সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব)------ মধু'র ভূবণ ।

SHARE:

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প                   "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব)  দ্বিতীয় পর্বের পর,,,,,,,,,,,, খাবার টেবিলে যেন একটা...



সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প


                  "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব) 


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প  "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব)------ মধু'র ভূবণ ।


দ্বিতীয় পর্বের পর,,,,,,,,,,,,

খাবার টেবিলে যেন একটা বাজ পড়ল। কতদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য, সেই পুজো বন্ধ করার কেউ প্রস্তাব দিতে পারে? তার ওপর মন্দির ভাঙার কথা? এ যেন কানে শোনাও পাপ।

শুরু হয়ে গেল চিৎকার-চেঁচামেচি, বড় জ্যাঠামশাই আবার দৃঢ় গলায় বললেন, আগে যখন জমিদারি ছিল, তখনই এসব মন্দির গড়া হত। সব জমিদারই মন্দির বানিয়েছে, মন্দিরের খরচ চলত প্রজাদের শোষণ করা টাকায়। এখন জমিদারি উচ্ছন্নে গেছে, এখন আর নিজেদের মন্দির রেখে লাভ কী? বাইরে তো কত বারোয়ারি মন্দির আছেই।

আমার ঠাকুমা তখন বেঁচেছিলেন। ঠাকুমাদারুণ ইন্টারেস্টিং ক্যারাকটার। তাঁর কথা তোকে পরে একদিন বলব। বড় জ্যাঠামশাইয়ের ওই কথা শুনে ঠাকুমা বললেন, জগু, তুই যদি আর-একবার ওইরকম কথা উচ্চারণ করিস, তাহলে আমি গলায় কাটারি দেব। আমি যতদিন বেঁচে আছি…

বড় জ্যাঠামশাই বললেন, সে তুমি যাই বলো মা, এটাই আমার কথা। তোমরা যদি না মানো, আমি আমার বাড়ির অংশ বেচে দিয়ে চলে যাব।

আমার তখন সতেরো-আঠরো বছর বয়েস। ওই যে তুই বললি না, কনফিউজড অবস্থা, আমারও সেই রকম। বড় জ্যাঠামশাইকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু তিনি এটা কী বললেন? অন্যরা যে বলছে, মন্দির ভাঙলে বংশনাশ হবে?

বড় জ্যাঠামশাই থাকতেন বাড়ির ডান দিকের তিনতলার অংশে। বড় জ্যাঠাইমা মারা গেছেন দু বছর আগে, ওঁদের একটিমাত্র মেয়ে, আমাদের যমুনাদি, বিয়ের পর থাকে আলজিরিয়ায়। জ্যাঠামশাই একা হয়ে গেছেন। আমি দেখা করতে গেলাম তাঁর সঙ্গে।

বাড়ির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বড় জ্যাঠামশাইয়ের বিশেষ ভাব ছিল না। এতগুলো ছেলেমেয়ে, সবার নামও জানতেন না বোধহয়। আমার মুখ চিনলেন অবশ্য। প্রথমে আমার দু-একটা প্রশ্ন শুনে উনি ঠিক পাত্তা দিলেন না, গম্ভীরভাবে বললেন, আমি যা বলব, তা তোমাকে মানতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। তুমি যুক্তি দিয়ে বুঝতে শেখো।

আমি খুব আন্তরিকভাবে জিগ্যেস করলুম, বড় জ্যাঠামশাই একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারি না। যুক্তি গুলিয়ে যায়। আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন তো। ঈশ্বর বলে সত্যিই কি কেউ আছে না নেই?

জ্যাঠামশাই আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত। মানুষটা বেশ লম্বা। ধারালো নাক, বয়েস হলেও মাথায় চুল কমেনি, চুল কপালের ওপর এসে পড়ে, তিনি কথা বলতে-বলতে চুল সরান। তীব্রভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন, হ্যাঁ আছেন। কোটি-কোটি মানুষ যাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

উনি আবার বললেন, তবে ঈশ্বর মোটেই একজন নয়, কয়েকজন। এক-এক ধর্মের এক-এক ঈশ্বর। প্রত্যেক ধর্মের লোকই মনে করে, তাদের ঈশ্বর শক্তিমান। তিনিই বিশ্বজগতের স্রষ্টা। চার-পাঁচজন সর্বশক্তিমান আর স্রষ্টা হয় কী করে। সুতরাং এই ঈশ্বরের কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই। বিশ্বাসের ওপর যুক্তি চলে না।

