রাশিয়া ভ্রমনের ঐতিহাসিক প্রবন্ধ । @Golpo Blog

SHARE:

bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,


                    রাশিয়া ভ্রমনের ঐতিহাসিক প্রবন্ধ

                                      ভ্রমন ও লেখাঃ---শামীম হাসান শাকিল


রাশিয়া ভ্রমনের ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ।  @Golpo Blog

কখনো ভাবিনি রাশিয়া যাবো।  জানতে পারলাম যে, ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভিসা ফ্রি এক্সেস দিচ্ছে রাশিয়া। ব্যাস। রাশিয়া যাওয়ার সুযোগ মিস করলাম না। অনলাইনে একটা ম্যাচের টিকিট কেটে ফেললাম। তারপর ইলেক্টিক ফ্যান আইডি নিয়ে নিলাম। ব্যাস। আর কিছুই লাগলো না। এয়ার এরাবিয়াতে রিটার্ন টিকিট কাটলাম পেওনিয়ার কার্ড দিয়ে।

২৩ তারিখে রওনা দিলাম রাশিয়ার উদ্দেশ্যে। এই প্রথমবারের মতো প্রয়োরিটি পাস নিয়ে ভিআইপি লাইন্জ ব্যবহার করার সুবিধা পেলাম। সে এক ভিআইপি অনুভূতি। রাত ৪ টায় ফ্লাইট ছিলো। সেজন্য ১২ টায় এয়ারপোর্টে ঢুকে বলাকা লাউঞ্জে অপেক্ষা করলাম। খেলাম হরেক রকম খাবার ও। সবকিছুই সিগনেচার কার্ড এর বদৌলতে ফ্রি ফ্রি পেলাম। ব্যাপারটা খুবই মজার ছিলো।

আরও পড়ুন 👇👇

১) কি আছে একজন নারীর শরীরে ?
২) কীভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা যায়?
৩) বউ যখন অবাধ্য হবে তখন কী করা উচিত?
৪) হিন্দুরা যদি পর্দা করতো, তাহলে কী হতো?
৫) পৃথিবীতে সবচাইতে সত্য কথা কোনগুলো ?

রাশিয়া যাওয়ার বিমান টিকিট ভালোই দাম। ৭০ হাজার টাকা লাগার কথা রিটার্ন টিকিট সহ। যদি কম পান তাহলে আপনার ভাগ্য ভালো। ফ্লেক্সি প্লান নিলে আরো বেশি খরচ পড়বে। ফ্লেক্সি প্লান নিলে আপনি আপনার টিকিট ১ বার মোডিফাই করতে পারবেন ফ্রিতে। এই হলো ফ্লেক্সি প্লানের সুবিধা। আপনি আপনার ইচ্ছামতো একটা কেটে নিবেন। এয়ার এরাবিয়াই সবচেয়ে কম দামের টিকিট সেল করে মস্কো যাওয়ার জন্য। অন্য এয়ারগুলির ফ্লাইট টাইম ও বেশি আর দাম ও বেশি।

সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটো গল্প--- "ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী"

প্রায় ৫ ঘন্টা আকাশে উড়ার পর সারজাহ এয়ারপোর্টে নামলাম। সেখানে ৩ ঘন্টা ট্রনজিট ছিলো। খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। বাই দা ওয়ে, এয়ার এরাবিয়া যথেষ্ট ছেচড়া খাবারদাবার এর বেলায়। তারা আপনাকে ফ্রি মিল দিবে কিন্তু পানি আপনাকে কিনে খেতে হবে ১০০ রুবল দিয়ে। 

বেশ ভালেই দাম নেয় ওরা সামান্য পানির। একদম থার্ডক্লাস একটা সিষ্টেম। যাই হোক, আমরা পূনরায় রওনা দিলাম রাশিয়ার শ্রীমাতইয়েভু ইয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সাড়ে চার ঘন্টা উড়ার পর পৌছালাম রাশিয়ায়। ইমিগ্রেশনে তেমন ঝামেলা করেনি। মাত্র ১ মিনিটে ইমিগ্রেশন শেষ। একটা সিমকার্ড কিনলাম। তারপর ৫০০ ডলার রুবলে কনভার্ট করলাম। সেখানে ১০,০০০ রুবল নির্ঘাত ধরা খেলাম। কারন আমি বুঝতে পারিনি যে, এয়ারপোর্টের রেট এতো কম দিবে।

রাশিয়া ভ্রমন গাইড ও আমার রাশিয়া ভ্রমনের গল্প1


যাইহোক, এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম। আহা! কি আবহাওয়া। হালকা শীত শীত করতেছে। বাতাসে ভ্যাপসা গরমের ছাপ নেই। খুব সম্ভবত ২২ ডিগ্রি তাপমাত্র হবে। আমি হোটেলের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। হোটেলে গিয়ে পৌছালাম উবারে করে। 

কিন্তু কোনভাবেই হোটেলে কিভাবে ঢুকবো তা বুঝতে পারছিলাম না। আমি অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কোন উপায় পেলাম না। কারন অন্যান্য দেশের নিয়ম অনুযায়ী এখানে হোটেলে রিসিপশনিষ্ট থাকে না।

 থাকলেও খুব কম। রুমগুলি বাহিরে থেকে একটু ভিন্নভাবে ডিজাইন করা। অত্যন্ত সিকিওরিটি ওয়ালা এই ফ্লাটে আপনাকে ঢুকতে হলে প্রথমে আপনাকে আপনার হোটেলের নাম্বারে কল দিতে হবে। 

তারা আপনাকে একটা পাসকোড দিবে বা আপনাকে একটা নিয়ম বলে দিবে। এক এক জায়গায় নিয়ম আলাদা। তারপর গেইটে আপনাকে সেই পাসকোড চেপে গেট খুলতে হবে। গেটগুলি এমনভাবে বানানো যেনো একটু বাতাস ও না ঢুকতে পারে । 

পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, শীতপ্রধান দেশ হবার কারনে এখানকার বিল্ডিংগুলি এমনভাবে বানানো আর তাদের দরজা এমনভাবে বানানো।

হোটেলে গেলাম ও রেষ্ট নিলাম। একটু ঘুমিয়ে নিলাম কারন ঘুম খুব একটা হয়নি। বিকালে বের হলাম। বিকাল ৬ টা। একদম দুপুরের মতো রোদ। প্রথমেই অবাক হলাম যে, বাসার পাশেই একটা খেলার পার্ক। তাও সাধারন নয়। ঘুব গোছানো একটা পার্ক। 

পরে দেখলাম যে, প্রত্যেক বিল্ডিং প্রজেক্ট এর সামনেই একটি করে খোলা পার্ক। তাও অত্যাধুনিক সকল সুবিধা সংবলিত। বাচ্চারা খেলা করছে।

ইউরোপের মাটিতে প্রথম পা রাখার পরে মনে মনে একটা দারুন অনুভূতি কাজ করতেছিলো। এতো দারুন সব ব্যাপার কিভাবে সম্ভব! এর আগে অনেকগুলি দেশ ঘুরার কারনে আমি খুব বেশি অবাক হইনি। আমার মুদ্ধতা তখনো বেশি হয়ে উঠেনি। 

কারন আমি বুঝতেই পারিনি আমি অত্যন্ত ভদ্র ও ক্ষমতাধর একটা রাষ্ট্রে ভ্রমনে এসেছি।

কিন্তু প্রথম সমস্যা হলো ভাষা! এখানে তারা ইংরেজী এতোই কম বুঝে যে, তারা ইয়েস, নো ও বুঝে না। একেবারেই না বললেই চলে। তাই গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে রাশিয়াতে ট্রন্সফার করে কথা বুঝাতে হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি দারুন ও নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথমদিন ঘুরলাম। 

মোটোমুটিভাবে নিয়মকানূনের সাথে অভ্যস্ত হচ্ছি কিন্তু মস্কো শহরের প্রধান সৌন্দর্য তখনো বুঝতে পারিনি কারন আমি তখনও শুধুমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে উবার ব্যবহার করছিলাম।

তার পরের দিন, ভেদানখা নামের একটা জায়গায় গেলাম। আমার মুগ্ধতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকটা স্থাপনা। ইশ! এতা বড় ও এতো সুবিশাল স্থাপনা আমি ভাবতেই পারছি না। 

তাও সকল নাগরিক সুবিধা সম্বলিত। প্রশ্বস্ত রাস্তা ও দারুন দারুন সব ফুলের ঘ্রানে আমার নাকে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতেছিলো। অনেকক্ষন ঘুরলাম। স্বর্নের মতো দেখতে পদার্থ দিয়ে একটি বড় মূর্তির স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। 

আমার শুধু হাটতেই ভালো লাগে রাশিয়ার রাস্তায়। কারন তাদের রাস্তায় রয়েছে সর্বাধুনিক সকল ব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বে এতো ভালো নাগরিক সুবিধা ভাবলেই ভালো লাগে আমার।

রাশিয়া ভ্রমন গাইড ও আমার রাশিয়া ভ্রমনের গল্প2


তারপর কয়েকদিন রেষ্ট নিলাম। তখনো মেট্রোতে যাইনি। কারন মেট্রোর গেটগুলি এতোই কারুকার্য সংবলিত যে, আমার মনে হচ্ছিলো কোনো রাজার বাড়ি হয়তো। তাই ভয়ে আমি মেট্রোতে যাইনি। বুঝতামও না যে, আমি মস্কো শহরের সবচেয়ে অবাক করার মতো জিনিসটি মিস করতেছি। তারপর একদিন আমার প্রিয় শিমুল ভাই জানতে চাইলো আমি মেট্রো ব্যবহার করি কিনা। শিমুল ভাই হলো রাশিয়ার প্রবাসী। তিনি ৪ বছর ধরে মস্কোতে থাকেন। 

মূলত তিনিই এখানে আসার জন্য সাহস দিয়েছেন। আমার কাছাকাছি উপজেলায় তার দেশের বাড়ি। শিমুল ভাই, সোহান ভাই, মাসুম ভাই, নিপু মামারা ছিলো বলেই হয়তো রাশিয়া ভ্রমনটি আরো মজাদার ছিলো। এটি পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমি শিমুল ভাইকে বললাম যে, নাহ! আমি মেট্রোতে যাই না। তিনি আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন।

                                                                               সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটো গল্প--- "ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী"

তারপর আমি এক আশ্চর্য জিনিস দেখলাম। সাহস করে ইয়া বড় কারুকাজওয়ালা একটা বিল্ডিংয়ে ঢুকলাম। সেখান থেকে ট্রইকা কার্ড নিলাম। এটি হলো মেট্রোতে পেমেন্ট দেওয়ার জন্য এক ধরনের কার্ড। ৫০০ রুবলের মতো রিচার্জ করলাম। তার পর সবাইকে অনুসরন করে হেটে চললাম। অনেক বড় লিফট দিয়ে মাটির অনেক গভীরে যাচ্ছি। আমি খুব ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম।

 এতো নীচে কেনো? অনেক ভাবনার পর প্রায় ১০ তলার মতো নিচে গেলাম ইয়া বড় এক লিফট দিয়ে। শত শত মানুষ নিয়ে লিফটি দিব্বি চলে যাচ্ছে। তার পর মস্কো সিটির ম্যাপ দেখে লাইনের দাগ মিলিয়ে ট্রেইনে উঠলাম। আমার কল্পনাকেও হার মানেয়েছে এই মেট্রো সিষ্টেম।

রাশিয়া ভ্রমন গাইড ও আমার রাশিয়া ভ্রমনের গল্প3

আমি আজও ভেবে শেষ করতে পারিনা তারা ঠিক কিভাবে এতো দারুন একটি জিনিস বানালো। তাই বলে এতো দারুন হতে হবে? কারন মেট্রোর উপর দিয়ে কিছুই বুঝা যায় না। সবকিছু সাধারন শহরের মতো। এ যেনো শহরের নীচে আরো একটা দারুন শহর। মেট্রোতে একবার উঠলে ৫৬ রুবল খরচ হয়। সে আপনি মস্কোর যেখানেই যান না কেনো। 

এতো ভালো ট্রান্সপোর্ট সিষ্টেম হতে পারে এটা পুতিনের দেশে না আসলে আজ্নাই থেকে যেতো। তারমধ্যের ট্রেনগুলি ৩০ সেকেন্ড পর পর আসছে। সর্বোচ্চ আড়াই মিনিট পর পর ট্রেন আসতেই আছে, আসতেই আছে। তাও এক একটা ট্রেন প্রায় কোয়াটার কিলোমিটারের মতো। পুরা মাথা নষ্ট ব্যাপার।

তারপর গেলাম এতো এক অভূতপূর্ব সূন্দর জায়গাতে। সারিতস্নু নামে এক জায়গাতে গিয়ে আমার স্বর্গের প্রতি আকাংখা আরো বেড়ে গেলো। ভাবলাম, যদি পৃথিবীই এতো সুন্দর হয় তাহলে স্বর্গ কতই না সুন্দর হবে। আমি অনেকটা পাগলের মতো হাটতে লাগলাম। কি সুন্দর আর মন মাতানো জায়গা। আমি প্রেমে পড়ছি প্রতি কদমে কদমে। এতো দারুন আবহাওয়াতে এতো রোমান্টিক আবহাওয়ার সময় কাটিয়েছি যে, মনে হয়েছে, এখানে একা এসে জীবনের ভুলটি করে ফেলেছি। পাশে তো একটা রাজরানীও থাকতে পারতো। কিন্তু আমার জীবনে হয়তো এতো সুখ সহ্য হতো না। থাক, এইসব নাই বলি। মুডটা নষ্ট হয়ে যাবে।

পানির ফোয়ারা, সাড়ি সাড়ি সবুজ গাছপালা ও সবুজ ঘাস। অসাধারন রোমান্টিক মিউজিক। আর মন ভোলানো আবহাওয়া। আমার ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছিলো কিন্তু আমি প্রান ভরে শ্বাস নিচ্ছিলাম। ফুসফুস অনেক দিন ধরে প্রানবন্ত বিশুদ্ব বাতাস পায় না। তাই শ্বাস নিতে নিতে হাপিয়ে গেছি প্রায়। এ জায়গার বর্ননা দিতে হলে আমাকে নতুন কোন পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতার বিশেষন আবিষ্কার করতে হবে। লিখে হয়তো ১ ভাগ ও প্রকাশ করতে পারবো না। পুরু পার্কটা ঘুড়ে বেড়ালাম। একটা জুস হাতে নিয়ে মনে হচ্ছিলো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। ট্যাং ট্যাং করতে করতে পুরু অসাধারন পার্কটি ঘুরে শেষ করলাম। আসার সময় দেখলাম রাশিয়ান ভাইয়ারা ও আপুরা পার্কেই খোলা জায়গায় ভালোবাসাবাসি করতেছে। কেউ তাকাচ্ছেও না। এই বিষয়টা বেশ দারুন। আমার তো হিংসা হয় একটু হলেও তাই না? কষ্ঠের ইমু হবে। খুব কষ্টের ইমু।

Russia Tour


আমি ছিলাম Comsomolskaya নামক মেট্রোর সাথে Kazansky Vakzal এর কাছাকাছি হোষ্টেল রুস এ। খুব দারুন একটি যায়গা। সাথেই একটি দারুন রেষ্টুরেন্ট ছিলো। আমি সবসময় আমার মন মতো খাবার খেতাম। মাঝে মাঝে রুম থেকে বাহির হয়ে বাহিরে ঘুরতাম। আসলে, আবহাওয়া এতোই দারুন ছিলো যে, জাষ্ট রুম থেকে বের হলেই মনে হতো পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছি। হালকা শীত শীত লাগতো। প্রখর রোদেও রাস্তা দিয়ে হাটলে মনে হতো যেনো স্বপ্নের কোন রাস্তায় হাটছি। ধুলাময়লা যেনো এখানে স্বপ্ন, যা খুজে পাওয়া দুষ্কর। তারপরেও ৫ মিনিট পর পর পানির গাড়ি সাড়াক্ষন রাস্তায় পানি দিয়ে যাচ্ছে। এগুলি দেখে অব্যশ্য আমার দেশের কথা মনে হয়েছিলো।

আরও পড়ুন 👇👇

১) কি আছে একজন নারীর শরীরে ?
২) কীভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা যায়?
৩) বউ যখন অবাধ্য হবে তখন কী করা উচিত?
৪) হিন্দুরা যদি পর্দা করতো, তাহলে কী হতো?
৫) পৃথিবীতে সবচাইতে সত্য কথা কোনগুলো ?

সবচেয়ে উপভোগ্য ব্যাপার ছিলো প্রতি খেলার সময় মস্কো লুজকিনি ষ্টেডিয়ামের পাশের ফিফা অফিসিয়াল ফানফেষ্টে খেলা দেখা। আমার যায়গা থেকে একটি মেট্রো দিয়ে ফানফেষ্টে যাওয়া যেতো। সবচেয়ে ভালো লাগতো হেটে হেটে ফানফেষ্ট যাওয়া। কারন মেট্রো থেকে নামতেই চোখে পড়তো মস্কোর ন্যাচারাল রিজার্ভ। এখানে আসলেই যেনো শরীরে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হতো। প্রচুর গাছপালা আর আধুনিক সকল ব্যবস্থা। হাজার হাজার দর্শক পাহাড়ের উপর দিয়ে যেতাম ফানফেষ্টে। আমি প্রতিটা সেকেন্ড উপভোগ করতাম। জানি এতো সুন্দর পরিবেশ সহজে দেখার সৌভাগ্য হবে না।


সত্যি বলতে আমি ষ্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখিনি। কারন এমনিতে আমি টিকিট পাইনি। তারপর আবার যেটি পেয়েছি সেটি হলো মস্কো থেকে ৬ ঘন্টার ট্রেন জার্নি। তাই ভালো লাগছিলো না। তবে ফানফেষ্টে খেলা দেখাই বেশি সুবিধা মনে হয়েছে আমার কাছে। পানামা ও তিউনিশিয়ার টিকিটটি যত্ন করে রেখে দিয়েছি স্মৃতি হিসাবে। ফানফেষ্ট হলো এমন একটি যায়গা যেখানে ফিফা ৬ টি বিশাল পর্দায় সুবিশাল জায়গা নিয়ে খেলা দেখার আয়োজন করে। এখানে না গেলে বুঝার কোন উপায় নেই এখানে কতো ভালোলাগা থাকতে পারে। আবার ও বলছি, আবহাওয়া সবকিছুকে অধিকতর সুন্দর করে তুলেছিলো। আমি মস্কোর বাহিরে কোন শহরে যাইনি। আলসেমি লাগতেছিলো। কারন আমি সবকিছুই এতোই উপভোগ করছিলাম যে, আমার মনে হয়নি অন্য কোথায় যেতে হবে। তবে সেন্ট পিটার্সবার্গ ও সচি অনেক সুন্দর জায়গা। 

আমি ইচ্ছা করেই যাইনি।


ভ্রমন নিয়ে আমার ফেসবুকে যে সকল ষ্টাটাস দিয়েছিলাম তা হলোঃ

২৩-০৬-২০১৮ তারিখে রাশিয়া পৌছিয়ে ৩ দিন ফেসবুকে কিছুই শেয়ার করিনি। কারন ৬ টা দেশে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা থাকার পরেও এখানে এসে রীতিমত ধাক্কা খেয়ে গেলাম। নিয়মনীতি বুঝে উঠতে পারছি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানকার লোকজন ইংরেজী বুঝে না। ইয়েস, নো ও বুঝে না। আরেহ ভাই, ফা** মানেও বুঝে না।


😀 কি অদ্ভুত একটা দেশে আসলাম। ভাষাগত সমস্যা ছাড়া আর সবকিছু দারুন। মনে হচ্ছে, বাস্তবে হলিউড মুভি দেখছি।


কিছু প্রাথমিক তথ্য ও ছবি দিয়ে দেই। ভ্রমন শেষে বিস্তারিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
রাশিয়াঃ
- পৃথিবীতে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় দেশ। যা বাংলাদেশ থেকে ১১৫ গুন বড়। প্রধান ধর্মঃ খ্রিষ্টান।
- ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র দিলাম। শুধু পাসপোর্ট টা রেখে বাকী সব ফেরত দিয়ে পাসপোর্টে সিল মেরে দিলো। ইউরোপের একটা দেশ, ছবিটা পর্যন্ত মিলিয়ে দেখেনি, নাম ও জিজ্ঞাসা করেনি। মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ইমিগ্রেশন শেষ। অবাক হবার মতো ব্যাপার বটে। 
- এই দেশে এয়ারপোর্ট ছাড়া আর কোথাও ইংরেজী সাইনবোর্ড পর্যন্ত দেখি নাই।

 ওকে বললে বুঝে। ইয়েস, নো পর্যন্ত বুঝে না এখানকার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ (একান্তই আমার নিজস্ব মতামত) । তাদের একটাই ভাষা, রাশিয়ান! গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে হয়। 
- দালানকোঠা দারুন কারুকার্য ও ঐতিহ্য সংবলিত। রাশিয়া একটি কালচারাল জাতি। খুবই ভদ্র ও মার্জিত। 
- শুনেছি বছরের অর্ধেক সময় তাপমাত্রা মাইনাসে থাকে। 

তবে এখন সামার টাইম। যথেষ্ট ভালো তাপমাত্রা। গড়ে ১৮ ডিগ্রি। এ তাপমাত্রাটি আমার বেশ ভালো লাগছে। 
- রাশিয়াতে রাস্তা রিপেয়ার করা শুরু হয় রাস্তার সাদা সাদা দাগগুলি অদৃশ্য হলেই। মানে হলো, রাস্তার জেব্রা ক্রসিং টাইপের দাগগুলি বুঝা না গেলেই রাস্তা রিপেয়ার করতে হবে বলে বিবেচনা করা হয়। 
- উন্নয়ন কি জিনিস, ডিজিটাল কি জিনিস, নাগরিক সুবিধা কি জিনিস, এইগুলি রাশিয়া থেকে চাইলে উগান্ডার নেতারা শিখে যেতে পারে।


এক হাইব্রীড মগজওয়ালা নাকি বলেছিলো, এই উপগ্রহের কোন দেশ জানি আগামী কত সালের মধ্যেই ইউরোপ, আমেরিকা হয়ে যাবে? আমার ফ্রেন্ডলিষ্টের কোন ডেভেলাপার ভাই একটা অনলাইন কনভার্টার বানিয়ে দিয়েন। মানে হলো, উগান্ডা টু ইউরোপ কনভার্টার।
এ ছাড়া এ ধরনের আশা করাও মিথ্যে দুঃস্বপ্ন। মিথ্যে আবেগ দিয়ে বলতে না পারায় আমি দুঃখিত।
আশাকরি আরো বিস্তারিত গাইড নিয়ে পরে কোন একদিন হাজির হবো। ধন্যবাদ



রাশিয়া নিয়ে কিছু মজার তথ্য আমার ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। তা দিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সুবিধার্থে।


১। রাশিয়াতে মাত্র ৫ ঘন্টার জন্য রাত হয়। প্রথম দিন রাত ৮ টায় সূর্য দেখেও মনে হচ্ছিলো ভুতুড়ে কিছু দেখছি। পরে জানতে পারলাম যে, রাশিয়াতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সূর্য ডুবে। আর সূর্য উঠে রাত সাড়ে তিনটার দিকে।

  😀
২। রাশিয়ার মস্কোতে ট্রান্সপোর্টেশন সিষ্টেম যে কারো কল্পনাকেও হার মানাবে। এ যেনো শহরের নীচে আরো একটা অবিকল শহর। সবচেয়ে গভীর মেট্রো ষ্টেশনটি স্বাভাবিক মাটি থেকে প্রায় ৩০ তলা বিল্ডিং এর সমপরিমান নীচে দিয়ে বানানো হয়েছে। লিফট দিয়ে নামতেই আমার গা শিউরে উঠে। পুরা থ্রীলার একটা ব্যাপার। 

 😮
৩। বাংলাদেশের সিলেট থেকে হাজারে হাজারে বাঙ্গালী ভাইয়েরা খেলা দেখতে এসেছে। তাদের বেশিরভাগের উদ্দেশ্য খেলা দেখে এখানে থেকে যাওয়া। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না যে, তারা এখানে ২৫ তারিখের পর থাকতে পারবে যদি কিনা রাশিয়ান সরকার নমনীয় না হয়। মস্কো শহরটি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ভেতরে পরিচালিত হয়।


৪। ব্লাদিমির পুতিন হলো এখানকার প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আজও পর্যন্ত এখানে তার কোন ছবি পর্যন্ত দেখিনি। মস্কো শহরের পার্ক ছাড়া কোথাও মাটি দেখিনি অথচ এখানে কোনো উন্নয়নের সাইনবোর্ড নাই। নাই কোন নেতাপেতার ছবিও।


৫। এখানকার পুলিশ ইংরেজী বুঝে না। তাও এদের দেখলে মনে প্রশান্তি লাগে। কারন পাশে পুলিশ থাকা মানে আমি শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু আফসোস, আমার নিজের দেশে এমনটা কোনদিন ভাবতে পারিনি।


