প্রেমের গল্প, দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি, Golpo Blog, premer new golpo, new romantic story, latest novel story, current bangla love story, top love story,
গল্প: দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি.?
পর্ব: চতুর্থলেখক: আতিকুল ইসলাম
কান্নার আওয়াজটা নিলিমা'র কানে আসতেই নিলিমা কেমন জানি ভয়ে আতকে উঠলো। ভালো করে শোনার জন্য কান খাড়া করে বসে আছে সে। নিলিমা খেয়াল করলো আওয়াজটা রুমের বাইরের দেয়ালের দিক থেকেই আসছে। হাতে একটা ছোট টর্চলাইট নিয়ে নিলিমা একা একা রুমের বাইরে গেল দেখার জন্য আসলে কে কান্না করছে এইভাবে!
রুমের বাহিরে দেয়ালের কাছে গিয়ে নিলিমা অনুভব করলো কান্নাটা আসলে বাগানের দিক থেকে আসছে। কেমন যেন করুন সুরে কান্না করছে কেউ। নিলিমা আস্তে আস্তে বাগানের দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে দেখলো বাগানের এক কোনায় দাড়িয়ে থাকা বেলিফুল গাছটার পাশ থেকেই ভেসে আসছে সেই মায়াবি করুন কান্নার সুর।
নিলিমা ভয়ে ভয়ে ডাক দিল-
-> কে..এ... ওখানে? কে..এ...আপনি আর কাদছেন ই'বা কে..ন?
নিলিমা তার প্রশ্নের কোনো জবাব পেলোনা। নিলিমা অনেকটা ভয় পাওয়ার পরও একটু সাহস আনলো ভেতরে কৌতুহল বসত বেলিফুল গাছটার একেবারে কাছে চলে গেলো সে।
কে কাদছে সেটা দেখার চেষ্টা করলো। অবশেষে নিলিমা যা দেখলো তাতে সে হতভম্ভ হয়ে গেল।
নিলিমা দেখলো এটা সেই কালো কুচকুচে কুকুরটা। যাকে সে বার বার রাস্তায় দেখেছিলো । নিলিমা লক্ষ্য করলো কুকুরটার চোখ বেয়ে বেয়ে অঝডে পানি পড়ছে। এটা দেখে নিলিমা ভয়ে কাপতে লাগলো। কুকুরের চোখে পানি দেখে নিলিমা আরো ভয় পেয়ে গেলো। সাত-পাঁচ না ভেবে নিলিমা ওখান থেকে এক দৌড়ে রুমে ঢুকে পড়লো। রুমে এসে নিলিমা হাপাতে লাগলো।
_এ আমি কি দেখলাম? আসলেই কি এটা কোনো কুকুর? তাছাড়া আমি কি করে এত রাতে একা একা বাহিরে গেলাম? কি হচ্ছে এসব! নিলিমা'র মাথা যেনো কাজ করতে চাচ্ছেনা। শুতে যাবে ঠিক এমন সময় তার টেবিলের ওপরে একটা নীল রঙ্গের খাম দেখতে পেলো। খামের ওপরে তেমন কিছুই লিখা ছিলনা। নিলিমা খামটা হাতে তুলে নিলো। খামটা ছিড়ে একটা সাদা কাগজের টুকরো বের করল।
এতে লিখা--
-> নিলিমা তুমি আমাকে কেন ভয় পাও, নিলিমা! আমি যে তোমার সব সময়ের ছায়া সাথী। নিলিমা কেন সেদিন স্কুল থেকে বাসায় আসার পথে রাস্তায় আমাকে দেখে চিৎকার করে ওঠলে। নিলিমা আমি কোনো কুকুর নই। কুকুর বেসে আমি তোমার অতীত। সেদিন ঐ ছেলেটা তোমার সামন থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেয়াতে এখন খুব কষ্ট হচ্ছে আমার নিলিমা। একটুর জন্যও আমি তোমাকে হারাতে চাইনা। ভয় পেওনা নিলিমা। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। সময় হলে তুমি নিজেই আমাকে চিনে নিতে পারবে ।
লিখাগুলো পড়ে নিলিমা নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো -
কে সে? যাকে আদো আমি চিনতে পারছিনা। অথচ আমি নাকি তার আপনজন? সে আমার ছায়া সাথী?
এসব ভেবে নিলিমা চিন্তিত হলেও ভয়টা আর আগের মতো নেই। অনেকটাই কমে গেছে। নিলিমা এবার ঘুমোতে গেলো । বিছানায় শুতেই নিলিমা'র দু-চোখের পাতা মিলিয়ে গেল। অজানা এক স্মৃতি যেন আজ নিলিমা'র মনে বাসা বেধেছে কল্পনার রাজ্যে।
ঠিক এমন করেই নিলিমা'র দিন গুলো পার হতে থাকে। নিলিমা'র যেকোনো বিপদে কুকুরটা এসে অদৃশ্য ভাবে নিলিমাকে সাহায্য করে। এদিকে নিলিমা'র সাথে একটা ছেলের প্রেমের সম্পর্ক হয়।
ছেলেটার নাম ফারহান।
ঐযে সেই ছেলেটা যে কিনা একদিন নিলিমাকে কুকুরের কবল থেকে বাচিয়ে ছিলো। সেই থেকেই ফারহানের সাথে নিলিমা'র পরিচয় আর সম্পর্ক ।
ফারহান গরীব ঘরের সন্তান। বাবা-মা সহ দুই ভাই ও এক বোনের সংসার তাদের। ফারহান পরিবারের বড় ছেলে। তাই সংসারের বেশির ভাগ দ্বায়িত্ব ফারহানকেই নিতে হয়। ফারহান নিলিমাকে খুব ভালোবাসে। তাদের প্রেমের বয়স ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এদিকে নিলিমা'র ফাইনাল পরিক্ষা এগিয়ে এলো। নিলিমা রাত জেগে পড়াশোনা করে
কিছুদিন পরের কথা-
নিলিমা'র পরিক্ষা শুরু হলো। কখনো কখনো নিলিমা রাতের বেলা এস্যাইনমেন্ট শেষ না করেই ঘুমিয়ে পরতো আর সকাল বেলা ওঠে নিলিমা পুরো এস্যাইনমেন্ট তৈরী পেতো। নিলিমা প্রথম দিকে কিছুটা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারলো তার শোভাকাংখী আত্বাটাই হয়তো তাকে সাহায্য করছে। সময় গড়ালো দেখতে দেখতে নিলিমা'র পরিক্ষা দেয়া শেষ হলো।
নতুন বছরে পা দিলো নিলিমা। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর নিলিমা'র বাবা নিলিমাকে একদিন একটা স্মার্টফোন কিনে দিলো। আর বলল-
-> নে মা, এটা তোর পড়াশোনার কাজে আসবে।
নিলিমা মোবাইল পেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। নিলিমা আজ খুব খুশি। তার বান্ধবীদের মতো সেও এখন থেকে মোবাইলে পড়াশোনার নানা রকম সুবিধা পেতে পারবে
নিলিমা'র বাবা ফোনের পাশাপাশি একটা সিম ও কিনে দিয়েছিলো তাকে।
কয়েকদিন পর...
একদিন সকাল বেলা একটা অচেনা নাম্বারে কল আসল নিলিমা'র মোবাইলে । নিলিমা কল রিসিভ করতেই দেখলো ফারহান।
-> কেমন আছ নিলিমা ?
-> ভালো। তুমি ? তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
-> মনের টান থাকলে সব কিছুই পাওয়া যায়।
অপর পাশ থেকে ফারহান জবাব দিলো।
নিলিমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
ফারহান বললো,
-> নিলিমা তারাতারি স্কুলে এসো আজকে। দু-জন মিলে একসাথে ঘুরতে যাবো।
-> আচ্ছা ঠিক আছে।
নিলিমা ফোন রেখে আনন্দে যেন নাচতে ইচ্ছে করছে তার। এখন থেকে ফারহানের সাথে সব সময় কথা বলতে পারবে সে।
নিলিমা তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে পরলো। রাস্তায় নামতেই নিলিমা দেখলো ফারহান দাড়িয়ে আছে। একটু দুরেই জামরুল গাছটার নিচে বসে আছে কুকুরটা। চেয়ে আছে নিলিমা'র দিকে।
ফারহান কুকুরটাকে দেখতে পায়নি। নিলিমাও কখনো
ফারহানকে বলেনি এই বিষয়ে। নিলিমা ফারহানের পাশাপাশি হয়ে হাটতে লাগলো। গল্প করতে করতে দু-জন স্কুলের পাশের পুরনো দেয়ালটার ওপাশে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষন বাদেই নিলিমা'র বান্ধবীরা আসলো। বলল নিলিমা এবার চল ক্লাস শুরু হতে চলল।
হুম চল!
নিলিমা ক্লাসে গেল আর ফারহান তার কাজে চলে গেলো।
বিকেল বেলা স্কুল সেরে নিলিমা বাসায় ফিরলো। ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বাগানের দিকে গেল নিলিমা। একটু পরেই মোবাইলে রিং বেজে ওঠলো। নিলিমা দেখলো ফারহান ফোন করেছে। নিলিমা ফোন রিসিভ করতেই -
-> কি করছো নিলিমা? নিশ্চয় আমার কথা মনে পরছে তোমার?
নিলিমা মৃদু হাসলো
->হাসছো যে.??
->না এমনিই!
->বুঝতে পারছি
->কি বুঝলে..?
->তোমাকে কেন বলবো...
->তাইতো! আমাকে কেন বলবে । আচ্ছা রাখছি তাহলে।
->তাহলে চলে আসবো..!
->বোকা একটা!
->হুম! তোমার জন্য হয়েছি।
দুজন কথা বলতেই থাকে এদিকে সন্ধ্যা নেমে এলো।
এমনি ভাবেই পার হয়ে গেল আরো একটি বছর। নিলিমা ssc পরিক্ষা দিলো।
বেশ ভালো রেজাল্ট করলো নিলিমা। স্কুলে প্রত্যেকের মুখে মুখে যেন ছড়িয়ে পড়লো নিলিমা'র নাম।
নিলিমা'র অনেক স্বপ্ন। সে পড়াশোনা করে আরো অনেক বড় হবে।
ধন্যবাদান্তেঃ-(LOVE BLOG)
মওদুদ আহমেদ মধু
COMMENTS