প্রেমের গল্প, দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি, Golpo Blog, premer new golpo, new romantic story, latest novel story, current bangla love story, top love story,
গল্প: দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি ?
পর্ব: ৫'মলেখক: আতিকুল ইসলাম
নিলিমা এক লাফে তার বাবার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কি হয়েছে বাবা তোমার? ও বাবা! হঠাৎ কি হলো তোমার.?
নিলিমা'র বাবা কোনো কথা বলতে পারছেনা। নিলিমা বাবার দিকে তাকিয়ে কাদতে লাগলো -
বাবা,ও বাবা... কথা বলো বাবা। কথা বলছোনা কেন.?
নিলিমা'র দিকে শুধু তাকিয়ে আছে কোনো প্রকার জবাব দিতে পারছেনা তার বাবা।
মা চলো তারাতারি বাবাকে হাসপাতালে নিতে হবে। নিলিমা আর তার মা মিলে ধরাধরি করে দ্রুত তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতালের ডক্টর তার বাবাকে চেক করে দেখে বললো আপনার বাবার হার্ড এটাক হয়েছে। চিন্তার কোনো কারন নেই সময় মতো নিয়ে এসেছেন বলে আল্লাহর রহমতে বেচে গেছেন ওনি। তবে ওনাকে কোনো প্রকার টেনশন অথবা চাপে ফেলা যাবেনা। নয়তো আবার হার্ড এটাক হতে পারে। আবার এমনটা হলে হয়তো ওনাকে বাচানো দায় হয়ে যাবে ।
ডাক্তার সাহেবের এইসব কথা শুনে নিলিমা আর তার মা কাদতে লাগলো। ডাক্তার ওনাদের অভয় দিয়ে বললেন। আপাদত কিচ্ছু হবেনা ওনার। কিছুদিন রেস্ট নিলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি। ঔষধগুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন।
->আচ্ছা! ওনি কি বেশি টেনশনে ভোগেন নাকি .?
->তেমন কোনো টেনশনের কারন তো নাই ডাক্তার সাহেব
->বুঝতে পারছি ওনার শরীরটা একটু দুর্বল তা কোনো বেপার না একটু রেস্ট আর ঠিক মতো ঘুমালেই সুস্থ হয়ে ওঠবেন ওনি।
->তাহলে আসি ডাক্তার সাহেব..!
->হুম! ওনার দিকে খেয়াল রাখবেন।
তারপর নিলিমা তার বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো। নিয়মিত তার বাবাকে ঔষধ খাইয়ে দিতে লাগলো কখন কোন ঔষধ লাগে। নিলিমা আর তার মায়ের সেবায় আস্তে আস্তে নিলিমা'র বাবা সুস্থ হয়ে ওঠলো। তারপরেও নিলিমা নানা কারনে সারা সময় কেমন জানি চিন্তিত থাকতো। কখনো তার বাবাকে নিয়ে, কখনো ফারহানকে নিয়ে কখনো আবার নিশাদকে নিয়ে।
ও.. হে নিশাদ ???
যার পরিচয় এখনো বলা হয়নি। নিশাদ হচ্ছে সেই কালো ছায়া। যাকে নিলিমা কুকুর রুপে দেখতে পায় সব সময়। কখনো কখনো আবার মানুষের ছায়া রুপেও নিলিমা'র সামনে আসে সে। আর এই ছায়াটিই হলো নিশাদের আত্বা।
বেশ কিছুদিন পর নিলিমা'র মা তার বাবাকে বলল-
-> দেখো- আমাদের নিলি কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। আগের মতো আর চঞ্চল ভাবে হাসে না। কেমন যেন শান্ত স্বাভাবিক থাকে মেয়েটা। আমি বলছিলাম কি....
নিলিমা'র মা বলা শেষ না করতেই নিলিমা'র বাবা বলে ওঠলো -
-> কি বলছিলে তুমি ?
-> না মানে, মেয়ে বড় হয়েছে। তাকে বিয়ে দেয়া দরকার।
কথাটা শুনে নিলিমা'র বাবা নিলিমা'র মায়ের মুখের দিকে কেমন যেন তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষন তাকানোর পর বলল-
-> দেখো নিলির মা। আমিও ভাবছিলাম সে কথা। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার কি হবে।
নিলিমা'র বাবার কথা থামিয়ে তার মা বলল -
-> তা ঠিক আছে। তবে আল্লাহ না করোক যদি কখনো তোমার কিছু হয়ে যায় মেয়েটাকে নিয়ে তখন কি করবো আমি ?
