প্রেমের গল্পঃ- দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি, (৬ষ্ঠ পর্ব) @Golpo Blog, premer golpo, love story, romantic story, tob bangla love story, latest bangla novel,
দৃষ্টির আড়ালে কে তুমি ?
পর্ব: ৬ষ্ঠ
লেখকঃ আতিকুল ইসলাম
সামনে সোমবার নিলিমা'র বিয়ে। আজ শুক্রবার আর মাত্র তিনদিন বাকি। এদিকে নিশাদের আত্বা নিলিমাকে বলছে - তুমি এই বিয়ে করোনা নিলিমা। তুমি সুখী হতে পারবেনা তাছাড়া তুমি শুধু আমার। তুমি আমার জন্ম-জন্মান্তরের সাথী। মৃত্যুও যখন আমাদেরকে আলাদা করতে পারেনি তখন কেউ কোনোদিন তোমার আমার বন্ধনকে ছিন্ন করতে পারবেনা।
কথাটা শুনে নিলিমা অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। কালো অবয়বটির দিকে তাকিয়ে বলল -
-> মৃত্যু আলাদা করতে পারেনি মানে ?
-> ও তুমি বুঝবেনা নিলিমা। সময় হলে সবই বুঝতে পারবে তুমি ।
তখন নিলিমা বলল - দেখো আমি বাবাকে কিছু বলতে পারবো না। তাছাড়া ডাক্তার বলেছে বাবাকে কোনো প্রকার প্রেশার না দিতে।
নিশাদের আত্বা বললো - ঠিক আছে নিলিমা আমি দেখছি কি করতে পারি।
এই বলে নিশাদের আত্বা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো।
আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসছে নিলিমা'র বিয়ের দিন। দিনটা রবিবার ঠিক বিয়ের আগের দিন। ছেলে পক্ষ্য থেকে বার্তা আসলো ছেলে মারাত্বক ভাবে কার এক্সিডেন্ট করেছে ছেলে হাসপাতালে আছে।
এই বিয়ে হবেনা।
কথাটা শুনে নিলিমা'র আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে এটা নিশাদের কাজ । নিলিমা তখন আবার নিশাদের আত্বাকে ডাকলো, আর বললো-
তোমায় কে বলেছে ঈশানকে এক্সিডেন্ট করাতে? ( ঈশান হলো সেই ছেলে যার সাথে নিলিমা'র বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।) কেন এভাবে এতটা কষ্ট দিলে তুমি ঈশানকে?
নিশাদ-
-দেখো! আমি ঈশানকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি নিলিমা অন্যজনকে ভালোবাসে। তবুও ঈশান বুঝতে চাইছিলো না। বার বার ঈশানের একই কথা সে তোমাকে বিয়ে করবেই। আমি ঈশানকে আমার ভয়াবহ দৃশ্যের কিছু নমুনাও দেখিয়েছিলাম। এরপরেও ঈশান এসব পাত্তা দিলোনা। গাড়ি করে সোজা অফিসের দিকে রওয়ানা হলো। বেস!
আমি আর কি করবো! ছো মেরে ঈশানের গাড়িটাকে একটা গাছের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে উল্টে দিলাম কাজ হয়ে গেলো।
নিলিমা এসব শুনে কেমন যেন হয়ে গেলো। নিশাদ বলল শুনো -
ভাবনার কোনো কারন নেই। ঈশান মরবেনা তবে বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে আর তুমিও তোমার বাবা-মায়ের চোখে প্রতিবাদী মেয়ে হবেনা। ওনারা মনে করবেন, তাদের মেয়ের কোনো দোষ নেই। মেয়ে তো রাজিই ছিলো। এতে করে তুমি চাপ থেকে বেচে যাবে। আর তোমার বাবা অতটা আঘাতও পাবেনা যতটা আঘাত তুমি বিয়েতে রাজি না হলে পেতো। তবে এটা ঠিক মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় তোমার বাবা কিছুটা হতাশা অনুভব করবেন। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
এই ঘটনার কিছুদিন পর নিলিমা'র জন্য আরো একটা সমন্ধ আসলো। ছেলে ভালো পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশ এয়্যারলাইন্স_এ কাজ করে ছেলে। নিলিমা দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় ছেলে পক্ষ্য রাজি হয়ে গেলো। সামনের শুক্রবারেই তাদের বিয়ে।
এদিকে ফারহান নিলিমা'র সাথে প্রতিদিন কথা বলে। নিজের ভালোবাসাকে বুকে চেপে রেখে নিলিমাকে নতুন জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখায়। তবুও যেন নিলিমা'র মন মানতে চায়না। নিলিমা শুধু দু-চোখের অশ্রু ঝরায় আর ফারহানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে।
ঐদিকে ফারহানও নিলিমা'র চাপা আর্তনাদের দীর্ঘ নিঃশ্বাসগুলো শুনে দু-চোখ থেকে বৃষ্টি ঝড়ায়। তবুও নিলিমাকে শক্তি জোগায় ফারহান ।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। বিয়ের ঠিক আগের দিন খবর এলো ছেলে কার এক্সিডেন্ট করেছে। এবারের এক্সিডেন্ট'টাও ঠিক আগের মতোই গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে উল্টে গেছে।
এবাও ভেঙ্গে গেলো নিলিমা'র বিয়ে।
এমন কান্ড দেখে নিলিমা'র বাবা একদিন মেয়ের চিন্তায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। কি হবে আমার নিলিমা'র। কেন আমার নিলিমা'র সাথে এমন হচ্ছে। নিলিমা এসব দেখে নিশাদকে ডাকলো আর বলল - দেখো নিশাদ ! তুমি কে আর কেনই বা আমাকে এতটা কেয়ার করছো আর কেনই বা আমাকে তোমার অতীত হিসেবে ঘোষনা করছো আমি তার কিছুই জানিনা।
আমি ফারহানকে ভালোবাসি। ফারহান ও আমাকে ভালোবাসে। তারপরেও আমাদের পরিবারের কথা শুনছি আমি আর বাবা-মায়ের মুখে হাসি রাখার জন্য ফারহান আমাকে ভুলে গেছে। আর তুমি কেন এসব করছো ?
হ্যা! তা ঠিক। আমার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি খুশিই ছিলাম। তবে বাবা কিছুটা হতাশা অনুভব করছিলো। কিন্তু এখন দেখো! বাবা কতটা অসুস্থ হয়ে পরেছে।
মেয়ের বিয়ে দিতে না পারা অথবা মেয়ের বিয়ে বার বার ভেঙ্গে গেলে বাবারা কতটা কষ্ট পায় তা ইতিহাস পড়ে জানতে হবেনা নিশাদ! আমার বাবাকে দেখলেই বুঝা যায়।
আমি আমার বাবার কোনো কষ্ট সজ্য করতে পারিনা নিশাদ। দয়া করে তুমি আর এমনটা করোনা। বিয়ে হলে হোক তবুও আমার বাবা ভালো থাকুক। আমি যদি সত্যিই তোমার অতীতের ভালোবাসা হয়ে থাকি তাহলে আমাদের ভালোবাসা স্বার্থকতা পাবে। আমি তোমারই থাকবো নিশাদ।
কথাগুলো বলতে বলতে নিলিমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। নিশাদ আর কিছু বলল না। আপসে করে নিশাদের আত্বা কেমন যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো চোখের পলকে। নিলিমা খাটের কোণায় হেলান দিয়ে বসে কাদতে লাগলো।
এর কিছুদিন বাদেই নিলিমা'র বাবার বন্ধু একটা ভালো ছেলের সন্ধান নিয়ে নিলিমাদের বাসায় আসে। এদিকে নিলিমা'র বাবা এখন অনেকটাই সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছেন।
নিলিমা'র বাবা তার বন্ধুকে বলল - দেখো সাদেক, মেয়েটা আমার খুবই ভালো তবুও কেন জানিনা মেয়েটার কপালটা এত খারাপ। একে একে দুইটা বিয়ে ভেঙ্গে গেলো। তাও আবার সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর।
কথাগুলো বলে নিলিমা'র বাবা নিখিল সাহেব একটা দীর্ঘ-শ্বাস ফেললো। নিলিমা'র বাবার বন্ধু সাদেক সাহেব বলল - যা হবার হয়েছে বন্ধু। তাতো আর ফিরে পাওয়া যাবেনা এইবার এই ছেলেটাকে দেখো। ঢাকায় থাকে। ঢাকায় নিজের নামে নিজস্ব কারখানা আছে। বাবা মায়ের আদরের ছেলে। তোমার মেয়ে সুখেই থাকবে।
কথাগুলো শুনে নিলিমা'র বাবা নিখিল সাহেব কোনো আপত্তি করলো না। সাদেক সাহেব বলল -
আগামি রবিবার ছেলের বাবা মা নিলিমা মাকে দেখতে আসবে কেমন। এখন তাহলে আমি আসি বন্ধু। এই বলে সাদেক সাহেব বিদায় নিলেন।
রবিবার সকাল বেলা ছেলে সহ তার বাবা মা নিলিমাদের বাসায় আসলো নিলিমাকে দেখার জন্য। নিলিমাকে দেখে সবার পছন্দ হয়ে গেলো। সামনের সোমবারেই নিলিমা'র বিয়ে। মাঝে মাত্র একটি রাত। রাত পেরোলেই নিলিমা স্বামীর বাড়ি চলে যাবে।
তাড়াহুড়ো করে বিয়ের বাজার সদাই করা হলো। নিলিমা'র বিয়ে বলে কথা। রাতের মধ্যেই সকল আত্বীয় স্বজনকে জানিয়ে দেয়া হলো। তাড়াহুড়ো করে সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলো। বিয়ের দিন একে একে সবাই এসে হাজির হলো। নিলিমাকে আজ এতটাই সুন্দর লাগছে যে আসমানের চাঁদ যেন মাটিতে নেমে এসেছে। সবাই নিলিমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। এমন সাজে যেন কাউকে আর কখনো দেখেনি কেউ। অনেক ধুমধাম করে নিলিমা'র বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।
ধীরে ধীরে নিলিমা'র বিদায় বেলা ঘনিয়ে এলো। নিলিমা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো। নিলিমা'র মা কাদছে নিলিমাকে বুকে ধরে। কান্নায় যেন ভেঙ্গে পড়লো নিলিমা'র বাবা মা। কান্না ভরা মজলিস থেকে সবার ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিলো নিলিমা। নিলিমাকে ছাড়া এই বাড়ি আজ পুরোই ফাকা, পুরোই শূন্য। নিলিমা'র বাবা নিখিল সাহেব মেয়ের যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টে। এভাবেই ফুরিয়ে আসলো বেলা।
স্বামীর বাড়িতে পৌছে গেলো নিলিমা। অচেনা জায়গা নতুন সংসার! নিলিমা'র পা পরাতে যেন তার শশুড় বাড়ি ধন্য হয়ে গেলো। জনে জনে লোক আসছে নিলিমাকে দেখতে। নতুন বউয়ের প্রশংসায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে পুরো বাড়ি। নতুন বউকে দেখার পর্ব শেষ করে নিলিমাকে একটা রুমে নিয়ে বসানো হলো। তারপর কয়েকজন মেয়ে এসে নিলিমাকে বলল -
ভাবি সাহেবা ভাইজানকে যেন রুপের আগুনে পুড়িয়ে ফেলোনা। ভাই সাহেব কিন্তু তোমার রুপে উন্মাদ হয়ে আছে। এত সহজে যেন ধরা দিওনা।
আরেকজন বললো- বাবি সাহেবা পারবে তো ভাইজানকে সারা জীবন আকড়ে ধরে রাখতে? তোমার আচলে বেধে নিও ভাইজানকে এই রাতের বাধন নাকি সারা জীবন থেকে যায়!! এসব বলে হাসি তামাশা করে নিলিমাকে একা বসিয়ে রেখে সবাই চলে গেলো।
নিলিমা বসে বসে ভাবছে আজ সেই রাত। যেই রাতের জন্য একটা মেয়ে অধীর হয়ে অপেক্ষা করে। আজ সেই রাত, যেই রাত জীবনে কেবল একবারই আসে। আর এমন মধুময় রাতে যদি ফারহান তার পাশে থাকতো কতই না সুখী হতো সে। আমাকে এই বিয়ের সাজে দেখবে বলে কত স্বপ্ন ভুনে ছিল ফারহান। স্বপ্ন বুঝি এভাবেই গুড়িয়ে যায় মানুষের জীবন থেকে! এভাবেই বুঝি বুকভরা হাহাকার নিয়ে বেচে থাকতে হয়! এসব ভাবতে ভাবতে নিলিমা'র চোখের কোণে পানি চলে আসলো...।
চলবে .............
( বিঃদ্রঃ গল্পটি পুরোই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই )
COMMENTS