—হয়তো, একজনই আছে। বিভিন্ন ধর্মে তাঁকে আলাদা করে দেখা হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলেছেন, যত মত তত পথ।

—ওটা কথার কথা। শ্রীরামকৃষ্ণ একজন সাধক, সমস্ত হিন্দুর ধর্মগুরু নন। অধিকাংশ হিন্দুই তাঁর এই কথা মানে না। তাঁকে অন্য ধর্মের লোকরা তো একেবারেই মানে না। তারা মনে করে, মতটাই ঠিক পথ ও একমাত্র পথ। অন্য ধর্মের লোকরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন। সারা পৃথিবীতে এখনও এরকম ধর্মীয় ভেদাভেদই চলছে।

—কিন্তু সব ধর্মেই তো কিছু মানুষ ঈশ্বর উপলব্ধির কথা বলেন। তাঁরা কি মিথ্যে কথা বলেছেন?

—তাদের সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। বলবে মনস্তাত্বিক বা ডাক্তাররা। ধরে নেওয়া যাক, সত্যিই একজন ঈশ্বর আছেন। থাকলেই বা কী? মানুষের ভালো বা মন্দ, কিছু করার ক্ষমতাই। তাঁর নেই। কলাগাছে মূলো ফলাবার ক্ষমতা তাঁর নেই। এইসব গাছপালা, জীবজগৎ তিনি সৃষ্টি করেননি, এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে।

—বিজ্ঞান কি একেবারে শেষ কথা বলে দিতে পারে? বড় জ্যাঠামশাই, অনেক বৈজ্ঞানিকেরও ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে, আমরা পড়েছি।

—বিজ্ঞান কখনও শেষ কথা বলতে পারে না। অনন্ত জিজ্ঞাসার নামই বিজ্ঞান। এখনও অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে মানুষের। হয়তো এরপর এমন কিছু আবিষ্কার হবে, যাতে এখনকার সব ধারণা আবার বদলে যাবে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হতেও পারে। হোক না! একটা ব্যাপার এর মধ্যে অবধারিতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে। একজন মানুষ যদি সারাজীবনেও কোনও ধর্মের আওতায় না থাকে, কোনও রকম আচার-অনুষ্ঠান না মানে, ঈশ্বর আছেন কি নেই, তা নিয়ে। মাথাও না ঘামায়, তা হলেও সে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। অর্থাৎ ঈশ্বরকে তার জীবনে প্রয়োজন নেই, ঈশ্বরও তাকে ঘাঁটায় না। পুথিবীতে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা অনেক বাড়ছে। লোকে এদের বলে নাস্তিক। কথাটা ঠিক নয়। ঈশ্বর নিয়ে যে মাথাই ঘামায় না, তার চিন্তা নেগেটিভ হবে কেন, সেটা পজিটিভ।

আর বৈজ্ঞানিকদের কথা বলছিস? বিজ্ঞান নিয়ে যারা চর্চা করে, বিজ্ঞান যাদের পেশা, তারা। সবাই বৈজ্ঞানিক নয়। অনেকের অনেক সংস্কার যায় না। কেউ-কেউ প্রকাশ্যে অস্বীকার করতে এখনও ভয় পায়। জিয়োর্দানো, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও এঁদের কী অবস্থা হয়েছিল মনে নেই? আইনস্টাইন খুব চালাক। তাঁকে একবার জিগ্যেস করা হয়েছিল, আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস। করেন কি না বলুন। আইনস্টাইন কায়দা করে বলেছিলেন, আমি স্পিনোজার ঈশ্বরকে মানি। (স্পিনোজা না স্পিনোৎসা, কী উচ্চারণ হবে কে জানে?) দার্শনিক স্পিনোজা বলেছিলেন, এই যে প্রকৃতির এত বিচিত্র সৃষ্টি, এই সৃষ্টির এমন নিয়মশৃঙ্খলা, এটাই ঈশ্বর, এর বাইরে আকাশে ঈশ্বর খোঁজার দরকার কী?