কথাটা বলে নিলিমা'র মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিলিমা'র বাবা বলল-
আচ্ছা ঠিক আছে। মেয়ে যেহেতো হয়েছে আজ না হয় কাল বিয়ে তো দিতেই হবে। কিন্তু নিলির কোনো আপত্তি থাকলে?
নিলিমা'র মা তার বাবাকে থামিয়ে বলল মেয়েকে বলে কয়ে কি আর বিয়ে-সাদির কাজ করা যায় ? মেয়ে বড় হলে বাবা-মা'কেই সব কিছু দেখতে হয়। ভালো একটা ছেলে দেখে তার হাতে তুলে দিতে হয়।
একথা শুনে নিলিমা'র বাবা আর কিছু বললো না। ছেলের খোজ করার জন্য নিলিমা'র বাবা একজন ঘটকের সাথে আলাপ আলোচনা করলো আর একজন ভালো পাত্রের সন্ধান চাইলো।
বিয়ের কথা নিলিমা'র কানে গেলো। নিলিমা প্রথমে রাজি হতে চায়নি। পরে তার মা যখন বলল -
-> দেখ মা, তোর বাবা চায় মৃত্যুর আগে তোর বিয়েটা দেখে যেতে। আর সেদিন ডাক্তার কি বলল তা-তো সবই তুই শুনলি।
সব কথা শোনে নিলিমা আর কিছুই বলল না। মাথা নিচু করে নিলিমা রুমে চলে গেলো। রাতে ফারহান ফোন করলো। ফোন রিসিভ করে নিলিমা কাদতে লাগলো।
ফারহান-
-> কাদছো কেন?
-> বাবা আমার বিয়ে দেখতেছে। আমিও কিছু বলতে পারছিনা। কারন ডাক্তার বলেছে বাবাকে কোনো প্রকার টেনশন বা চাপে ফেলা যাবেনা।
-> তা ঠিক আছে। কিন্তু তুমিতো তোমার বাবা মাকে আমাদের ভালোবাসার কথা জানাতে পারো। তুমি কি জানিয়ে ছিলে?
-> নাহ । আমার ভয় হচ্ছে। যদি বাবা মা তোমাকে মেনে না নেয়।
-> তা পরে দেখা যাবে, তুমি আমাদের সম্পর্কের কথা ওনাদেরকে বলো।
-> হুম!
ফোন রেখে নিলিমা তার মায়ের কাছে গেল। মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-কিরে কিছু বলবি নাকি।
-মা ফারহান খুব ভালো ছেলে। দেখতেও বেশ সুন্দর।
-ফারহান ? কে ফারহান ?
নিলিমা'র ঠোট কাপতে লাগলো। তু তু করে বলল -
মা ফারহান মানে...এ..এ...
ফারহান মানে কি বল..?
আমি ফারহানকে ভালোবাসি মা।
নিলিমা'র মা নিলিমা'র মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো..
এ'কি বলছিস তুই নিলি!
হুম মা! অনেক দিন থেকেই আমাদের সম্পর্ক। ফারহান আমাকে অনেক পছন্দ। বিয়ে করতে চায় আমাকে সে। তোমরা কি ফারহানকে মেনে নিবে না মা..?
নিলিমা'র মুখে এমন কথা শোনে 'থ' হয়ে গেল তার মা..
কি বলছিসরে নিলি মা! তুই কাউকে ভালোবাসিস!
কেন মা ভালোবাসা কি অপরাধ কিছু.?
তা জানিনা তবে এটা তোর বাবা কোনোদিন মেনে নিবেনা। তোর বাবা আজ কালকের ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।
নিলিমা বলল - মা তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ। ফারহান আমাকে না পেলে বাচবেনা বলেছে । তুমি আর না বলোনা মা। ফারহান খুব ভালো ছেলে।
-ঠিক আছে। আমি তোর বাবাকে বলে দেখি কি বলে।
এই বলে নিলিমা'র মা তার বাবার রুমে গেলো। সবকিছু বুঝিয়ে বললো তার বাবাকে। নিলিমা'র বাবা সবকিছু শুনে বললো - ছেলে কি করে? ছেলের বংশ পরিচয় কি? কোথায় থাকে ছেলে..?
