হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য গল্প, "পরীর মেয়ে মেঘবতী" @Golpo Blog

SHARE:

হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য, "পরীর মেয়ে মেঘবতী", @Golpo Blog, humayun ahmed er sishu golpo porir meye meghboti, humayn ahmed er sishu sahitto,

পরীর মেয়ে মেঘবতী------

 
হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য, "পরীর মেয়ে মেঘবতী" @Golpo Blog
আজকের দিনটা অন্যসব দিনের মত না।

আজ খুব আলাদা একটা দিন। কেউ তা বুঝতে পারছে না বলে নাবিলের একটু মন খারাপ লাগছে। আচ্ছা, আজকের দিনটা যে আলাদা তা কেউ বুঝতে পারছে না কেন?

না না আজ তার জন্মদিন না। দু’মাস আগে নাবিলের জন্মদিন হয়ে গেছে। ছ’টা মোমবাতি জ্বালিয়ে সে গাল ফুলিয়ে ফুঁ দিয়েছে। এক ফুঁতে সব মোমবাতি নেভাতে হবে। সহজ ব্যাপার না। এক ফুঁতে সব বাতি নেভাতে পারলে একটা সাংঘাতিক ব্যাপার হয়। তখন চোখ বন্ধ করে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। নাবিলের ভাগ্য ভালো, সে এক ফুতে সব নেভাতে পেরেছে। এর আগে কখনো পারে নি, এই প্রথম পারল। গতবার সে সব বাতি নিভিয়ে ফেলেছিল। ও আল্লাহ, ফুঁ বন্ধ করতেই ফুট করে একটা বাতি জ্বলে গেল। তার আর কিছু চাওয়া হল না।

এইবার সে পেরেছে। সব বাতি নিভে যাবার পরেও সে অনেকক্ষণ ফুঁ দিয়েছে।

যেন গতবারের মতো না হয়। সবাই এমন হাততালি দিচ্ছিল যে তার লজ্জাই লাগছিল। মা বললেন, ‘নাবিল ব্যাটা, মেক এ উইশ।’ মেক এ উইশ মানে হচ্ছে কিছু একটা চাওয়া। সে চোখ বন্ধ করে একটা জিনিস চেয়েছে। জিনিসটা হচ্ছে সে যেন আলাদা একটা ঘর পায়। সেই ঘরে সে একা থাকবে, আর কেউ থাকবে না। ঘরে থাকবে ছোট্ট বিছানা, ওয়াল্ট ডিজনির ছবি, লিটল মারমেইড, লায়ন কিং, মুগলি।

আজ সে সেই ঘরটা পেল।

সকাল থেকেই মা ঘর সাজাচ্ছেন। নাবিল একবার বলেছে, মা তোমার হেল্প লাগবে? হেল্প হল একটা ইংরেজি শব্দ। হেল্পের মানে সাহায্য। নাবিল স্কুলে অনেক ইংরেজি শব্দ শিখেছে। মা বলেছেন, হেল্প লাগবে না ব্যাটা।

মা তাকে সবসময় আদর করে ব্যাটা বলেন। ব্যাটা মানে হচ্ছে লোক। তবে ছোট বাচ্চাদের ব্যাটা বললে সেটার অর্থ লোক হয় না। সেটার অর্থ হয় আদরের চাঁদসোনা, লক্ষ্মীসোনা, পুটুস পুটুস।

ঘরটা এত সুন্দর করে সাজানো হল যে নাবিলের প্রায় কান্না পেয়ে যেতে লাগল। সে কেঁদেই ফেলত। কিন্তু ছেলেদের কাঁদতে নেই বলে কাঁদল না। ছোট মেয়েদের কাঁদলে অবশ্যি তেমন দোষ নেই। নাবিলের ছোটবোনের নাম এশা। সে খুব কাঁদে। মা যদি হাসি মুখে নাবিলকে কিছু বলেন তাতেও সে কাঁদবে। ঠোঁট বাঁকিয়ে নাকিসুরে বলবে ‘কেন তুমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলে এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।’