অভিদা একটুখানি থামলেন। মাছ ভাজা খেতে-খেতে আমরা অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম। আমার মাথায় অনসূয়ার কাহিনিটা ঘুরছে। ওই কাহিনির মধ্যে এখনও যেন অনেক না বলা কথা রয়ে গেছে।

একসময় আমি জিগ্যেস করলাম, অভিদা, অনসূয়া তোমাকে যে চিঠিগুলো লিখেছে, তা আমাকে দেখাতে পারো? যদি তোমার আপত্তি না থাকে।

অভিদা বললেন, আপত্তির কী আছে? প্রথম দুটো চিঠি আমি রাখিনি, মুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পরেরগুলো রেখে দিয়েছি। কেন ফেলিনি কে জানে? তুই পাশের লাইব্রেরি ঘরে গিয়ে দ্যাখ, টেবিলের ডান দিকের দেরাজে, একটা হলদে খামের মধ্যে।

একটা টেলিফোন এল, অভিদা কথা বলতে লাগলেন, আমি পড়তে লাগলাম চিঠিগুলো। পরিষ্কার সাদা কাগজে লেখা। চিঠিগুলো ক্রমশ বড় হয়েছে, তাও বেশি বড় নয়, প্রথমটা তিন লাইন, শেষতমটি দশ লাইন। শেষের দিকে ব্যাকুলতা যেন বেড়েছে, অভিদার বিপদের চিন্তায় মেয়েটি খুব কাতর। টেলিফোন করা শেষ হলে অমি জিগ্যেস করলাম, অভিদা, তুমি এই চিঠির কখনও উত্তর দিয়েছ? অভিদা বললেন, উত্তর দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। চিঠিতে নাম নেই। তা ছাড়া আশ্রমে চিঠি পাওয়ার কোনও নিয়ম আছে কি না, তাই বা কে জানে!

—এগুলো পড়লে মনে হয়, মেয়েটি তোমাকে আসলে ভালোবেসে ফেলেছে। তুমি তা বোঝোনি?

—সেটা বুঝব না, আমি কি এতই গবেট? তুই কবিতা লিখিস বলে সব বুঝে ফেলবি? প্রেম বা। এক ধরনের আকর্ষণ ওর হয়েছে তা ঠিকই। কিন্তু ও নিজে কি তা বোঝে? বোঝে না। ওর ধারণা, ও ক্ষমার আদর্শ প্রচারের জন্য প্রাণপাত করে যাচ্ছে।

—তুমি কী করে জানলে যে ও বোঝে না? ওর সঙ্গে তোমার আর দেখা হয়েছে?

—হ্যাঁ, হয়েছে আর-একবার।

—আরে সেই কথাটাই বলোনি এতক্ষণ? কবে দেখা হল, কোথায়?

–দাঁড়া, কেন দেখা হল, সেটা আগে বুঝিয়ে বলা দরকার।

গেলাস শেষ করে অভিদা আবার ঢাললেন। সিগারেট ধরিয়ে ছড়িয়ে দিলেন ভাঙা পা-টা তারপর বলতে শুরু করলেন।

আমার যে মাঝে-মাঝে অসুখ হয়েছে কিংবা একটা-দুটো দুর্ঘটনায় পড়েছি, এগুলো একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার, আমি জানি। মানুষের জীবন বদলাবার কোনও ক্ষমতা যে ঈশ্বরের নেই, তার আমি মর্মে-মর্মে প্রমাণ পেয়েছি অনেক ঘটনায়। সেসব আমি ডায়েরিতে লিখে এক সময় পড়তে দেব। ধর, গরিব বিধবার একমাত্র ছেলেটি যদি বিনা দোষে পুলিশের গুলিতে মারা যায়, তখন মনে হয় না, ঈশ্বরকে ঈশ্বরত্ব থেকে বরখাস্ত করা উচিত? কর্তব্যে চরম অবহেলা? অনেক ধর্মভীরু এই ঘটনার পরেও বলে কি জানিস, ওই বিধবার নিশ্চয়ই পূর্বজন্মে পাপ ছিল, তাই এ-জন্মে শাস্তি পাচ্ছে। প্রথমত পূর্ব জন্মটাই একটা ভুল ধারণা, আর সেই পাপে এ-জন্মে শাস্তি? যত্তসব গাঁজাখুরি ব্যাপার।

আমি ভুলে থাকতে চাইলেও আমার কিছু একটা ঘটলেই যে অনসূয়ার চিঠি আসে, সেটাও এক হিসেবে বিরক্তিকর। কেন আমি ওর জীবনবল্লভকে নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব?

সে যাই হোক, গত বছর অন্যরকম একটা ব্যাপার হল। আমি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি। আমি আর বিয়ে করব না, আমার ছেলেপুলে হবে না, কোথাও আমার অবৈধ সন্তানও নেই, এটা বিশ্বাস করতে পারিস। কিন্তু বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে।

আমার মিউজিক হ্যান্ডসদের মধ্যে একজনের নাম রামরতন ঝাঁ। সে হারমোনিয়াম বাজায়। এখনকার অনেক গানেই তো আর হারমোনিয়াম লাগে না। সিন্থেসাইজারে কাজ চলে যায়। সেইজন্য বেচারির অবস্থা ভালো নয়। অনেক দিনের পরিচয়, এদের বাড়িতে মাঝে-মাঝেই যাই। রামরতনের মেয়ে সবিতা, তাকেও ছোট অবস্থায় দেখেছি, বড় হয়ে গেল, বিয়ে করল। বিয়ের ঠিক সাড়ে তিন বছরের মাথায় তার স্বামী মারা যায় রাস্তায় ট্রাক চাপা পড়ে। সাইকেলে সে বাড়ি ফিরছিল, মাথাটা এমনভাবে পিষে যায় যে চিনতেও কষ্ট হয়েছে। সবিতা দু-বছরের একটা ছেলেকে নিয়ে ফিরে এল বাবার কাছে। ছেলেটার নাম পিন্টো, কী সুন্দর, লাভলি বাচ্চা, একদম কাঁদে না। সবসময় হাসে, চেনা-অচেনা নেই। আমার সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেল, গেলেই আংকেল আংকেল বলে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। আমারও এমন মায়া পড়ে গেল যে প্রত্যেকদিন ওকে। দেখার জন্য মনটা কেমন করে। যতই কাজ থাক, দিনে একবার ওর কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ খেলা করে আসি। সেই পিন্টোর হল টাইফয়েড, প্রচণ্ড জ্বর। অমন হাসিখুশি বাচ্চাটা বিছানায় শুয়ে। কষ্টে ছটফট করে, সে দৃশ্য সহ্য করা যায় না। এখন টাইফয়েড এমন কিছু শক্ত অসুখ নয়। ঠিক। করলুম, যেমনভাবে হোক, ওকে বাঁচাতেই হবে, রামরতন যেন টাকার জন্য চিন্তা না করে।

আমি গিয়ে ওর শিয়রের কাছে বসে থাকতুম। তবু পিন্টোর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে লাগল। হঠাৎ একসময় আমার কী মনে হল জানিস। মানুষের সংস্কার কী সাংঘাতিক প্রবল। আমার মনে হল, আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অনসূয়ার হিংসুটে ভগবান এই বাচ্চাটাকে মারতে চাইছে না তো? ঈশ্বরের অস্তিত্বে বদ্ধমূল অবিশ্বাস। তবু এরকম চিন্তা মাথায় আসে?

এমনকি, এ কথাও মনে হল, আমার অসুখের সময় অনসূয়া প্রার্থনা করে। অনসূয়া তো পিন্টোর অসুখের কথা জানে না। অনসূয়া প্রার্থনা করলে পিন্টোও সেরে উঠতে পারে? একবার অনসূয়াকে গিয়ে বলব?

আমারই যদি সব যুক্তি চলে যায়, তাহলে আমার চেয়ে যারা দুর্বল, তারা তো বারবার হার মানবেই। তোকে সত্যি কথা বলছি সুনীল, ওই সময়টায় আমার বারবার মনে পড়ত অনসূয়ার কথা। খুব ইচ্ছে করত, তার কাছে ছুটে যাই।

যাওয়া হয়নি। বলতে গেলে, আমার কোলে মাথা রেখেই পেন্টা মারা গেল। এমন ফুটফুটে সুন্দর মুখটা কী শুকনো, বিবর্ণ হয়ে গেল আমার চোখের সামনে। আমি কাঁদিনি, আমার রাগে ফেটে। পড়ার উপক্রম হয়েছিল। ডাক্তারদের ওপর ভরসা না রেখে শেষপর্যন্ত সবিতা কোন মন্দিরে যেন মাথা ঠুকতে গিয়েছিল। আমার ইচ্ছে করছিল, কালাপাহাড়ের মতন সবকটা মন্দির ভেঙে দিই। পরের দিন সবটা রাগ পড়ল অনসূয়ার ওপর। তার ভগবান আমাকে মারতে না পেরে ওইটুকু শিশুকে মেরে প্রতিশোধ নিল, সে এত কাপুরুষ? অনসূয়া জানুক, বৈষ্ণবদের আরাধ্য ঈশ্বরও কত হৃদয়হীন হতে পারে।

অভিদাকে বাধা দিয়ে আমি বললাম, কিন্তু পৃথিবীতে অনেক শিশুই যে এভাবে মরে। আমাদের ব্যক্তিগত শোক হয় ঠিকই। কিন্তু চিকিৎসা সত্বেও কে বাঁচবে আর কে বাঁচবে না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তুমিই তো বলেছ, ভগবান বলে কেউ থাকলেও মানুষের মঙ্গল বা অমঙ্গলের ব্যাপারে তার কোনও ভূমিকা নেই।

অভিদা বললেন, তা ঠিকই কিন্তু ওই যে বললুম, পিন্টোর অসুখের সময় আমি এমনই কাতর হয়ে পড়েছিলুম যে যুক্তি-টুক্তি সব চলে গিয়েছিল। আমার ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলছিল। আমি আবার ছুটে গেলাম দুরানিগঞ্জে। কিছু-কিছু বাড়ি ওখানে খালিই থাকে। আগের বাড়িটা পাওয়া গেল না, অন্য একটা বাড়িতে উঠলুম, সেটা পাহাড়ের একটু নীচে দিকে। নদীটা স্পষ্ট দেখা যায়।

অনুসূয়াদের আশ্রমে গিয়ে যে লণ্ডভণ্ড করা চলে না, এমনকি সেখানে অনসূয়ার সঙ্গে কথা বলাটাও ঠিক নয়, সেটুকু কাণ্ডজ্ঞান আমার ছিল। কিন্তু অনসূয়ার সঙ্গে দেখা করতেই হবে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকি, দ্বিতীয় দিনে অনসূয়াকে দেখা গেল, সঙ্গে আরও তিনটি মেয়ে, গান গাইতে-গাইতে যাচ্ছে। অনসূয়া এক পলক আমার দিকে তাকাল, যেন আমাকে চেনেই না।

তুই বললি, অনসূয়া আমার প্রেমে পড়েছে, এটা কী ধরনের প্রেম? একটা পাথরের মূর্তির গলায় মালা পরাবে, আমাকে দেখলে না-চেনার ভান করবে, আর দূর থেকে প্রেমপত্র লিখবে? সে রাত্রে আমার ঘুমই এল না, বিছানায় ছটফট করলাম সারারাত।

পরদিন দুপুরবেলা রাস্তায় ওদের দলটাকে দেখতে পেয়েই আমি বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে চলে এলুম। হাঁটতে লাগলুম ওদের পাশে-পাশে। রাস্তা দিয়ে তো যে-কোনও লোক যেতেই পারে। কথা বলায়ও দোষ নেই। আমি আগে অন্য দু-একটি মেয়েকে নিরীহ কৌতূহলের সুরে জিগ্যেস করলুম, আপনারা কোন আশ্রমে থাকেন? আপনাদের উদ্দেশ্য কী? আপনারা কি গরবি-দুঃখীদের সেবা করেন? এইসব। ওরা উত্তরও দিয়েছিল। তারপর একসময় অনসূয়ার পেছন-পেছন গিয়ে, চাপা গলায় বাংলায় বললুম, অনসূয়া তোমার সঙ্গে আমার দেখা করার বিশেষ দরকার। তুমি যদি আমার বাড়িতে আসতে না চাও, নদীর ধারে বড় বটগাছটার তলায় এসো, বিকেল বা সন্ধের সময়…

বিকেল হতে-না-হতেই আমি গিয়ে বসে রইলুম নদীর ধারে। এই নদীতে সকালের দিকে অনেকে স্নান করতে আসে। বিকেলের দিকে মানুষজন বেশি থাকে না, তা ছাড়া একটু-একটু শীত পড়েছে। সেদিনটা আবার আকাশ মেঘলা হয়ে গেল। শীতকালেও তো মাঝে-মাঝে বৃষ্টি হয়। কী মুশকিল, বৃষ্টি হলে অনসূয়া আসবে কী করে?

ওই দিকটায় ওপর থেকে নামবার জন্য আর একটা সরু পাকদণ্ডি পথ আছে। আমি হাঁ করে সেই দিকে চেয়ে বসে রইলুম। একটার-পর-একটা সিগারেট পোড়াচ্ছি, কারুর জন্য এরকমভাবে অপেক্ষা করে থেকেছিস কখনও? থিয়োরি অব রিলেটিভিটির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পাঁচ মিনিটকে মনে হয় এক ঘণ্টা। ঘনঘন ঘড়ি দেখছি। আমি জীবনে কক্ষনও কোনও মেয়ের জন্য ওরকমভাবে প্রতীক্ষা করিনি। আমার একটা অহমিকা আছে, আমি মেয়েদের কাছে যাই না, তারা আমার কাছে আসে। অথচ সেই আমিই…

তা ছাড়াও, মনে হচ্ছিল, অনসূয়া আসবে তো? সে তোহ্যাঁ কিংবা না কিছু বলেনি। আশ্রম থেকে একা আসার অসুবিধে থাকতে পারে। যে-কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে। এর মধ্যে কী অজুহাতে সে বেরুবে আশ্রম থেকে? কিংবা সে হয়তো আমার সঙ্গে আর দেখা করতেই চায় না। তাহলে আমি কী করব?

