমার মনের ভুল নাকি সত্যি। তবে আঙ্কেল অদ্ভুতভাবে যখনই রাতে ঐ শব্দটা আমার রুমে হয়, আর আমার ঘুম ভেঙে যায়, তারপর থেকে সারারাত আর আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারি না। ভীষণ অস্বস্তি শুরু হয় আমার মাঝে।"
এতোটুকু বলেই হু হু করে কাঁদতে লাগল আয়না। আয়না কে শান্তনা দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ডাক্তার সেলিম শিকদার বললেন,
--" কুল ডাউন মাই ডিয়ার, কুলডাউন, নিজেকে শান্ত করো। আর ঠিক কি কি ঘটেছে তোমার সাথে, সবকিছু আমার কাছে খুলে বল। তবে, এ ব্যাপারে কি তুমি এর আগে কারো কাছে কিছু বলেছ! নাকি আমার কাছে আজ প্রথম বলছো?"
আঙ্কেলের কথা শুনে নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত করে নিয়ে বলতে শুরু করল আয়না,
--"এই ব্যাপারে আমি এর আগে আমার বান্ধবীদের সাথে কথা বলেছিলাম, তারা আমার কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করলেও, পরে আমি এসব ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তাদের। যে কারণে তারা ভাবে আমি তাদের ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যে গল্প বানিয়ে বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আঙ্কেল সত্যি প্রতিদিন রাতে আমার সাথে এই ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে।"
এতোটুকু বলতেই আয়নাকে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার সেলিম শিকদার বললেন,
--" তোমাদের বাড়ির তোমার আব্বু আম্মুকে এসব ব্যাপারে কোন কিছু বলনি?"
--"জ্বী আঙ্কেল আমি আম্মুর কাছে ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলাম। যখন আমার বান্ধবীরা আমার কথা বিশ্বাস করেনি, তখন আম্মু আমার কথা বিশ্বাস করে আমার রুমে দুদিন রাতে ছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সে রাতেও একই রকম শব্দ হয়, আর আমি আম্মুকে সেটা বলি। কিন্তু আমি শব্দটা শুনতে পেলেও আম্মু শব্দটা শুনতে পায় না। এমনকি সারারাত আমি শব্দ শুনলেও আম্মুর কানে একটুও শব্দ পৌঁছায়নি। তাই সেদিন আম্মু প্রচুর বিরক্ত বোধ করে আমার কথায়। সে ভাবে আমি মিথ্যে বানিয়ে বলছি। আম্মুও এখন আর আমার কথা বিশ্বাস করে না।"
কথাগুলো বলেই হু হু করে কাঁদতে লাগল আয়না। আয়নাকে কাঁদতে দেখে নিজের চেয়ার ছেড়ে ওর কাছে উঠে আসলো ডাক্তার সেলিম শিকদার। তারপর আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
--"আয়না মামনি কান্না করো না, কিচ্ছু হয়নি তোমার। আমি দেখছি ব্যাপারটা! আসলে তুমি হয়তো পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করছ, যে কারণে তোমার হেলোসিয়েশন হচ্ছে, আর এজন্যই তুমি এইসব শুনছো বা অনুভব করছো। তুমি একদম চিন্তা করবে না, আমি দেখছি কি করা যায়। তুমি এখন একটু বাইরে গিয়ে বসো, আমি তোমার আব্বুর সাথে একটু কথা বলতে চাই।"
ডাক্তার সেলিম শিকদারের কথা শুনে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের চোখ দুটি মুছে নিলো আয়না। তারপর বলল,
--"না আংকেল আমি বাইরে বসবো না। আমার কলেজে যেতে হবে, এমনিতেই আজকে হয়তো দুটো ক্লাস মিস হয়ে গেল।আরও দেরি করে পৌঁছালে সবগুলো ক্লাস মিস করবো। আপনি আব্বুর সাথে কথা বলুন আমি কলেজে চলে যাচ্ছি।"
কথাটা বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আয়না। তারপর আঙ্কেলকে সালাম দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে, ওর আব্বুকে ভিতরে যেতে বলে, কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
COMMENTS