বাবা প্রায়ই বলেন, এশা আসলে পেত্নীদের ছানা। তারা ভুল করে আমাদের বাসায় রেখে গেছে। পেত্নীরা নাকে কথা বলে বলেই এশাও রেগে গেলে নাকে কথা বলে। এগুলি অবশ্যি বাবার বানানো কথা। বড়রা খুব বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে।

ঘর সাজানো হয়ে যাবার পর নাবিলের মা বললেন, ‘তারপর ব্যাটা, একা একা যে ঘুমোবে, ভয় পাবে নাতো?’

নাবিল বলল, ‘না।‘

‘ভয় পাবার কিছু নেই। আমরাতো পাশের ঘরেই আছি। তোমার দরজা থাকবে খোলা। আমাদের দরজাও থাকবে ভোলা। ভয় পেলে ডাকবে।‘

‘আমি ভয় পাব না মা।‘

‘তোমার কি ঘর পছন্দ হয়েছে ব্যাটা?

‘হ্যাঁ।‘

‘বেশি পছন্দ হয়েছে না অল্প পছন্দ হয়েছে?’

‘বেশি পছন্দ হয়েছে মা। এত বেশি পছন্দ হয়েছে যে আমার কেঁদে ফেলতে ইচ্ছা করছে।

মা হেসে ফেললেন। মাকে হাসতে দেখে এশা রেগে গিয়ে বলল, ‘মা, তুঁমি ভাঁইয়ার দিকে তাঁকিয়ে হাঁসবে নাঁ। আঁমার দিঁকে তাঁকিয়ে হাস।’

মা তখন এশার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

রাতে বাবা তাকে ঘরে শুইয়ে দিতে এলেন। মা এশাকে গল্প করে ঘুম পাড়াচ্ছেনতো তাই তিনি আসতে পারলেন না।

বাবা নাবিলের গলা পর্যন্ত চাদর টেনে দিলেন। কপালে চুমু দিলেন। তারপর চুলে আঙুল দিয়ে বিলি দিতে দিতে বললেন, কী কাণ্ড, আমার ছেলেটা এত বড় হয়ে গেছে। একা একা নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছে। তার কী সাহস! আমি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কই আমারতো এখনো এত সাহস হয় নি। একা একা আমি ঘুমোতে পারি না। আমার সঙ্গে নাবিলের মাকে ঘুমাতে হয়, এশাকে ঘুমোতে হয়। তারপরও আমার ভয়ে শরীর কাঁপে।

নাবিল মনেমনে হাসল। সে জানে তার বাবার খুবই সাহস। তার বাবা ইচ্ছা করলেই একা ঘুমোতে পারেন। কিন্তু বড়রা ছোটদের সাথে এরকম মজা করে মিথ্যা কথা বলে। বড়রা মনে করে ছোটরা কিছু বুঝতে পারছে না। আসলে সবই বুঝতে পারে।

নাবিল বলল, ‘বাবা, একটা গল্প বলতো।’

বাবা মুখ শুকনো করে বললেন, ‘কী গল্প?’

নাবিল মনেমনে খুব হাসল। গল্প বলার কথা বলতেই বাবার মুখ শুকিয়ে গেছে। কারণ বাবা গল্প বলতে পারেন না। মা সব গল্প জানেন, বাবা কোনো গল্পই জানেন না। একবার সে বাবাকে সিনডারেলার গল্প বলতে বলল। বাবা গল্প শুরু করলেন—’এক দেশে ছিল এক সিনডারেলা। তার মনে বেজায় দুঃখ। কারণ তার কোনো ছেলেপুলে নেই। মনের দুঃখে তার সোনার অঙ্গ কালি হয়ে গেল।‘

নাবিল হাসতে হাসতে বাঁচে না। বাবাকে বিপদে ফেলার সবচে সহজ বুদ্ধি হচ্ছে। তাঁকে গল্প বলতে বলা। আজ নাবিলের খুব ইচ্ছা করছে বাবাকে বিপদে ফেলতে। সে আবারো বলল, ‘বাবা গল্প বলো।‘

বাবা আমতা আমতা করে বললেন, কিসের গল্প রে?