কতক্ষণ কেটে গেছে জানি না। আকাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। তারই মধ্যে হঠাৎ এক সময় দেখি, ওপর দিকের রাস্তায় কী যেন একটা উড়ছে। অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তো, দৃষ্টি বিভ্রম হতে পারে। সত্যিই মনে হল, একটা পাখি যেন নেমে আসছে। পাখি নয়, সে অনসূয়া নামছে দৌড়ে-দৌড়ে। আমার অত কবিত্ব নেই। তবু অনসূয়াকে পাখি বলেই মনে হতে লাগল। শীতের জন্য সে একটা চাদর জড়িয়েছে, সেই চাদরটা উড়ছে ডানার মতন। আমার মনে হল, এমন সুন্দর দৃশ্য আমি আগে কখনও দেখিনি! আমার শরীর থেকে সমস্ত রাগ চলে গেল। আমি একদৃষ্টে দেখছি সেই মেয়েটিকে।

অনসূয়া কাছে এসে ঝপ করে বসে পড়ে ব্যাকুলভাবে বলল, আপনার কী হয়েছে? কী হয়েছে বলুন? আমি প্রার্থনা করব, আমি আমার আয়ু দিয়েও…

অনসূয়া ভেবেছে, আমার শক্ত কোনও অসুখ হয়েছে, তাই আমি জীবন বাঁচাবার জন্য ওর কাছে প্রাণভিক্ষা করতে এসেছি।

আবার আমার রাগে জ্বলে ওঠা উচিত ছিল। তীক্ষ্ণব্যঙ্গবিদ্রুপে ওকে বিঁধতে পারতুম। প্রাণভিক্ষে করব আমি? অভিজিৎ সেন? ওর ভগবানের কাছে? তার আগে আমি থুতু ফেলে ডুবে মরব!

কিন্তু রাগ হল না, ওরকম কথাও এল না। একটি মেয়ে আমাকে তার আয়ু দিতে চায়। আমি ফস করে বলে ফেললুম, আমার সে সব কিছু হয়নি অনসূয়া, আমি এসেছি তোমাকে একটা বিশেষ কথা বলতে। তোমার মতন একটা নিষ্পাপ সরল মেয়ে, তাকে আমি জোর করে ছুঁয়েছি, এটা আমার অন্যায় হয়েছে। তুমি কী জন্য ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রমে যোগ দিয়েছ জানি না, তোমার আগের জীবনে কী ছিল জানি না। আমি বলতে এসেছি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!

বিশ্বাস করো সুনীল, এটা বলে ফেলার আগের মুহূর্তেও আমি এটা ভাবিনি। জীবনে আর কখনও বিয়ে করব না, এরকম আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল। কিন্তু অনসূয়াকে দেখে কী যেন হয়ে গেল, আমি বদলে গেলুম, আমি ওর হাত চেপে ধরে বললুম, অনসূয়া, আমি তোমাকে চাই। আমি তোমাকে যথাসাধ্য সুখী করার চেষ্টা করব। অন্যরকম জীবনযাপন করব, তুমি যদি মুম্বই শহরে না থাকতে চাও…

অনসূয়ার মুখখানা রক্তশূন্য বিবর্ণ হয়ে গেল। আস্তে-আস্তে বলল, এ কী বলছেন আপনি? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।

আমি বললুম, পাথরের মূর্তির সঙ্গে সত্যি কারুর বিয়ে হতে পারে? ওর কোনও মূল্য নেই! অনেক সন্ন্যাসীও তো সংসার জীবনে ফিরে আসে। তুমি ফিরে এসো!

অনসূয়া বলল, তা কখনও হয়? তাতে আপনার বিপদ বাড়বে। না, না এমন কথা উচ্চারণও করবেন না। ছিছি-ছিছি। আমি যাই, চলে যাই!

অনসূয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললুম, তুমি আমার বিপদের কথা ভাবছ? অনসূয়া তোমার ঠাকুর আমাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। এভাবে তোমার জীবনটা নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। তোমাকে পেলে আমার জীবনটাও সুন্দর হবে।

অনসূয়া কোনও কথাই শুনতে চায় না, সে আবার কান্না শুরু করল। চলে যেতে চায়, আমার হাত ছাড়িয়ে যেতে পারছে না। একসময় আমাকে হাল ছেড়ে দিতে হল, কিন্তু তখনও ওকে পাওয়ার ইচ্ছে আমার মধ্যে তীব্র। আমি ইচ্ছে করলে, সেইখানে ওকে জড়িয়ে ধরে ওকে ভোগ করতে পারতুম। আমি জানি, অনসূয়ার ইচ্ছে থাক বা না থাক, ও চিৎকার করে লোক জড়ো করত না। আমাকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করত না।

ওকে জোর করে বুকে টেনে আনতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সংযত হয়েছি। সেটুকু বিবেক আমার এখনও অবশিষ্ট আছে। শরীর সম্ভোগকে আমি পাপ মনে করি না, কিন্তু ও করে। কেন ওকে কষ্ট দেব? ও আমাকে ওর আয়ু দিতে চায়, কিন্তু জীবনসঙ্গিনী হতে চায় না। এ কী ধরনের ভালোবাসা?

সুযোগ থাকা সত্বেও যে আমি সেদিন ওকে ভোগ করিনি, সেজন্য কেউ কি আমাকে প্রশংসা করবে? আমি একটা অন্যায় করলে আমাকে ছিছিকরার লোক অনেক আছে। কিন্তু সেই নির্জন নদীর ধারে আমি যে অন্যায় ইচ্ছেটা দমন করতে পেরেছিলাম, সেজন্য কেউ আমাকে সাধুবাদ দেবে না।

শেষের কথা

অভিদার সঙ্গে এর পর থেকে মাঝে-মাঝে আমার যোগাযোগ হত। কলকাতায় এলে আমাকে খবর দিতেন। অনসূয়ার সম্পর্কে আমার কৌতূহল যায়নি, কিন্তু ও প্রসঙ্গ তুললেই বলতেন, দূর দূর ওর কথা আমি মন থেকে মুছে ফেলেছি।

অভিদার ক্যানসার। একজন গায়কের পক্ষে এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে?

খবরটা পড়েই আমি কেঁপে উঠেছিলাম। এই কি তবে অনসূয়ার ভগবানের চরম প্রতিশোধ? এবারে আর নিষ্কৃতি নেই!

পরক্ষণেই মনে হয়েছিল, আমারও সংস্কার যায়নি? ক্যানসার তো কত লোকেরই হয়। সেটাকে আমি ভগবানের অভিশাপ ভাবছি কেন? শ্রীরামকৃষ্ণেরও গলায় ক্যানসার হয়েছিল, তাঁকে কে অভিশাপ দেবে? জন্ম-মৃত্যুরই মতন রোগভোগ প্রাকৃতিক ব্যাপার।

সেবার অভিদা যখন কলকাতায় এলেন, তাঁকে দেখে খুবই কষ্ট হল। এর মধ্যেই রোগা হতে শুরু করেছেন, গলার আওয়াজ ফ্যাসফেসে। কিন্তু তেজ যায়নি। হাসতে-হাসতে বলেছিলেন, সে মেয়েটা আবার চিঠি লিখেছে জানিস তো? না খেয়ে-দেয়ে প্রার্থনা করছে। এবার আর ওসবে কিছু হবে না। কাকতালীয়ও হবে না। সিগারেট, বুঝলি, সিগারেটই দায়ী।

তারপর বললেন, জেনিভা যাচ্ছি, বুঝলি। অপারেশন করাব। টাকাপয়সা অনেক খরচ হবে, আমি আর টাকা নিয়ে কী করব? গলাটা না থাকলে বাঁচারই কোনও মানে হয় না। ডাক্তাররা বলছে ফিফটি-ফিফটি চান্স। হয় বাঁচব, গলা ঠিক হয়ে যাবে, নয়তো অপারেশন টেবিলেই ফুটে যাব! তোকে আমার ডায়েরিগুলো আর চিঠিপত্র পাঠিয়ে দেব। যদি কখনও সুযোগ হয়, লিখবে। আমার কথা। আমি জীবন কাটিয়েছি নিজের ইচ্ছেমতন, ভগবান-টগবানের তোয়াক্কা করিনি। জীবনের প্রতি আমার বিশ্বাস পজিটিভ। আমি মরতেও যাচ্ছি স্বেচ্ছায়!

বলতে গেলে একটা মিরাকলই ঘটিয়ে দিলেন অভিদা। জেনিভা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এলেন। অপারেশন সাকসেসফুল। ছমাস বাদে আবার রেকর্ড করালেন নতুন গান। গলা নষ্ট হয়নি। এত বড় জয়ের পরও কিন্তু বেশিদিন বাঁচেননি অভিদা।

নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে আবার শুরু করেছিলেন উদ্দাম উৎসব। আবার আগের মতন মদ্যপান ও পার্টি। একটা পার্টিতে কোনও একটি অভিনেত্রীকে অপমান করার খবরও কাগজে ছাপা হয়েছিল। আমার ধারণা, জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন অভিদা, কিন্তু অনসূয়া-প্রত্যাখ্যান তিনি সহ্য করতে পারেননি। পাথরের বিগ্রহের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জিতেছেন বারবার, তবু তার কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে পারেননি অনসূয়াকে।

মুম্বই শহর থেকে খানিকটা দূরে পানবেল নামে একটা জায়গায় একজন প্রোডিউসারের বাগানবাড়িতে মস্ত বড় পার্টি ছিল। সেখানেই আকণ্ঠ মদ্যপান করে মধ্যরাত্রের পর একা গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। গৃহস্বামী অনেক অনুরোধ করেছিল সেখানেই থেকে যেতে। কিন্তু ওই যে অভিদার জেদ? তাকে কে আটকাতে পারে!

এক জায়গায় রাস্তা সারাবার জন্য খানিকটা ঘেরা ছিল। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল একটা রোড। রোলার। অভিদা অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে সোজাসুজি ধাক্কা মারেন। গাড়ি বেশ স্পিডে ছিল, হেড অন কলিশন যাকে বলে। বেশি যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি, সঙ্গে-সঙ্গে মৃত্যু।

অভিদা বলেছিলেন, মাটিতে আঁকা আলপনার মতো নয়, তাঁর জীবন উল্কার মতন। সেরকম জীবনের এরকম পরিণতিই তো স্বাভাবিক!

এটাও কি প্রতিশোধ? অনসূয়ার বিশ্বাসের ভগবান কখনও-কখনও বামন অবতার, কখনও নৃসিংহ অবতার হয়ে দুষ্টের দমন করেছেন। তিনি রোড রোলারের রূপও ধারণ করতে পারেন কি জানি না!

অনসূয়ার সঙ্গে একবার দেখা করার খুব ইচ্ছে হয়েছিল। অভিদা যে-বারে জার্মানিতে স্টিমার থেকে বরফগলা নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন, সে-বার তার মাথার চুল সব কেটে ফেলেছিল। এবারে অভিদার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সে কী করেছে?

যাইনি। গিয়ে কী হবে? সে তো আমার প্রেমিকা নয়। আমাকে সে চিনতেই পারবে না।



সমাপ্ত-----------------------------------------------------। 

COMMENTS

My Blog List

Name

featured,64,Sad Story,1,slider,65,অন্যান্য,8,ইতিহাস,4,উপন্যাস,12,কবিতা,8,কলাম,4,গল্প,38,ছোট গল্প,15,জীবনী,7,পারিবারিক,6,প্রবন্ধ,9,প্রেম,14,বাস্তবতা,5,বিদ্রোহ,7,বিরহ,8,ভালবাসা,12,ভৌতিক,2,ভ্রমণ কাহিনী,5,ভ্রমন,1,রহস্য,8,রূপকথা,1,রোমান্টিক,5,শিশু সাহিত্য,3,সংকলন,4,সংগ্রহ,2,সংলাপ,2,সামাজিক,7,সাহিত্য,13,স্মৃতিকথা,1,হাস্যরস,1,হুমায়ূন আহমেদ,11,
ltr
item
Golpo Blog: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব)------ মধু'র ভূবণ ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসামান্য গল্প "অভিদার কথা" (৩য়--পর্ব)------ মধু'র ভূবণ ।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAvsVsU2qbYzm9p3aaaU4LefAS1Dvc9pJpfClrAmoXfMl95U5lGlqqijGVi2xiey65oe0iLj8IzWjiBBkk9Cy6VIp-wRYPHcaPHefrmdHHPXbPpF3J6X_jvOCfhi71Ip8htm1rkdHyz6-8/w640-h360/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AD%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25A5%25E0%25A6%25BE+%25E0%25A7%25A9+.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAvsVsU2qbYzm9p3aaaU4LefAS1Dvc9pJpfClrAmoXfMl95U5lGlqqijGVi2xiey65oe0iLj8IzWjiBBkk9Cy6VIp-wRYPHcaPHefrmdHHPXbPpF3J6X_jvOCfhi71Ip8htm1rkdHyz6-8/s72-w640-c-h360/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AD%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25A5%25E0%25A6%25BE+%25E0%25A7%25A9+.jpg
Golpo Blog
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_9.html
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_9.html
true
3394482685536881275
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy