দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি?, বাসা থেকে রাস্তায় নেমে গেছে নিলিমা, নিলিমা'র দিকে মায়াবি এক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে,
গল্প: দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি ?
পর্ব: দ্বিতীয় ।লেখক: আতিকুল ইসলাম
দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি? (প্রথম পর্ব)
বাসা থেকে রাস্তায় নেমে গেছে নিলিমা। আজ তার কোনো বন্ধবী আসেনি তাকে নিতে। নিলিমা মনে মনে ভাবছে আজ ওদের কি হল! কেন এরা কেউ আজ এলোনা? ক্ষানিক পরেই নিলিমা'র চোখ পরলো রাস্তার পাশে থাকা ছোট জামরুল গাছটার দিকে। নিলিমা হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সেদিকে। জামরুল গাছটার নিচে আর কেউ নয় - বসা ছিলো সেই কালো কুচকুচে কুকুরটা।
নিলিমা'র দিকে মায়াবি এক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। নিলিমা'র কোনো কিছুর খেয়াল ছিলোনা তখন। "থ" হয়ে শুধু কুকুরটার দিকে চেয়ে রইল নিলিমা। এমন সময় তার থেকে একটু দুরে একসাথে কতগুলো কণ্ঠের আওয়াজ পেলো নিলিমা। চট করে ঘুরে তাকালো সেদিকে । দেখলো তার বান্ধবীরা আসছে।
এরই মধ্যে তার বান্ধবী শিখা এসে বলল-
-> কিরে নিলিমা আজ এত সকাল সকাল বেরিয়ে পরলি যে?
তার বান্ধবী ইভা এসে বলল
-> নিলিমা তোর কি কিছু হয়েছে?
নিলিমা কিছু বললো না। পুনরায় জামরুল গাছটার দিকে তাকালো। নিলিমা লক্ষ্য করলো সেখানে বসে থাকা কুকুরটা নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
নিলিমা'র বান্ধবীরা বলল,
-> তুই আজ এত তারাতারি কেন এলিরে নিলিমা ?
-> কই নাতো। আমি তো ঠিক সময়েই এসেছি।
নিলিমা জবাব দিলো।
তার বান্ধবীরা তখন তার হাতে পরা ঘড়িটায় টাচ করে বললো চেয়ে দেখতো কয়টা বাজে?
নিলিমা দেখলো ঠিকই তো ০৯:২৫ মিনিট সময় এখন। কিন্তু আমি যে আধ-ঘন্টা আগেই ঘড়িতে ০৯:২৫ মিনিট বাজতে দেখেছি। তার মানে কি আমাদের বাসার ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি আমি কোনো রকম ভুল দেখলাম? এটা কি করে হতে পারে আমি নিজে ঘড়ি দেখেছি। তাছাড়া মা-ও তো কিছু বলেনি আমায়। এসবের মানে কি? কি ঘটছে আমার সাথে এসব? নিলিমা মনে মনে ভেবেই চলেছে।
নিলিমা তার বান্ধবীদের এই বিষয়ে কিছুই বলল না। বরাবরের মতোই নিলিমা সহ তার সব বান্ধবীরা স্কুলের ভেতর ঢুকে গেলো।
আজ নিলিমা'র কেন জানি ক্লাসে মন বসতে চাইছেনা। বার বার শুধু কুকুরটার কথাই মনে পরছে নিলিমা'র। এটা কেমন কুকুর! যাকে একবার দেখার পর দ্বিতীয় বার আর দেখতে পাইনা। কেন কুকুরটা বার বার আমার সামনে আসছে। কুকুরটা কি আমাকে ফলো করছে নাকি আমার কাছে কোনো কিছু চায় সে? নাকি এটা কোনো আত্বা অথবা জ্বিন?
আত্বার কথা মনে পড়তেই নিলিমা'র সেদিন রাতের কথা মনে পরে গেলো। কি ভয়ানক ছিলো সেদিনের রাতটা। কি ঘটেছিল সেদিন আমার সাথে? এসব ভাবতেই ভয়ে তার হাত পা অবস হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এদিকে তৃষ্ণায় নিলিমা'র গলা শুকিয়ে এলো। ক্লাস চলছে। নিলিমা'র সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। নিলিমা'র গলা শুকিয়ে ওঠায় নিলিমা ক্লাস শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ক্লাসের বাহিরে গেলো পানি খাওয়ার জন্য।
ক্লাস থেকে অনেকটা দুরে ছিল পানির টিউবওয়েল। স্কুলের পেছনের একটা অংশে টিউবয়েল বসানো ছিল। জায়গাটা স্কুলের পেছনে হওয়ায় প্রচুর গাছগাছালি ছিল সেখানে। দেখলে মনে হয় এটাই যেন ছোট-খাটো একটা বনায়ন। নির্জন পরিবেশ! দেখে মনে হয় কখনো যেন এদিকে কোন মানুষ আসেনি। নির্জন পরিবেশে নিলিমা'র ভয়টা যেন আরো বেড়ে গেলো। কলিজাটা যেন থরথর করে কাপছে নিলিমা'র।
দেরি না করে নিলিমা টিউবয়েলের কাছে গেলো দ্রুত। কাছে গিয়েই ঢগঢগ করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিল নিলিমা । পানি খাওয়া শেষে নিলিমা মুখ মুছবে ঠিক এমন সময় দেখে পাশের কদম গাছটার নিচে বসে আছে সেই কালো কুচকুচে কুকুরটা। নিলিমা তাকে দেখে ভয়ে দৌড়ে ক্লাসে চলে আসে।
বরাবরের মতোই নিলিমা ক্লাস শেষ করে বাসার দিকে রওয়ানা হয়। বাসায় গিয়ে নিলিমা মন খারাপ করে বসে আছে। নিলিমা'র মা এসে তাকে বলল-
-> কিরে নিলি অমন করে বসে আছিস যে,, মন খারাপ?
-> না মা! স্কুল থেকে আসছি তো! তাই একটু ক্লান্তি লাগছে । ঠিক হয়ে যাবে!
-> আচ্ছা মা ঠিক আছে। এবার খেতে আয়।
নিলিমা'র মা খাবারের কথা বলে পাশের রুমে চলে গেলো। এদিকে নিলিমা'র চোখ থেকে সেই কুকুরের ছবিটা কিছুতেই মুছতে চাইছেনা।
প্রতিদিন বিকেল বেলা নিলিমা'র বাগানে যাওয়ার অভ্যাস ছিলো। তাই নিলিমা প্রতিদিনের মতো আজও বাগান দেখতে বাসার বাহিরে যায়। বাগানে নানা রকম ফুল ফোটেছে। প্রতিটা ফুলের সুভাসে যেন চারপাশ মোহময় হয়ে ওঠেছে। বেলিফুল গাছটার দিকে নিলিমা'র নজর পরতেই নিলিমা'র সকালে চিরকুটে পাওয়া বেলিফুল গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।
নিলিমা তখন বেলিফুল গাছটার দিকে এগিয়ে গেলো আর সেখান থেকে কয়েকটা ফুল ছিড়ে তার ঘন-কালো চুলের খোপায় গুজে দিলো। আজ নিলিমা'কে ভীষন সুন্দর দেখাচ্ছে। এত সবকিছুর মাঝে নিলিমা কুকুরটার কথা প্রায় ভুলেই গেলো। এরই মধ্যেই চারদিকে আজানের প্রতিধ্বনি শোনা গেল। নিলিমা তারাতারি করে বাসায় চলে আসলো। বই হাতে নিয়ে নিলিমা পড়তে বসলো এখন নিলিমা'র কুকুরটার কথা একেবারেই মনে পরছেনা।
অনেকটা সময় পর নিলিমা'র মা এসে বললো-
->আয় মা! খাবার বারা আছে খেয়ে যা।
->যাও মা আমি আসছি।
একটু পর নিলিমা খাবার টেবিলে গেলো। নিলিমা সহ তার বাবা-মা সবাই মিলে খেতে বসলো।
->কিরে মা পড়াশোনা কেমন চলছে? (নিলিমা'র বাবা)
->হুম বাবা ভালো।
->তর কিছু লাগলে আমাকে বলিস কেমন। (নিলিমা মাথা নাড়িয়ে হ্যা জবাব দিলো।)
তারপর আরো অনেক গল্প-গুজব করে তিন বাবা, মেয়ে, মা মিলে খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষে নিলিমা তার রুমে চলে আসলো। শুবার আগে নিলিমা পাওয়ার লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচ বোর্ডের কাছে গেলো। ঠিক তখনই নিলিমা'র গতকালকের রাতের কথা মনে পড়লো। তাই সে ভাবলো আজ ডিম লাইট নয় পাওয়ার লাইট অন করে ঘুমাবে সে।
যেমন চিন্তা তেমন কাজ,
নিলিমা তার রুমে লাইট অন রেখেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো । নিলিমা ভাবছে আজ দেখি কোন আত্মা এসে আমাকে জ্বালায়.! এমনটা ভাবতে ভাবতেই কখন যে শান্তির নীর এসে নিলিমা'র দু-চোখের পাতা এক করে দিল নিলিমা তা টেরই পেলোনা। নিলিমা ঘুমিয়ে আছে_
ঠিক মধ্য রাতের কাছাকাছি সময়ে আচমকা কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো নিলিমা'র....
চলবে...........
( বিঃদ্রঃ এই গল্পটি পুরোই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই। শুধু মাত্র আপনাদের বিনোদন দেবার জন্যই গল্পটি লিখা )
ধন্যবাদান্তেঃ-(LOVE BLOG)
মওদুদ আহমেদ মধু
COMMENTS