‘পরীর গল্প।’

‘ও আচ্ছা পরীর গল্প। হুঁ। পরী।‘

‘পরীর গল্প জান না বাবা?

‘জানব না কেন। অবশ্যই জানি। এক দেশে ছিল এক পরী। তারপর কী হল শোন। পরীর মনে বেজায় দুঃখ। কারণ তার কোনো ছেলেপুলে নাই। মনের দুঃখে তার সোনার অঙ্গ কালি হয়ে গেল।

নাবিল বলল, ‘বাবা চুপ করতো। থাক তোমার গল্প বলতে হবে না। তুমি আসলে পরীর কোনো গল্পই জান না। বলতো দেখি পরীরা কী খায়?’

‘কী আবার খাবে। ভাত-মাছ-ভেজিটেবল খায়। গাজর খায়। গাজরে আছে ভিটামিন এ। চোখের জন্য ভাল। পরীরা বেশি করে গাজর খায় বলে ওদের চোখ খুব ভাল থাকে। তারা আকাশ থেকে দেখতে পায়।‘

‘বাবা, তুমি কিছুই জান না। পরীরা ফুলের মধু খায়। আচ্ছা বলতো পরীদের জামা কাপড় কী দিয়ে তৈরি হয়?’

‘কী দিয়ে আবার, সূতা দিয়ে। ফিফটি পার্সেন্ট কটন আর ফিফটি পার্সেন্ট সিনথেটিক। শুধু সিনথেটিক কাপড় ওরা পরতে পারে না, গা কুটকুট করে।’

‘পরীদের ব্যাপারে বাবা তুমি কিছুই জান না। ওদের জামা-কাপড় তৈরি হয় চাঁদের আলোর সূতা দিয়ে।‘

‘ও আচ্ছা। চাঁদের আলো দিয়ে সূতা হয়। তাইতো জানতাম না।‘

‘চাঁদের চড়কা-বুড়ি কী করে? সূতা কাটে না?’

‘আরে তাইতো, চড়কা-বুড়ির ব্যাপারটাই ভুল মেরে বসে আছি।’

‘পরীরা পৃথিবীতে কখন আসে তা কি তুমি জান বাবা?’

‘জানি না। কখন আসে?’

‘যখন খুব জোছনা হয় তখন আসে। নির্জন পুকুরে ওরা সাঁতার কেটে গোছল করে।‘

‘পরীর দেশে পুকুর নেই?’

‘আছে বোধহয়। তবু পৃথিবীর পুকুর ওদের বেশি ভাল লাগে।‘

‘এত কিছু তুমি জানলে কী করে?’

নাবিল জবাব দিল না। মনেমনে হাসল। বড়দের ধারণা শুধু তারাই সবকিছু জানে। কিন্তু ছোটরাও যে অনেক কিছু জানে তা তারা ভুলেই যায়।

জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছিল, নাবিলের বাবা জানালা বন্ধ করলেন। তারপর নাবিলের মাথার চুল নিয়ে ইলিবিলি খেললেন। এক সময় নাবিল ঘুমিয়ে পড়ল।

তার ঘুম ভাঙল খুটখাট শব্দে। সে চোখ মেলে দেখে-খুবই অবাক কাণ্ড! একটা পরীর মেয়ে তার মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে। নাবিলের সব খেলনা সে জড়ো করেছে। খেলছে আপন মনে। পরীরা সুন্দর হয়, নাবিল জানে। তারপরও এত সুন্দর হয়। নাবিলের ধারণা ছিল না। মনে হচ্ছে গা থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। ছোট্ট একটা ডুরে শাড়ি পরে আছে। শাড়িটাও কত সুন্দর! ঝলমল করছে। হবে না, চাঁদের আলোর সূতার তৈরি শাড়ি। আর পরী মেয়ের সোনালি পাখাদুটিও কত সুন্দর! সে আপন মনে গান করছে আর খেলছে। কী মিষ্টি গানের গলা! মাঝে মাঝে আবার গান থামিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