নিলিমা'র মা বলল - আমি এসব কিছুই জানিনা।
-আচ্ছা নিলি মাকে বলো ছেলেটাকে একদিন নিয়ে আসতে
নিলিমা'র মা বলল - আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলবো নিলিকে ছেলেটাকে নিয়ে আসতে
রাতে নিলিমা ফারহানকে ফোনে সবকিছু বুঝিয়ে বললো আর সকালে তাদের বাসায় আসতে বললো।
পরের দিন সকাল নয়টার দিকে ফারহান আসলো নিলিমাদের বাসায়। নিলিমা'র বাবা-মা ফারহানকে দেখে পছন্দ করলো। এবার ফারহানের কাছে তার পরিবার ও কর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলো।
ফারহান বলল - আমি পরিবারের বড় ছেলে। দুই ভাই এক বোন আমরা। বাবা মা বেচে আছে।
তোমাদের আর্থিক অবস্থার বেপারে কিছু বলবে বাবা- ফারহান বলল -
আমাদের তেমন অর্থ প্রতিপত্তি নেই। খুবই গরীব ঘরের ছেলে আমি।
ফারহানের কথা শুনে নিলিমা'র বাবা কেমন যেন অন্য রকম হয়ে গেল ।
ওহ আচ্ছা! নাও, কিছু মুখে দাও। আমি এই বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিলিমাকে দিয়ে পরে তোমাকে জানাবো কেমন
ফারহান মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো
খানিক পরেই ফারহান চলে গেলো। আর নিলিমা'র বাবা নিলিমা'র মাকে বলল - দেখো, নিলির মা, আমি বাবা হয়ে মেয়েটাকে এত গরীব সংসারে বিয়ে দিতে পারিনা। মেয়ে আমার ছোট থেকে কোনো কঠিন কাজ করেনি। আর স্বামীর বাড়িতে কিভাবে খাটবে সে ?
কথাগুলো শুনে নিলিমা'র মাও একই রকম চিন্তা করলো। পরে নিলিমাকে ডেকে নিলিমা'র মা সবকিছু জানালো।
নিলিমা কথাগুলো শুনে কাদতে লাগলো। মা আমার অর্থকড়ি লাগবেনা আমি ফারহানের কাছে অনেক সুখী থাকবো। নিলিমা'র মা বলল - দেখ মা! তোর বাবা যা করবে তোর ভালোর জন্যই করবে। তাছাড়া আবেগ দিয়ে সংসার চলে নারে মা! তুই ফারহানকে সব বুঝিয়ে বল। আর তুইও ফারহানকে ভুলে যা মা।
পরে নিলিমা তার মায়ের কথা মতো ফারহানকে সব বললো। ফারহানও শুনে বললো -
কি আর করবো নিলিমা!
আমিও আজ প্রতিষ্ঠিত নই। তোমাকে পাওয়ার মতো কোনো যোগ্যতাও নেই আমার। তুমি তোমার বাবার কথা মতো রাজি হয়ে যাও। আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো। তোমাকে পাই আর না পাই সারা জীবন তোমায় ভালোবাসবো।
কথাগুলো বলতে বলতে ফারহান ফোনের ওপাশ থেকে কাদতে লাগলো।
-তুমি কাদছো ফারহান...!?
-কই নাতো! ঠান্ডা লেগেছিলো তাই গলাটা একটু ঝরো হয়ে আছে।
আর কিছুই বললো না নিলিমা। ফোন রেখে অঝরে কাদতে লাগলো। প্রেম বুঝি মানুষকে এভাবেই কাদায়..! তাহলে প্রেম স্বর্গীয় হয় কি করে...?
তার পরের দিন একটা ভালো সমন্ধ আসলো নিলিমা'র জন্য। ছেলে মধ্যবিত্ত পরিবারেরই সন্তান। ব্যাংকে চাকরি করে ছেলে। নিলিমা'র বাবা মায়ের ছেলেকে দেখে,বেশ পছন্দ হলো। বিয়েও ঠিক হয়ে গেলো নিলিমা'র....
চলবে.............
( বিঃদ্রঃ গল্পটি পুরোই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই। শুধু মাত্র আপনাদের বিনোদন দেবার জন্যই গল্পটি লিখা ।)
ধন্যবাদান্তেঃ-(LOVE BLOG)
মওদুদ আহমেদ মধু
COMMENTS