প্রেমের গল্প, দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি, Golpo Blog, premer new golpo, new romantic story, latest novel story, current bangla love story, top love story,
গল্প: দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি?
পর্ব: তৃতীয় ।লেখক: আতিকুল ইসলাম
চট করে নিলিমা শুয়া থেকে ওঠে বসে পরলো। আচমকা হাসির শব্দে ঘুম ভাঙ্গায় নিলিমা'র সারা শরীর থরথর করে কাপতে লাগলো। গোটা রুম অন্ধকার। নিলিমা'র হাত-পা কাপছে ভয়ে। শরীরের প্রতিটা লোম যেন কাটার মতো দাড়িয়ে গেলো। এখন কোনো হাসির শব্দ নেই রুমের ভেতর। নির্জন নিস্তব্ধ হয়ে আছে পুরো রুমটা।
নিলিমা চোখ ঘুরাতেই দেখতে পেল রুমের ডান পাশের দেয়ালটায় কেমন যেন একটা কালো ছায়ার মতো দাড়িয়ে আছে। সেখান থেকেই স্পষ্ট ভাষায় হাসির শব্দ ভেসে আসছিলো হয়তো
-> নিজের আপন জনকে কেউ ভয় পায়? কেন আমাকে ভয় পাচ্ছো নিলিমা। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না নিলিমা। তোমার কাছ থেকে কেউ আমাকে আর আলাদা করতে পারবেনা।
নিলিমা কাপা কাপা সুরে বলল -
-> কে... কে...তু..মি ?
->আমি! আমি তোমার অতীত নিলিমা। তোমার আপন জন। ( জবাব দিল অবয়বটি )
এরপর নিমিষেই কালো অবয়বটি অন্ধকারে কেমন জানি মিলিয়ে গেল। নিলিমা দুই হাটুর ফাকে মুখ লুকিয়ে কাপছে। কিছুতেই যেন শরীরের কাপ থামতে চাইছেনা।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সারা রুম উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠলো। নিলিমা হাটুর ভেতর থেকে মুখ খানি বের করে ভয়ে ভয়ে দেয়ালের দিকে তাকালো। যেখানে সে অবয়বটিকে দেখেছিল। কিন্তু নিলিমা কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। তারপর নিলিমা পুরো রুমটায় চোখ ঘুরালো। কোথাও কারো কোনো অস্তিত্ত দেখতে পেলনা সে।
এদিকে ভয়ে নিলিমা'র গলা শুকিয়ে এসেছে। বিছানা থেকে ওঠে নিলিমা কাপা কাপা শরীরে গুটি গুটি পায়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। টেবিলের কাছে গিয়ে মগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢগঢগ করে খেয়ে নিল নিলিমা। পানি খাওয়া শেষ করে আবার তার বিছানায় এসে বসলো। তখনই মনে পরলো-
রুমে তো লাইট অন করা ছিলো তাহলে অন্ধকার হলো কি করে আর পরে'ই বা লাইট অন করলো কে?
কি হচ্ছে আমার সাথে কিছুদিন ধরে এসব
কে সে? কেন আমার কাছে বার বার আসছে সে? এটা আমার কেমন অতীত? গতকালকে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা তাহলে স্বপ্ন ছিলো না।
ভাবতে ভাবতে নিলিমা যেনো ক্লান্ত হয়ে পরলো। এরপর চুপটি শুয়ে পরলো বিছানায়। কিন্তু নিলিমা'র চোখে ঘুম আসছে না। চোখ বন্দ করলেই যেন চোখের সামনে কালো ছায়াটি ভেসে ওঠে। কিছুতেই দু-চোখের পাতা এক করতে পারছেনা সে।
নিলিমা'র পাশে থাকা বালিশটাকে সে বুকের সাথে চেপে ধরলো। নিজেকে যেন কোথাই লুকিয়ে নিতে চায় নিলিমা। তবুও তার চোখে ঘুম আসছেনা। বার বার অবয়বের বলা কথাগুলো কানে বাজছিলো নিলিমা'র। এমন অস্বাভাবিক ভাবেই কাটলো নিলিমা'র এই রাতটা।
সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে নিলিমা। আগের দিনের মতোই বালিশের নিচে একটা চিরকুট দেখতে পায় সে।
নিলিমা চিরকুটটি হাতে তুলে নিল। চিরকুটটি খুলে ভেতরে ঠিক আগের মতোই তিনটি বেলিফুল দেখতে পায়। বেলিফুলে সেই মন মাতানো সুভাস বেরিয়ে আসছে।
পাশেই লিখা " ভয় পেওয়ো না নিলিমা। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমি তোমাকে ভিষন ভালোবাসি। "
লিখাটা পড়ে নিলিমা'র ভালো লাগলেও রাতের কথা মনে পড়ায় আবার মন খারাপ হয়ে গেলো।
নিলিমা বিছানা ছেড়ে ওঠে ফ্রেশ হয়ে বাবা-মার সাথে বসে এক সাথে সবাই নাস্তা করলো। দেখতে দেখতে নিলিমা'র স্কুলের সময় হয়ে এলো। নিলিমা'র বান্ধবীরা এসেছে নিলিমাকে নিতে। নিলিমা বান্ধবীদের দেখে ভিষন খুশি হলো। ল নিলিমা তার বান্ধবীদের সাথে বাসা থেকে স্কুলে রওয়ানা হলো। রাস্তায় অনেক কথা হলো বান্ধবীদের সাথে।
নিলিমা একবার ভাবলো রাতের ঘটনার কথা তার বান্ধবীদেরকে বলবে। কি যেন আবার মনে করে নিলিমা তাদের কিছুই বলল না। যেতে যেতে সবাই স্কুলে পৌছে গেলো। নিলিমা'র আজ ভালোই লাগছে। ইংরেজি ক্লাস চলছে। এমন সময় ক্লাসের একজন মেডাম নিলিমাকে ডেকে নিয়ে বলল।
-> তোমার বাসা থেকে কল আসছে। এখনি তোমাকে বাসায় যেতে বলেছে।
নিলিমা এই কথা শুনে তারাতারি স্কুল থেকে বের হয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলো। তখনো সময়টা ঠিক দুপুর বেলা। নিলিমা খুব দ্রুত পায়ে হাটছে। মাঝ পথে আসার পর নিলিমা'র সামনে আবার সেই কালো কুচকুচে কুকুরটাকে দেখতে পেল। কেমন করে যেন এক দৃষ্টে নিলিমা'র দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা কুকুরটাকে দেখে নিলিমা ভয়ে চিৎকার করে ওঠলো।
দুরের দোকানের পাশ থেকে একটা সাহসী ছেলে দৌড়ে এসে কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিল। আর বলল
-> বেশি ভয় পেয়েছো বুঝি।
যাও! আর কিছু হবেনা।
নিলিমা কিছু বলছে না। 'থ' হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ছেলেটি আবার বলল-
কি বেপার । বেশি ভয় পাচ্ছো ?
-> হুম। নিলিমা মাথা নেড়ে জবাব দিল
ছেলেটি বলল -
ঠিক আছে চল। আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।
এই বলে ছেলেটা নিলিমা'র পাশে পাশে হাটতে লাগলো। হাটতে হাটতে নিলিমা'র বাড়ির গেইটের সামনে এসে পৌছে গেলো। রাস্তায় কোনো কথাই হলোনা ছেলেটার সাথে।
এবার ছেলেটার যাবার পালা। যাবার আগে নিলিমাকে জিজ্ঞেস করলো-
-> তোমার নামটা কি জানতে পারি?
-> নিলিমা! (হালকা হেসে জবাব দিল নিলিমা।)
ছেলেটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিলিমা'র দিকে একবার ভালো ভাবে তাকিয়ে চলে গেলো। নিলিমা বাসার ভেতরে ঢুকে গেল। বাসায় ঢুকে দেখে নিলিমা'র বাবা খুব অসুস্থ। নিলিমা কাধ থেকে ব্যাগটা রেখেই বাবার পাশে গিয়ে বসলো। বাবার কখন কি লাগবে নিলিমা তার তদারকি করতে লাগলো।
নিলিমা'র মা এসে বলল -
-> তুই স্কুলে যাবার কিছুক্ষন পর থেকেই তোর বাবা কেমন জানি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। মাথায় কোনো কাজ করছিলো না তাই তুকে স্কুল থেকে চলে আসতে ফোন করেছি মা। একা একা আমি কি করতে পারি বল। তুই আসছিস এখন তুই তর বাবার কাছে একটু বস।
--ঠিক আছে মা।
নিলিমা'র মা রান্না ঘরে চলে গেলো। নিলিমা তার বাবার দেখাশোনা করছে। এদিকে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। নিলিমা তার বাবাকে খাইয়ে নিজেও খাবার শেষ করলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে পরলো নিলিমা।
বিকেল বেলা ঘুম থেকে ওঠে সে। ফ্রেশ হয়ে নিলিমা বাগানের দিকে গেলো। কি সুন্দর বাগানের ফুলগুলি। ছোট ছোট গাছগুলিতেও ফুল ফুটেছে। নিলিমা পুরো বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। নিলিমা'র নজর পরলো বেলিফুল গাছটার দিকে।
বেলিফুল গাছটার দিকে নজর পরতেই নিলিমা গাছটার দিকে এগিয়ে গেল। আজ অনেক ফুল হয়েছে গাছটায়। নিলিমা সেখান থেকে আবারো কয়েকটা ফুল ছিড়ে তার খোপায় গুজে দিল। আজও যেনো নিলিমাকে বেশ সুন্দর লাগছে। দেখতে দেখতে চারদিকে অন্ধকারের বিন্দু বিন্দু আভা নামতে শুরু করলো। নিলিমা বাসার ভেতর চলে আসলো। রাতের কাজগুলো শেষ করে নিলিমা তার বাবা-মার সাথে রাতের খাবার শেষ করে বাবাকে ঔষধ খাইয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে ঢুকে নিলিমা কেমন যেন একটা ভারী ভাব অনুভব করলো। রুমের ভেতরটা কেমন যেন মন মাতানো সুভাসে ভরে ওঠেছে। নিলিমা নিঃশ্বাস ভরে যেন সেই মন মাতানো সু-ভাস নিচ্ছে। এবার নিলিমা শুবার জন্য বিছানায় গেলো। বিছানায় বসতেই রুম থেকে সুভাসটা আর পাচ্ছেনা নিলিমা। অবাক হয়ে গেল সে।
সুভাস! এটাও উধাও..? কি হচ্ছে এসব!
নিলিমা শুতে যাবে ঠিক এমন সময় কোথায় থেকে যেন একটা নাকী কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো নিলিমা'র কানে...
চলবে ..........
(বিঃদ্রঃ এই গল্পটি পুরোই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো রকম মিল নেই। শুধু মাত্র আপনাদের বিনোদন দেবার জন্যই গল্পটি লিখা।)
ধন্যবাদান্তেঃ-(LOVE BLOG)
মওদুদ আহমেদ মধু
COMMENTS