রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস, "ভালো থাকুক ভালবাসা" । "মধু'র ভূবণ"

SHARE:

bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, sera golpo, sera bani, love quate,

 


রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস, "ভালো থাকুক ভালবাসা" ।







গল্প---- "ভালো থাকুক ভালোবাসা "

ভালো থাকুক ভালবাসা, মধু'র ভূবণ
অনেক সেজেগুজে বাসর ঘরে বসে আছি, কিন্তু আমার বরের কোনো খবর নাই। এ ছেলে নির্ঘাত আনরোমান্টিক হবে।
............
যাহোক উনি অবশেষে আসলেন।
এসে ঘরে ঢুকেই বলল -
"আমি কারো সাথে বিছানা ভাগ করে ঘুমাতে পারব না।"

আমি তো আর অবুঝ নই ; না বলা কথাটুকু ঠিকই বুঝে গিয়েছি। বিছানা থেকে নেমে সালাম করে আবারও সেই বিছানাতেই বসেছি।

উনি মনে হয় এরকমটা আশা করেন নি। এজন্যই হয়তো ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "কথা কানে যায় নি??"

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,

-"কানে গিয়েছে তো, আপনি এক কাজ করুন.. নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আমি বিছানা পেতে দিচ্ছি।"

উনি আমার আস্পর্ধা দেখে বিরবির করে কি যেন বললেন, স্পষ্ট শুনতে পাই নি।

উনি মনে হয় রেগে আছে খুব।

রেগে থাকারই তো কথা। উনার জায়গায় আমি হলে হয়তো বিয়েটাই ভেঙে দিতাম।

বিয়ের আগে যদি কোনো মেয়ে তার হবু বরকে বলে যে, "আপনি কি জন্ম থেকেই হাফ কানা?" তাহলে তো রাগ হবেই।

ব্যাপারটা খুলেই বলি....

উনি, উনার বাবা, মা ভাই আর বোন গিয়েছিল আমাকে দেখতে।

দেখাদেখির এক পর্যায়ে আমাকে আর উনাকে পাঠানো হল আলাদা করে কথা বলতে।

উফ্! কতক্ষন আর উনি উনি করব.. তারথেকে নামটা বলেই দেই।

ওর নাম আফরান ফারুক

যাহোক আলাদা করে কথা বলার সময়ই আমি উনাকে বলেছিলাম, "আপনি কি জন্ম থেকেই হাফ কানা? "

আমার এরকম অদ্ভূত প্রশ্ন করার কিন্তু কারন আছে। মেয়ে দেখতে এসেছে তাও চোখে চশমা পরে! চশমা চোখে না দিলে কি আমাকে দেখা যাবে না নাকি। এজন্যই তো হাফ কানা বললাম।

ও আমার প্রশ্ন শুনে গোমরা মুখে বলেছিল, "হুম"।

আমি তখনই বুঝেছিলাম এ ছেলে হাফ কানা তো বটেই, সাথে কিছুটা বলদ কিছিমেরও।

আমার কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা কিছুটা অদ্ভূত। এজন্য বিয়ের আগে আম্মু বকত আর বলতো, "তোকে বিয়ে দিলে তো বিয়ের পরের দিনই পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দিবে শশুরবাড়ির লোকেরা।"

আম্মুর এ কথায় আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলতাম, "তাহলে যে বাসায় পিছনের দরজা নেই, ওরকম বাসায় আমাকে বিয়ে দিয়েন, হিহিহি।"

আম্মু তখন রেগে গিয়ে বলত, "তুই আর আমাকে মা বলবি না"।

আমি এ কথায় হিহিহি করে হেসে বলতাম, "ওকে আন্টি"।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছিলাম..

হঠাৎ-ই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। না, নিজে নিজে হয় নি ;আফরান করেছে। আমি মুচকি হেসে ভাবছি

- "এখন তো আমার পাশেই শুয়ে ঘুমাতে হবে। কতক্ষন আর দাড়িয়ে থাকবে হুহ"।

বেশ খানিকটা সময় কেটে গেছে। কিন্তু আফরান কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না! ব্যাপারটা কি..

অন্ধকারের মধ্যই বিছানা হাতরে ওকে খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না তো! আমার বর গেলো কই!

এখনো কি বিছানার পাশে দাড়িয়ে আছে নাকি?!

বালিশের নিচ থেকে আমার মোবাইলটা বের করে ফ্ল্যাশলাইট অন করলাম।

এমা!! এ ছেলে তো সত্যিই বলদ টাইপ। ফ্লোরেই শুয়ে পরেছে, তাও কিছু না পেতেই।

--এই যে, উঠুন (আমি)

:--.. (কোনো সাড়াশব্দ নেই)

--উঠতে বলেছি তো..

এবার উনি উঠলেন। পাশে খুলে রাখা চশমাটা হাতে নিয়ে চোখে পরলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-- তুমি হয়তো ভাবছো আমি কেন নিচে শুয়ে পরলাম কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই। আমি মনে করি তুমি এ বাড়িতে ক্ষণিকের অতিথি মাত্র...

এটুকু শুনেই আচমকা এক ভয়ের স্রোত খেলে গেল আমার শরীরে। একটা শিরশিরে অনুভূতি হলো নিজের ভিতর..

উনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বলতে লাগলেন,

-- আমি জানি তুমি এ বিয়েতে খুশি নও। এজন্যই বিয়ে ভাঙতে ওরকম উদ্ভট প্রশ্ন করেছিলে, তাই না??

আমি উনার কথায় সম্ভিত হারিয়ে ফেললাম। স্বাভাবিক চিন্তাগুলোও এলোমেলো লাগছে। প্রচন্ড অভিমানে নিজের কান্নাটাকেও জোর করে দমিয়ে রাখলাম।

কিন্তু উনি এসব কিছুই বুঝলেন না। মৌণতাকে সম্মতির লক্ষণ ভেবে নিলেন।

সেদিন আমরা পাশাপাশি শুয়ে রাত কাটালেও মাঝখানে ছিলো বাহ্যিকভাবে একহাত দূরত্ব আর মনের দিক থেকে কতটা দূরত্ব ছিলো সেটা না হয় নাই বা বললাম....।








আমাদের বিবাহিত জীবনের বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে....
সময়ের সাথে সাথে আমার আর আফরানের মানসিক দূরত্বটা কমে গিয়েছে। এতে অবশ্য আমার শাশুরী আর ননদের বিশেষ ভূমিকা আছে। এ দুজন মিলে আমাকে আফরানের পছন্দ অপছন্দের তালিম দিয়ে ওর মন জয় করতে সাহায্য করেছে।

এতদিনে আফরান বুঝে গেছে যে আমি দুষ্টামী মাখা কথা এমনিই বলি, কোনো কুটিল উদ্দেশ্য নিয়ে নয়।

আমার আম্মু আমাকে একদিন বলেছিল যে, স্বামীর সাথে যতই মনোমালিন্য হোক না কেন, পরস্পরের বিছানা যেন আলাদা না হয়। কারন, বিছানা আলাদা হওয়াটাই নাকি সংসার ভাঙার সূত্রপাত ঘটায়।

আম্মুর এ কথাটা আমি মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত আফরানের সাথে অনেকবারই ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু দিনশেষে দুজন পাশাপাশি বালিশে মাথা ঠেকিয়েই রাত কাটিয়েছি।

বিয়ের আগে বাস্তবিক কারো সাথে প্রেম করা হয় নি আমার, তবে কল্পনায় একজন ছিলো। আফরানের সাথে তার অনেকটাই মিল আছে, আবার অনেকটা অমিলও আছে।

কিশোরী বয়সে মনের মধ্য পুষে রাখা কাল্পনিক চরিত্রকে যদি কোনো এক ভাবে পরিণত বয়সে নিজের করে পাওয়া যায়, তাহলে মনে হয় তার প্রতি বিশেষ ভাললাগাটা একটু বেশি মাত্রায়ই কাজ করে।


আমার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে। নয়তো একসময়ের অচেনা, অদেখা ছেলেটা কিভাবে আমার সবটুকু দখল করে নিল?! খুব ঘুমকাতুরে হওয়া সত্ত্বেও এখন আমি রাত জাগি আফরান সাথে গল্প করার লোভে। যে আমি খিদা লাগলেই খাওয়া শুরু করে দিতাম কোনো বাছবিচার না করে, সেই আমিই এখন শুভ্রর জন্য বসে থাকি খাবার নিয়ে।


আমি আফরানের জন্য না খেয়ে বসে থাকলে মা বকা দিলেও মনে মনে যে খুশি হয় সেটা বুঝি আমি। মা আমাকে একদিন গল্প করার ছলে বলেছিল সব ছেলেই চায় খাবার সময় তার স্ত্রী সামনে বসে থেকে পরিবেশন করে খাওয়াবে। এসব ছোটোখাটো জিনিসেও নাকি স্বামী স্ত্রীর মধ্য ভালোবাসা বাড়ে। আমি মাকে সেদিন বলেছিলাম, "আর কি কি করলে প্রেম বাড়বে বলুন না মা"। উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "ফাজিল মেয়ে শাশুরীর কাছে এসেছে প্রেমের তালিম নিতে "।


কে যেন বলেছিল, প্রেমে পরলে প্রিয় মানুষটার সবকিছুতেই সৌন্দর্য আবিষ্কৃত হয় নিজের কাছে ; এখন আমি কথাটার সত্যতা খুঁজে পাই নিজের কাছে।

ওর ছোট ছোট কাজগুলোতেও আলাদা কিছু খুঁজে পাই আমি।

আচ্ছা, আফরান ও কি এভাবে আমাকে উপলব্ধি করে?

নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পাই না সঠিক। কখনো মনে হয় ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আবার কখনো মনে হয় ও এতদিন পরেও কি যেন এক সন্দেহে ভুগে আমাকে নিয়ে।



(মধু'র ভুবণ) 





COMMENTS

My Blog List

Name

featured,64,Sad Story,1,slider,65,অন্যান্য,8,ইতিহাস,4,উপন্যাস,12,কবিতা,8,কলাম,4,গল্প,38,ছোট গল্প,15,জীবনী,7,পারিবারিক,6,প্রবন্ধ,9,প্রেম,14,বাস্তবতা,5,বিদ্রোহ,7,বিরহ,8,ভালবাসা,12,ভৌতিক,2,ভ্রমণ কাহিনী,5,ভ্রমন,1,রহস্য,8,রূপকথা,1,রোমান্টিক,5,শিশু সাহিত্য,3,সংকলন,4,সংগ্রহ,2,সংলাপ,2,সামাজিক,7,সাহিত্য,13,স্মৃতিকথা,1,হাস্যরস,1,হুমায়ূন আহমেদ,11,
ltr
item
Golpo Blog: রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস, "ভালো থাকুক ভালবাসা" । "মধু'র ভূবণ"
রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস, "ভালো থাকুক ভালবাসা" । "মধু'র ভূবণ"
bangla sera galpo, bangla upponnash, bangla poem, bangla novel, sera golpo, sera bani, love quate,
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg49u18pOlBp4lzAtIpshWbziihA6wwex4Nb2nRUPlyX4GyF5AFrMdZq3wQ0UIvKoN52HKtu7H0hJ2HdhyBxUuK5-XgUi0n20Tcu8OGLWBxq1Hhan1v1-lx4YWE_4GKmn8YDIExEoFIkC_B/w640-h246/%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A7%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595+%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AA+.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg49u18pOlBp4lzAtIpshWbziihA6wwex4Nb2nRUPlyX4GyF5AFrMdZq3wQ0UIvKoN52HKtu7H0hJ2HdhyBxUuK5-XgUi0n20Tcu8OGLWBxq1Hhan1v1-lx4YWE_4GKmn8YDIExEoFIkC_B/s72-w640-c-h246/%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A7%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595+%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AA+.jpg
Golpo Blog
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_55.html
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/2021/05/blog-post_55.html
true
3394482685536881275
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy