প্রেমের গল্পঃ- দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি? (সপ্তম পর্ব) @Golpo Blog. bangla golpo, bangla story, latest story,
দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি?
লেখক: আতিকুল ইসলাম
_দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি? (ষষ্ঠ পর্ব)_
নিলিমা বাসর ঘরে একা একা বসে আছে। সারা বাসর গোলাপ আর রজনিগন্ধায় ভরা। মন মাতানো সুভাসে একাকার হয়ে ওঠেছে পরো বাসর। নিলিমা'র জন্য সাজানো বাসর ঘরটা বাড়ির দোতলা ভবনে করা হয়েছিলো। নিলিমা ফুল বিছানায় বসে তার স্বামীর কথা মনে পরতেই নিচে সিঁড়ির ধারে কেমন যেন একটা কাচ ভাংগার শব্দ পায় সে।
চট করে ওঠে দাড়ায় নিলিমা। দরজার কাছে আসতেই নিচে তাকিয়ে দেখে আয়ান (নিলিমা'র স্বামী, যার সাথে নিলিমা'র বিয়ে হয়েছে) মেজেতে পরে আছে।
তার ননদ ও বড় ভাবি দৌড়ে এসেছে। আয়ানকে ধরে আস্তে আস্তে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আয়ান ওঠে দাড়ালেও কিছুতেই হাটতে পারছেনা। তারাতারি নিলিমা নিচে নেমে এলো। জিঙ্গাসা করলো কি করে এমনটা হলো?
আয়ান বলল সে সিঁড়ি দিয়ে বাসর ঘরের দিকেই যাচ্ছিল তখন কিভাবে যেন পা পিছলে নিচে পড়ে যায়। আয়ানের কথা শুনে নিলিমা'র মুখ খানা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে ওঠলো।
নিলিমাকে শান্তনা দেবার জন্য আয়ান বলল- ওসব কিচ্ছুনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু মুখে বললে তো আর সব ঠিক হয়ে যায় না? কেননা আয়ান তখন কিছুতেই হাটতে পারছিলো না। আর পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা করছিলো আয়ানের।
তারপর আয়ান নিলিমা, তার বোন এবং বড় ভাবির সাহায্যে বাসর ঘরে এসে পৌছালো। বাসর ঘরে আয়ানকে রেখে আয়ানের বোন আর ভাবি নিলিমা'র দিকে তাকিয়ে বলল - আয়ানের খেয়াল রেখো নিলিমা আমরা আসি। আর হে! কিছু দরকার পরলে ডেকো আমায়। (আয়ানের ভাবি বললো)
নিলিমা মাথা নাড়িয়ে হে বললো।
এরপর তারা তাদের রুমে চলে গেলো। এদিকে নিলিমা বেশ চিন্তিত। হঠাৎ কেন এমনটা হলো? এটা কি শুধুই সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়া নাকি এর পেছনে কারো হাত রয়েছে?
এসব ভাবতেই নিলিমা'র নিশাদের কথা মনে পরে গেলো। তাহলে নিশাদ এসব করেনি তো? যাই হোক এসব এখন ভাবার সময় নেই দেখি আয়ানের কি হয়। আয়ান আগে সুস্থ হয়ে ওঠুক তারপর দেখা যাবে সবকিছু।
নিলিমা আয়ানের পাশে বসেই এসব ভাবছিলো। আয়ান নিলিমা'র ভ্রুম ভাঙ্গিয়ে বলল- কি ভাবছো নিলিমা ? আজকের মতো এমন মধুময় রাতে আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি সেটা ভাবছো হয়তো ? না নিলিমা ' আমি তোমাকে কখনো কষ্ট পেতে দেবোনা। আমার সবটা দিয়ে তোমাকে সুখী রাখার চেষ্টা করবো। আসো নিলি! আমার আরো কাছে এসে বসো।
নিলিমা আয়ানের একেবারে কাছে এগিয়ে গেলো। আয়ান নিলিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে ঠিক এমন সময় আয়ান ব্যাথায় কুকড়িয়ে ওঠলো।
নিলিমা অনুভব করলো আয়ানের খুব কষ্ট হচ্ছে। তখন নিলিমা আয়ানের পায়ের কাছে গেলো। টেবিল থেকে ব্যথার মলমের কৌটা-টা নিয়ে আয়ানের পায়ে মালিশ করতে লাগলো। রাত তখন প্রায় ১২-টার উপরে। পা মালিশ করতে করতে নিলিমা আয়ানের পায়ের কাছেই ঘুমিয়ে পরলো। এদিকে আয়ানেরও চোখ লেগে গেলো। ভোর বেলা ফজরের আজান পরতেই নিলিমা'র ঘুম ভাঙ্গলো। নিলিমা আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়ান ঘুমোচ্ছে।
তখন নিলিমা আয়ানকে ডাকলো -
এইযে শুনছেন সকাল হতে চলল। ওঠুন ।
আয়ান ঘুম থেকে ওঠে বলল -
নিলিমা সারা রাত তুমি কোথায় ছিলে?
তখনই হঠাৎ আয়ানের রাতের কথা মনে পরলো। নিলিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল -
সরি নিলিমা। আমি তোমাকে তোমার স্বামীর অধিকার টুকু আদায় করতে পারিনি। কতটা দুর্ভাগা আমি! কত স্বপ্ন ছিলো এই রাতে তোমাকে নিয়ে। আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি!!
নিলিমা বলল - ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি। যা হবার হয়েছে এটাতে তো আপনার কোনো দোষ নেই। আপনি এখন ঠিক আছেন আমি এতেই খুশি। চলুন ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করবো।
তারপর আয়ান আর নিলিমা দুজন বাকি কাজগুলো সেরে নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ শেষ করে আয়ান খাটে শুয়ে রইলো আর নিলিমা আয়ানের ভাবি সাথে রান্না ঘরে গেলো। আয়ানের ভাবির সাহায্যে নিলিমা রান্না কমপ্লিট করলো। খাবার টেবিলে খাবার সাজানো হলো। সবাইকে ডাকা হলো। নিলিমা গেলো আয়ানের ঘরে।
নিলিমা আয়ানের কাছে যেতেই আয়ান নিলিমা'র হাত ধরে টান দিয়ে আয়ানের বুকের সাথে নিলিমাকে চেপে ধরলো। নিলিমা -
-> এটা কি করছো? ছাড়ো.. সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
-> করুক' তাতে আমার কি। আমি কি আমার বউকে একটু আদরও করতে পারবোনা।
-> আচ্ছা ঠিক আছে । এসব পরে হবে এখন আসো।
-> না। আরেকটু থাকো আমার কাছে ।
এরই মাঝে নিলিমা'র মাথার কয়েকটা ভেজা চুল আয়ানের মুখের ওপর গিয়ে পরলো। নিলিমা'র শেম্পু করা ভেজা চুলের ঘ্রাণ আয়ানের নাকে যেতেই আয়ান নিলিমাকে আরো শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরলো। আলতো করে নিলিমা'র কপালে চুমু খেলো আয়ান। নিলিমা বলল-
-> এবার তো চলেন।
-> হুম।
একথা বলেই আয়ান ওঠে দাড়াবে কিন্তু আয়ান কেমন যেন হাটতে পারছেনা।
আয়ান বলল নিলিমা পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। পা মাটিতে ফেলতেই পারছিনা। যাও ভাবিকে ডাকো তো একটু। নিলিমা তারাতারি ভাবিকে ডাকলো। সবাই ওপরে আসলো। দেখলো আয়ান খাটে বসে আছে। আয়ানকে দেখে বুঝা যায়না যে সে হাটতে পারেনা। কিন্তু সবাই খেয়াল করলো ঠিকই হাটতে পারছেনা আয়ান। তখন আয়ানের বাবা বলল - আর দেরি করা চলবেনা। আয়ানকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কথামতো আয়ানকে হাসপাতালে নেয়া হলো। পায়ের নানা রকম পরিক্ষা করা হলো। কিছুই ধরা পরলো না। তবে আয়ানের পায়ের ব্যথা কিছুতেই কমছিলো না। অবশেষে প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। বাসায় আসার দুদিন পর নিলিমা'র বাবা এলো নিলিমাকে দেখতে এবং সাথে করে মেয়ে ও মেয়ের জামাইকেও নিয়ে যাবে চিন্তা করেছে। কিন্তু জামাই বাড়ি এসে দেখলো জামাই'র এই করুন অবস্থা।
নিলিমা'র বাবার মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো। এসব দেখে নিলিমা'র বাবা মেয়েকে কিভাবে নিয়ে যাবার কথা বলবে সেটাই ভাবছে নিখিল সাহেব। এদিকে জামাইও খুব অসুস্থ। অবশেষে বলেই ফেললেন বিয়াই সাহেবের কাছে-
-> অনেক দিন হলো মেয়েটা আসছে। আপনি অনুমতি দিলে মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে যেতাম।তাছাড়া মেয়েটার মনটাও একটু হালকা হতো।
-> তা ঠিকই বলেছেন বিয়াই সাহেব। ছেলে আমার কিছুতেই হাটতে পারছেনা। ছেলেকে বলে দেখি সে কি বলে।
অবশেষে আয়ানকে বলে নিলিমা'র বাবা নিলিমাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলো। বাড়িতে আসার পর নিলিমা ফারহানকে ফোন করলো। নিলিমা'র স্বামীর বেপারে সবকিছু খুলে বলল ফারহানকে। অবশেষে নিলিমা নিশাদের কথা ফারহানকে বলতে বাধ্য হয়। ফারহান এসব শুনে বলল - তুমি কোনো চিন্তা করোনা নিলিমা। আমি দেখছি কি করা যায়।
একথা বলেই ফারহান ফোন কেটে দিলো। কি যেনো চিন্তা করে ফারহান একদিন একজন কবিরাজের কাছে গেলো। কবিরাজ সবকিছু শুনে বলল - এটা খুবই শক্তিশালী আত্মা। আর এটা শুধু আত্মা ই নয় এটা নিলিমা'র অতীত! অতীত জন্মের ভালোবাসা। এই আত্মা থেকে নিলিমাকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।
তবে হে তুমি যদি এই আত্মার সাক্ষাত নিতে চাও এবং কিছু বলতে চাও তাহলে আগামী পূর্ণিমা রাতেই তার সরাসরি সাক্ষাত পাবে তুমি তবে তা খুব ভয়াবহ আর কঠিন কাজ।
-যত ভয়াবহ আর কঠিন ই হোক না কেন আমি পারবো। ঠিক আছে দুদিন বাদেই পূর্নিমা। আমি একটা তাবিজ দিয়ে দিচ্ছি। এই তাবিজ তোমার সাথে নিয়ে ঐ ত্রি-রাস্তার মোড়ে নির্জন রাস্তার মাঝে কদম গাছটার নিচে বসে অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। আর নিশাদ নাম ধরে ডাকতে হবে মনে মনে। তবেই সে আসবে তোমাকে সাক্ষাত দিতে। তবে সাবধান তার সাথে মাত্রাতিরিক্ত খারাপ কিছু করতে যেওনা। মনে রেখো সে তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
ফারহান কবিরাজের কথা মতো আত্মার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাবিজ সাথে করে কবিরাজের বাড়ি থেকে ফিরে আসলো। নিলিমাকে ফোনে সবকিছু জানালো ফারহান। এখন শুধু পূর্নিমার অপেক্ষা।
এগিয়ে এলো পূর্নিমা রাত
ফারহান কবিরাজের কথা মতো কদম গাছের নিচে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো আর মনে মনে নিশাদকে স্মরন করতে লাগলো। কিছুক্ষন বাদেই কেমন যেন একটা গরম বাতাসে চারদিক ধামাচাপা হয়ে পরলো। নির্জনতাকে তাড়িয়ে দিয়ে নিশাদের আত্বা এসে হাজির হলো ফারহানের সামনে ..
চলবে.........
COMMENTS