নাবিল যে বিছানায় উঠে বসেছে সেটা পরী মেয়েটি দেখেছে। কিন্তু সে তার খেলা বন্ধ করছে না।

নাবিল বলল, এই পরীর মেয়ে। এই। পরীর মেয়ে চোখ তুলে তাকাল। তারপর আবার আগের মতোই খেলতে লাগল।

মনে হচ্ছে মুখ টিপে হাসছে।

নাবিল বলল, ‘তুমি ঘরে ঢুকেছ কী ভাবে?’

সে হাত উঁচু করে জানালা দেখিয়ে দিল। ওমা, থাই এলুমিনিয়ামের জানালা খোলা। সে তাহলে এই খোলা জানালা দিয়েই ঢুকেছে!

বাবা জানালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মেয়েটা নিশ্চয়ই টেনেটুনে খুলেছে। মেয়েটাতো দুষ্টু আছে। জানালা খোলা বলেইতো নাবিলের এত শীত লাগছে। ঠাণ্ডা লেগে তার জ্বর না হলেই হয়। ঠাণ্ডা লাগলে নাবিলের আবার টনসিল ফুলে যায়।

নাবিল বলল, ‘এই, তুমি যে আমার সব খেলনা ছড়িয়ে একাকার করেছ, মা দেখলে খুব রাগ করবে। ঘর নোংরা হচ্ছে তো।’

পরীর মেয়ে মিষ্টি করে বলল, ‘যাবার সময় আমি গুছিয়ে রেখে যাব।‘

‘তোমার নাম কী?’

‘মেঘবতী।‘

‘তুমি কী আমার সঙ্গে খেলবে?’

‘না আমি একা একা খেলব।’

নাবিল বিছানা থেকে নেমে এসে মেঘবতীর সামনে বসল। সে কিছু বলল না। আশ্চর্য মেয়েতো! আপন মনে খেলেই যাচ্ছে। নাবিল মুগ্ধ হয়ে দেখছে। এত কাছে থেকে সে পরী দেখবে কোনোদিন ভাবে নি। তার খুব ইচ্ছে করছে পরীর পাখাটা একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে।

‘তোমার পাখা একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখব?’

‘না।’

মেঘবতীর মুখটা কী সুন্দর! বড় বড় চোখ। চোখের মণিগুলি একটু মনে হয় নীলচে। মেয়েটার থুতনিতে একটা কাটা দাগ।

নাবিল বলল, ‘তোমার থুতনিতে কী হয়েছে?’

‘কেটে গেছে।’

‘কীভাবে কেটেছে?’

‘এক জোছনারাতে আমরা রাজবাড়ির পুকুরঘাটে নাচ করছিলাম তখন পা পিছলে পড়ে থুতনি কেটে গেছে।‘

‘জোছনা-রাতে তোমরা নাচ কর?’

‘হুঁ। নাচ করি, গান করি, পানি ছিটা-ছিটি খেলা করি। খুব মজা করি।’

‘আমাকে একদিন নিয়ে যাবে?’

‘তোমাকে নেব কী করে? তুমি কী উড়তে পার?’

‘তুমি কোন ক্লাসে পড়?’

‘আমরাতো পড়ি না। আমরা শুধু নাচ করি আর গান করি। আর আকাশে উড়ে বেড়াই।’

‘আমি কেজি ওয়ানে পড়ি। বাংলা পড়ি, ইংরেজি পড়ি, অংক করি। এডিশান পারি। তুমি এডিশান পার? এডিশান হল যোগ।‘

‘না। তুমি ফুলের ইংরেজি কী জান?’

‘না।’

‘ফুলের ইংরেজি হচ্ছে ফ্লাওয়ার। আকাশের ইংরেজি হচ্ছে স্কাই। বিড়াল হল ক্যাট।‘

পরীমেয়েটি নিজের মনে খেলেই যাচ্ছে। একেকটা খেলনা হাতে নেয়, কিছুক্ষণ খেলে। সেটা রেখে আরেকটা খেলনা নেয়। নাবিল বলল, তুমি কী রোজ রাতে এসে খেলবে? আমার আরো খেলনা আছে।

‘না। আর আসব না।’

‘আর আসবে না কেন?’

মেঘবতী জবাব দিল না, খেলেই যেতে লাগল। সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। শোয়া মাত্রই ঘুম।

তার ঘুম ভাঙল ভোরবেলা। ঘর-ভর্তি আলো। জানালা বন্ধ। প্রতিটি খেলনা আগের জায়গায় আছে। মেঘবতী যাবার আগে সব খেলনা গুছিয়ে রেখে গেছে। ফেলে ছড়িয়ে যায় নি।

নাবিল পরীর মেয়ে মেঘবতীর গল্প সবার আগে বাবার সঙ্গে করল। নাবিলের বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলেন। নাবিল বাবার কানেকানে গল্পটা বলল। বাবা বললেন, ইশ, তুমি রাতে আমাকে ডাকলে না কেন? আমরা মেয়েটাকে বলে-কয়ে রেখে দিতাম। তারপর বড় হলে তোমার সঙ্গে বিয়ে দিতাম। একটা পরীবৌমার আমার খুব শখ। সে ঘরময় উড়ে বেড়াত।

নাবিলের খুব মন খারাপ হল। কারণ বাবা খুব গম্ভীর হয়ে কথা বললেও সে জানে বাবা তার গল্প মোটেই বিশ্বাস করছেন না।

নাবিলের মাও বিশ্বাস করলেন না। তিনি বললেন, ‘নাবিল, ব্যাটা তুমি রাতে স্বপ্ন দেখেছ। সেই স্বপ্নটাকেই সত্যি মনে করছ। ভূত, প্রেত, পরী, রাক্ষস, খোক্ষস এইসব পৃথিবীতে হয় না। এইগুলি সব গল্প। তোমার যদি একা ঘরে ঘুমোতে ভয় লাগে আমাদের সঙ্গে ঘুমাও।’

নাবিল বলল, ‘না। আমি একাই ঘুমোব।’ নাবিলের খুব আশা ছিল পরীমেয়েটিকে সে আবার দেখবে। মেয়েটি নিশ্চিয়ই খেলতে আসবে তার ঘরে। নাবিল অনেক বার জানালা খুলে অপেক্ষা করেছে তার জন্যে। রাতে ঘুম ভাঙলেই সে জানালা দিয়ে তাকিয়েছে আকাশের দিকে। যদি সে আসে! কোনদিন সে আসে নি।

তারপর অনেক অনেক দিন কেটে গেল। ছোট্ট নাবিল বড় হয়ে গেল। স্কুল পাশ করল। কলেজ পাশ করল। ইউনিভার্সিটি পাশ করল। একদিন সে তার বাবার মতো বড় হয়ে গেল। মা বললেন, ‘নাবিলের বিয়ে দিয়ে ঘরে টুকটুকে একটা বৌ নিয়ে এলে কেমন হয়?’

ওমা, কী অদ্ভুত কাণ্ড! একদিন তার বিয়েও হয়ে গেল। মজার ঘটনা ঘটল বিয়ের রাতে। নাবিল অবাক হয়ে দেখে তার বৌটা দেখতে অবিকল সেই পরী মেয়েটার মতো। সেই রকম গোল মুখ। হালকা নীলচে চোখ। ঢেউ-খেলানো মাথাভর্তি চুল।

নাবিল অবাক হয়ে বলল, তোমার থুতনিতে এই কাটা-দাগটা কিসের?

মেয়েটা লজ্জা-লজ্জা গলায় বলল, “ছোটবেলায় পুকুরঘাটে নাচতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে কেটে গিয়েছিল।’

নাবিল ইতস্তত করে বলল, ‘আচ্ছা শোন, তোমার ডাক নাম কী মেঘবতী?’

সে হেসে বলল, ‘হ্যাঁ। আমার বাবা আমাকে এই নামে ডাকতেন। আমি যখন খুব ছোট তখন বাবা মারা গেলেন। তারপর আর কেউ আমাকে এই নামে ডাকে নি। আজ প্রথম তুমি ডাকলে। আচ্ছা তুমি এই নাম জানলে কী করে?’

নাবিল যে কী করে জানল সেটা আর বলল না। সব কথা বলার দরকারই বা কী? থাকুক কিছু না-বলা কথা।

COMMENTS

My Blog List

Name

featured,64,Sad Story,1,slider,65,অন্যান্য,8,ইতিহাস,4,উপন্যাস,12,কবিতা,8,কলাম,4,গল্প,38,ছোট গল্প,15,জীবনী,7,পারিবারিক,6,প্রবন্ধ,9,প্রেম,14,বাস্তবতা,5,বিদ্রোহ,7,বিরহ,8,ভালবাসা,12,ভৌতিক,2,ভ্রমণ কাহিনী,5,ভ্রমন,1,রহস্য,8,রূপকথা,1,রোমান্টিক,5,শিশু সাহিত্য,3,সংকলন,4,সংগ্রহ,2,সংলাপ,2,সামাজিক,7,সাহিত্য,13,স্মৃতিকথা,1,হাস্যরস,1,হুমায়ূন আহমেদ,11,
ltr
item
Golpo Blog: হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য গল্প, "পরীর মেয়ে মেঘবতী" @Golpo Blog
হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য গল্প, "পরীর মেয়ে মেঘবতী" @Golpo Blog
হুমায়ুন আহমেদ এর শিশু সাহিত্য, "পরীর মেয়ে মেঘবতী", @Golpo Blog, humayun ahmed er sishu golpo porir meye meghboti, humayn ahmed er sishu sahitto,
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhu1sfV-GYV3RByeD1CulWvK4y7c8FQzbN_KSjYHCkqN_ishNUrRB8ZJi3z_xuxbmKIAPuZ6IZXmHnSdOx9x9sMMaJU9ZZHPqXKpg1cxJjq0_-DP4wMRdFEBmeQ6cumVb6g3ZAbr37I80rnvQ5-WpRfpk17Ezqwl-V3eB0Z-MM1gKz2268HXwOIKWudHA/s16000/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8%20%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6%20%E0%A6%8F%E0%A6%B0%20%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%20%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF,%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%20%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%98%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A7%80%20@Golpo%20Blog.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhu1sfV-GYV3RByeD1CulWvK4y7c8FQzbN_KSjYHCkqN_ishNUrRB8ZJi3z_xuxbmKIAPuZ6IZXmHnSdOx9x9sMMaJU9ZZHPqXKpg1cxJjq0_-DP4wMRdFEBmeQ6cumVb6g3ZAbr37I80rnvQ5-WpRfpk17Ezqwl-V3eB0Z-MM1gKz2268HXwOIKWudHA/s72-c/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%81%E0%A6%A8%20%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6%20%E0%A6%8F%E0%A6%B0%20%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%20%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF,%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%20%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%98%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A7%80%20@Golpo%20Blog.jpg
Golpo Blog
https://golpoblog.mrmodhu.com/2023/01/porirmryrmeghboti.html
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/
https://golpoblog.mrmodhu.com/2023/01/porirmryrmeghboti.html
true
3394482685536881275
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy