bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, premer golpo, sera bani, love quate, top bangla poem, recent abrritti, best poettry,
রফিক আজাদের পাঁচটি কবিতা
যদি ভালোবাসা পাই-----
যদি ভালোবাসা পাই
আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালোবাসা পাই
ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালোবাসা পাই
শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাবো
যদি ভালোবাসা পাই
পাহাড় ডিঙাবো আর
সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালোবাসা পাই
আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালোবাসা পাই
জীবনে আমিও পাব
মধ্য- অন্তমিল।
যদি ভালোবাসা পাই
আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালোবাসা পাই
শিল্পদীর্ঘপথে
বয়ে যাবো কাঁথাগুলি…
======
চাঁদের মতো ঘড়ি-------
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ অবিচ্ছিন্ন চাঁদ,
তোমার যাদুতে মুগ্ধ এই আমি শতচ্ছিন্ন কাঁথার একায়
হিরন্ময় নক্ষত্রের মেলা এক বসিয়েছি অবাস্তব স্বপ্নের বিন্যাসে:
একটা বয়স আছে অবোধ শিশুর দল শতাধিক পুতুলে যখন
জননীর মতো সোহাগ বিলোতে চায়,—
ন্যাকড়ার টুকরোয় তারা কী উজ্জ্বল জামা তৈরি করে,
চুমোয় আচ্ছন্ন করে সারি-সারি পুতুলের নির্বিকার মুখ!
শিশুদের মতো আমি,— মুখাবয়বসর্বস্ব,—ভাঙা এই একটি পুতুলে
আমারও আজন্ম খেলা, সারাবেলা—দুপুরে-রাত্রিতে।
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ অলীক লন্ঠন,
সর্বক্ষণ জ্ব’লে যাও তুমি, তোমার মুখশ্রীখানি
কী মসৃণ আলো ফ্যালে দুর্গন্ধে আমার!
অবাস্তব উটপাখি, তোমার পিঠের ‘পরে চ’ড়ে
জরায়ুতে চ’লে যাই, ভবিষ্যতে যাই…
খটখটে মৃত্তিকায় শিকড় চারিয়ে দিই, কিংবা
আইয়ো-র শিঙয়ের মতো বাঁকানো শৈশব ঘুরে আসি!
শিখাহীন অলৌকিক তোমার আগুনে পুড়ে যায়—
পরিত্যক্ত বাঁশঝাড়, গাছপালা, গোপন বাগান!
ঘড়ির কাঁটায় স্থির, সমর্পিত, হে আমার অন্তরঙ্গ জীবনদেবতা,
তালের শাঁসের মতো রাতে আনো অপার বেদনা;
সাবানের মতো তুমি পিছলিয়ে যাও
ব্যক্তিগত বাথরুম থেকে কোথা কোন্ স্বর্গলোকে!
আমার বাস্তব-স্বপ্নে কখনো আসো না আর ফিরে।
তবে অশ্রুজল ছাড়া ঐ-পদপল্লবে
আর কী দেবার আছে? …কেবল চোখের জলে ভ’রে দিতে পারি
একটু অদৃশ্য, শুষ্ক বঙ্গোপসাগর।।
======
নারীঃ আমার অভিধান --------
আমার নিকট তুমি এক মূর্তিমান অভিধান;
খুচরো অথবা খুব দরকারি ভারী শব্দাবলি
টেবিলে ঈষৎ ঝুঁকে নিষ্ঠাভাবে যে-রকমভাবে
দেখে নিতে হয়, প্রয়োজনে তোমাকে তেমনি পড়ি।
তুমিই আমার হও বিশ্বাস-স্থাপনযোগ্য সেই
বিশুদ্ধ মৌলিক গ্রন্থ: তোমাকে পড়েই শিখে নিই
শব্দের সঠিক অর্থ, মূল ধাতু, নির্ভুল বানান।
তোমাকে দেখেই জেনে নিই কোন ঠিকানায় আছে
সুন্দরের ঘরদোর,—বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের বিরুদ্ধে
কী-কী অস্ত্র প্রয়োগের প্রয়োজন, তাও জানা হয়।
তোমার হাঁটার ভঙ্গি দেখে মুহূর্তেই শেখা হয়
কবিতায় ব্যবহার্য সমস্ত ছন্দের মূলসূত্র।
এজন্য আমাকে কোনো প্রবোধচন্দ্রের গ্রন্থাবলি
কোনোদিন পড়তে হয় নি—এবং একথা সত্য,
পড়ব না—যতদিন নৃত্যপর নারীর শরীর
আমার চোখের সামনে প্রকৃতির মতো রয়ে যাবে।
হরিচরণের কাছে, আপাতত, কোনো ঋণ নেই:
যতদিন পৃথিবীতে তোমরা রয়েছ, ততদিন
প্রয়োজন নেই কোনো ব্যাকরণ কিংবা অভিধানে;
সত্যি কথা বলতে গেলে, এমনকি, দরকার নেই
কোনো ফুলে। কেননা, নারীর নগ্ন শরীরের মতো
ঘ্রাণময়ফুল আমি এ জীবনে কখনো শুঁকি নি।
যে সৌগন্ধ্য রয়েছে নারীর, সেরকম গন্ধবহ
ফুলের সাক্ষাৎ আমি এখনো পাই নি কোনো ফুলে।
আমার হাতের কাছে সর্বদা সরল শব্দকোষ,
হয়ে আছ, আজীবন। যদিবা দৈবাৎ পড়ে যাই
দুর্বোধ্য, রুক্ষ, অপরিচিত শব্দাবলির সম্মুখে
স্বভাবত, তোমাকে দেখেই সাহস সঞ্চয় করি।
সুন্দরের দিকে রয় আমার প্রধান প্রবণতা;
তোমার শরীর হয় কবিতার পবিত্র পুরাণ,
গরীবের কানাকড়ি, বিধবার শেষ সাদা শাড়ি।
======
তুমিঃ বিশ বছর আগে পরে-----------
তুমি যে-সব ভুল করতে সেগুলো খুবই মারাত্মক ছিল। তোমার কথায় ছিল গেঁয়ো টান, অনেকগুলো শব্দের করতে ভুল উচ্চারণ: ‘প্রমথ চৌধুরী’ কে তুমি বলতে ‘প্রথম চৌধুরী’; ‘জনৈক’ উচ্চারণ করতে গিয়ে সর্বদাই ‘জৈনিক’ বলে ফেলতে। এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে-ভরা ছিল তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুদূর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়-বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলুম।
তোমার পরীক্ষার খাতায় সর্বদাই সাধু ও চলতির দূষণীয় মিশ্রণ ঘটাতে। ভাষা-ব্যবহারে তুমি বরাবরই খুব অমনোযোগী ছিলে। বেশ হাবাগোবা গোছের লাজুক ও অবনতমুখী মেয়ে ছিলে তুমি। ‘শোকাভিভূত’ বলতে গিয়ে ব’লে ফেলতে ‘শোকাভূত’। তোমার উচ্চারণের ত্রুটি, বাক্যমধ্যস্থিত শব্দের ভুল ব্যবহারে আমি তখন এক ধরনের মজাই পেতুম।
২০-বছর পর আজ তোমার বক্তৃতা শুনলুম। বিষয়: ‘নারী-স্বাধীনতা’! এত সুন্দর, স্পষ্ট ও নির্ভুল উচ্চারণে তোমার বক্তব্য রাখলে যে, দেখে অবাক ও ব্যথিত হলুম।
আমার বুকের মধ্যে জেঁকে-বসা একটি পাথর বিশ বছর পর নিঃশব্দে নেমে গেল।
======
দুঃখ - কষ্ট ---------
পাখি উড়ে চ’লে গেলে পাখির পালক প’ড়ে থাকে ।
পাখি উড়ে গেলে তার নরম পালক
কঠিন মাটিতে প’ড়ে থাকা ঠিক নয়—
এই ভেবে কষ্ট পেয়েছিলে;
তুমি চ’লে গেলে দূরে
নিঃস্ব, রিক্ত পাখির পালকসম একা প’ড়ে থাকি।
পরিত্যক্ত পালকের প্রতি মমতাবশত
একদিন, কোনো-এক কালে, তুমি কষ্ট পেয়েছিলে;
নাকি খুব সাধারণভাবে বলেছিলে—
‘পাখির পালক খ’সে গেলে কষ্ট পাই’?
দুঃখ নয়, সাধারণ কষ্টের কথাই বলেছিলে?
দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে পার্থক্য অনেক:
বহু রক্তক্ষরণের পর শব্দ-দু’টির যাথার্থ্য বোঝা যায়!
আমার তো অর্ধেক জীবন চ’লে গেল
নেহাত মামুলি দু’টি শব্দ আর তার মানে খুঁজে পেতে।
বুকের গোপনে আজো খুব দুঃখ পাই,
পনেরো বছর আগে তুমি খুব সাধারণ ‘কষ্ট’ পেয়েছিলে?
উচ্চারিত তোমার শব্দের বড় ভুল মানে ক’রে
আজো আমি ‘দুঃখ’—এই দুঃখজনক শব্দের সাথে
ভাগ করে নিই রাতে আমার বালিশ।।
===================================
COMMENTS