খরচপাতি:

খুব বেশিও না। তবে খুব কমও না। কারন ইউরোপ বলে কথা। থাকার খরচ খুব বেশি। এভারেজ হোটেল ১২ হাজার টাকা। তবে ভালো ভালো হোষ্টেল আছে। যা ১,২০০ টাকা বা ১৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। খুব ভালোই। খাবার দাবার ৮০০ টাকা প্রতি মিল। এখানে ম্যাকডোনাল্ড পাওয়া যায়। আমার খুব পছন্দের খাবার। বিয়ার ১০০ রুবল থেকে ৪০০ রুবল হলেই দারুন দারুন সব বিয়ার।

 সবমিলিয়ে ১৫ দিনে ২ লক্ষাধিক খরচ হয়েছে আমার শপিং সহ। আমি ফিফার ২ টা অফিসিয়াল বল কিনে নিয়ে এসেছিলাম। তবে আপনি বাজেট ভ্রমনে অভ্যস্ত হলে হয়তো দেড় লাখের মধ্যেই ভ্রমন দারুনভাবে শেষ করা সম্ভব।

স্মৃতি হিসাবে ২ টা বল আর কিছু দারুন চকলেট নিয়ে এসেছি। এখনো অফিসে বসে বসে চুইঙ্গাম চাবালে রাশিয়ার স্মৃতি মনে হয়।

আরো একটি জিনিস খুব ভালো লেগেছে আর তা হলো, এখানকার মেয়েরা খুব দারুনভাবে সিগারেট খায়। খুব আদুরে লাগে এই জিনিসটা দেখতে। আর মজার ব্যাপার হলো তারা সবাই সিগারেট না থাকলে খুজে খুজে সিগারেট খায়। খুব মজা পেয়েছি এটি দেখে। 

আর হলিউডের নায়কের মতো সবাই দেখতে। পুরু দেশটাই আসলে হলিউড হলিউড লাগে আমার কাছে। ১৫ টা দিন যেনো স্বপ্নে কাটিয়ে দিয়েছি। যদি কোনদিন সুযোগ হয় তাহলে আবার আসবো এই স্বপ্নের জায়গায়। এখানকার সাথে আমার আত্নার সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গিয়েছে।


(বিঃ দ্রঃ---- এই রচনাটি রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ের লেখা)




COMMENTS

My Blog List

Name

featured,64,Sad Story,1,slider,65,অন্যান্য,8,ইতিহাস,4,উপন্যাস,12,কবিতা,8,কলাম,4,গল্প,38,ছোট গল্প,15,জীবনী,7,পারিবারিক,6,প্রবন্ধ,9,প্রেম,14,বাস্তবতা,5,বিদ্রোহ,7,বিরহ,8,ভালবাসা,12,ভৌতিক,2,ভ্রমণ কাহিনী,5,ভ্রমন,1,রহস্য,8,রূপকথা,1,রোমান্টিক,5,শিশু সাহিত্য,3,সংকলন,4,সংগ্রহ,2,সংলাপ,2,সামাজিক,7,সাহিত্য,13,স্মৃতিকথা,1,হাস্যরস,1,হুমায়ূন আহমেদ,11,
ltr
item
Golpo Blog: রাশিয়া ভ্রমনের ঐতিহাসিক প্রবন্ধ । @Golpo Blog
রাশিয়া ভ্রমনের ঐতিহাসিক প্রবন্ধ । @Golpo Blog
bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhRwiktRTQAiZvX5PhcEfCFt-fIYOaBVXv4pp5IU13FibUvdc4k_Xc8k-P2tzAmiIaN-CSqF7DvMiYsjUceqdgE5YDtR1EIQkEPhqKb6qer-Nn22NMQbjVeWgYevybibhkBxeSODsznyOl_/s16000/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25BE+%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25A8+.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhRwiktRTQAiZvX5PhcEfCFt-fIYOaBVXv4pp5IU13FibUvdc4k_Xc8k-P2tzAmiIaN-CSqF7DvMiYsjUceqdgE5YDtR1EIQkEPhqKb6qer-Nn22NMQbjVeWgYevybibhkBxeSODsznyOl_/s72-c/%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A3%252C+%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25BE+%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25A8+.jpg
Golpo Blog
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/vroomon.html
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/vroomon.html
true
3394482685536881275
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy